ঢাকা: সিডর-আইলার ক্ষতচিহ্ন মুছতে সাতক্ষীরা পৌরসভার ভৌত-অবকাঠামো উন্নয়ন উন্নয়ন প্রকল্পে জার্মান উন্নয়ন ব্যাংকের (কেএফডব্লিউ) সহায়তার অর্থছাড় হয়নি গত দু’বছরেও। ফলে উন্নত নাগরিক সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে অবহেলিত এ পৌরবাসীর।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) অবহেলায় সংস্থাটি অর্থছাড় করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এলজিইডি বলছে, গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড (জেএফআইডি) থেকে অর্থ নিয়ে জার্মান সংস্থাটি অর্থায়ন করবে। সেটি এখনও না হওয়ায় দেরি হচ্ছে। তাই এটি এলজিইডি’র সমস্যা নয়।
পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে দেখা গেছে, ‘ক্লাইমেট রেজিলেন্স ইনফ্রাস্টাকচার মেইনস্ট্রিমিং’ (সিআরআইএম) প্রকল্পের আওতায় জেএফআইডি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশকে ৮০ মিলিয়ন ইউরো অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দেয়। সাতক্ষীরা পৌরসভার উন্নয়নে এ প্রকল্পে ২০ মিলিয়ন ইউরো চাওয়া হয়। তবে ১৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন ইউরো বা ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১১৯ কোটি টাকা, ১ ডলার=৭৯ টাকা) দিতে সম্মতি জানায় সংস্থাটি।
২০১৪ সালের ০৮ ডিসেম্বর এ সহায়তা দিতে মিনিটস্ অব মিটিং (এমওএম) স্বাক্ষরিত হয়। সাতক্ষীরা পৌরসভার পক্ষে এলজিইডি’র সাবেক প্রধান প্রকৌশলী শ্যামা প্রসাদ অধিকারী এবং কেএফডব্লিউ’র পক্ষে হেড অব মিশন জোহান্নেস স্কহোল এতে স্বাক্ষর করেন।
কিন্তু পরে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডিতে কিছু অর্থ ব্যয় ছাড়া প্রকল্পের আর কোনো অগ্রগতি নেই। এমনকি ডিপিপি এখনও চূড়ান্ত করে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগে পাঠানো সম্ভব হয়নি।
ডিপিপি তৈরি করে একনেকে প্রকল্পটির অনুমোদন না নেওয়া হলে চূড়ান্ত ঋণচুক্তিও হবে না।
সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি বাংলানিউজকে বলেন, ‘সাতক্ষীরা পৌরসভার উন্নয়নে কেএফডব্লিউ’র সঙ্গে এমওএম স্বাক্ষরিত হয়েছে। কিন্তু পৌরসভার অবকাঠামো উন্নয়নে এখনও মূল ডিপিপি তৈরি করা হয়নি। শুধুমাত্র ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি হয়েছে। সবচেয়ে শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, সহায়তার ওই অর্থ চার বছরের মধ্যে ব্যয় করতে হবে। না হলে ফেরত যাবে। এতে কপাল পুড়বে পৌরবাসীর’।
আর কয়েক মাস পরে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি সাতক্ষীরা পৌরসভায় এ অর্থায়ন আর করবে না বলেও আশঙ্কা মেয়রের।
প্রলয়ঙ্করী সিডর-আইলায় সাতক্ষীরা পৌরসভার সাড়ে ৩১ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে ২৫/২৬ কিলোমিটার রাস্তার নব্বই শতাংশ কালো পিচের কার্পেটই উঠে যায়। জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে পরিবহন ব্যবস্থাপনাও বেহাল হয়ে পড়েছে।
এলজিইডি সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা পৌরসভায় আবাসিক, শিল্প ও বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে এ প্রকল্পের আওতায়। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে রাস্তা ও ফুটপাথ পুনর্নির্মাণ করা হবে। জনসাধারণের চলাচল, যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের সুবিধার্থে বাসস্ট্যান্ড ও টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। যাত্রী ছাউনি, সড়ক বাতি ও যানবাহনের পার্কিং স্থানও তৈরি হবে।
নাগরিক স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষণাবেক্ষণ, বৃক্ষরোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং সাতক্ষীরা পৌর এলাকায় বাজার ও কসাইখানা স্থাপন এবং ব্যবস্থাপনা উন্নত করা হবে।
শিক্ষা, খেলাধুলা, চিত্ত বিনোদন, আমোদ-প্রমোদ ও সাংস্কৃতিক সুযোগ সৃষ্টি ও প্রসারে সহায়তা ছাড়াও পৌর এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হবে।
এসব কাজ বাস্তবায়নে প্রকল্পের মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে কেএফডব্লিউ’র প্রকল্প সাহায্য ১৫ মিলিয়ন ডলার আর বাকি অর্থায়ন করবে সরকার।
বিষয়টির দেখভাল করছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) ইউরোপ অনুবিভাগ। বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত সচিব মুহাম্মদ আলকামা সিদ্দিকী বাংলানিউজকে বলেন, ‘কেএফডব্লিউ’র সঙ্গে এমওএম হওয়ার পরও কেন ডিপিপি গ্রহণ করা হয়নি- তা খতিয়ে দেখবো। এ বিষয়ে এলজিইডিতে খোঁজ-খবর নেবো। তবে আমাদের কাছে কোনো কিছু এলে সঙ্গে সঙ্গে ফাইল ওকে করে দেই’।
তবে এলজিইডি সূত্র জানায়, কেএফডব্লিউ এবং গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের মধ্যে গত এক বছর ধরেই নেগোসিয়েশন চলছে। গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড নেগোসিয়েশন করলেই কাজ শুরু হবে। এলজিইডি আশা করছে, খুব শিগগিরই এ বিষয়ে সমাধান হবে।
প্রকল্পের পরিচালক জসিম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘এটি এলজিইডি’র কোনো সমস্যা না। এটি মূলত গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড ও কেএফডব্লিউ’র সমস্যা। কারণ, গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে জার্মান সংস্থাটি আমাদের অর্থায়ন করবে’।
‘গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড একটি নতুন সংস্থা। যে কারণে অর্থছাড় করতে ভয় পাচ্ছে। তবে আশা করছি, তাদের মধ্যে দ্রুত নেগোসিয়েশন হবে। আমরাও খুব শিগগিরই প্রকল্পটি গ্রহণ করে সাতক্ষীরাবাসীর উন্নয়ন করতে পারবো’।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৬
এমআইএস/ এএসআর