কেরানীগঞ্জ (ঢাকা): ১৯৭১ সালের ২ এপ্রিল কাক ডাকা ভোরে কেরানীগঞ্জের ঘুমন্ত মানুষের ওপর হামলা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। ওইদিন কেরানীগঞ্জের সহস্রাধিক নিরস্ত্র মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অসংখ্য শহীদকে কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে গণকবরে দাফন করা হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার নজরগঞ্জ কবরস্থান, কসাইভিটা কবরস্থান, ঘাটারচর কবরস্থান, বাকা চড়াইল কবরস্থান, নেকরোজবাগ কবরস্থান ও ইমামবাড়ী কবরস্থান উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে শহীদদের গণকবর। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের এত বছর পার হলেও কেরানীগঞ্জের এসব গণকবর সংরক্ষণের কথা কেউ ভাবেনি। ফলে, দেশবাসী ও যুবসমাজে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা যাচ্ছে না বলে দাবি উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার ও যুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. শাহজাহান বাংলানিউজকে বলেন, যুদ্ধের সময় চড়াইল এলাকায় দেখেছি খোলা মাঠে আগরবাতি জ্বলছে। পরে খবর নিয়ে জানতে পারি পাকিস্তানি হানাদারের ভয়ে খোলা মাঠেই কয়েকজন শহীদকে গণকবর দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া উপজেলার বেশ কয়েকটি কবরস্থানে ১ এপ্রিল হানাদারদের আক্রমণে নিহত অনেক শহীদকে গণকবরে দাফন করা হয়েছে। অনেক সময় সরকারের বিভিন্ন মহলের লোকজন এলে আমরা গণকবরের স্থান দেখিয়ে দেই। কিন্তু এখন পর্যন্ত এসব গণকবর সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বেশিরভাগ কবরস্থানেই গণকবরের ওপর অন্য কবর হয়ে গেছে। কেরানীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি প্রবীণ সাংবাদিক মুক্তিযোদ্ধা সালাহউদ্দিন মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের এত বছর অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পরও কেরানীগঞ্জের শহীদদের গণকবর সংরক্ষণের কথা কেউ ভাবেনি। এতে দেশবাসী ও যুবসমাজে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে আমরা ব্যর্থ হচ্ছি।
এদিকে, অযত্নে অবহেলায় অরক্ষিত হয়ে পড়েছে উপজেলার প্রাণকেন্দ্র কদমতলী গোল চত্বরে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্য। কেরানীগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুর ইসলামের নামে নির্মিত ওই ভাস্কর্য উদ্বোধন করা হয় ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু ৬ বছর না যেতেই ভাস্কর্যটি অরক্ষিত হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাস্কর্যের চারপাশে নির্মিত সুরক্ষা বেষ্টনির বেশিরভাগ অংশই চুরি হয়ে গেছে। খসে পড়েছে ভাস্কর্যের চারপাশের টাইলস। পোস্টারে ছেয়ে গেছে ভাস্কর্যের চারপাশ। এমনকি ভাস্কর্যের যে অংশে শহীদদের নাম লেখা আছে সেখানেও লাগানো আছে পোস্টার। ফলে শহীদদের নাম পড়া যায় না। অপরিস্কার-অপরিচ্ছন্ন এবং কোনো যত্ন না থাকায় ভাস্কর্যের পাদদেশ ভবঘুরে ও মাদকসেবীদের আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছে। এমনকি সন্ধ্যা নামলেই ভাস্কর্যের নিচে মাদকসেবীদের আড্ডা বসে। এসব দেখার যেন কেউ নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৬
আরবি/পিসি
** মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্যের নিচেই মাদকের আড্ডা