রাজশাহী: সবুজ গাছের পাতায় শিশির বিন্দু রেখে যাই যাই বলছে অগ্রহায়ণ। সোনালি ধানের মড় মড় ধ্বনির আবাহনে চারিদিকে যখন নবান্নের পিঠাপুলি আর পায়েসের মৌ মৌ গন্ধ; ঠিক তখনই পদ্মাপাড়ের তপ্ত বালুরাশিতে ভর করেছে শীত।
উত্তরের জনপদে এরইমধ্যে ঢুকে পড়েছে হিমালয়ের শীতল বাতাস। পথের ছিন্নমূল হাড্ডিসার মানুষগুলোকে কাঁপিয়ে তুলছে। সন্ধ্যার পর থেকে সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে রাজশাহী। সকাল দশটার আগে মহানগরীর কোথাও সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই কমছে দিনের তাপমাত্রা। এতে ছন্দপতন ঘটছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়।
আবহাওয়া অফিস বলছে, চলতি ডিসেম্বরের শেষার্ধ্বে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এক থেকে দু’টি মৃদু বা মাঝারি শৈত্য প্রবাহ বয়ে যেতে পারে। ফলে মাসের শেষভাগে শীতের দাপট আরও বাড়ছে তা বলাই যায়।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের টেলিপ্রিন্টার অপারেটর আবদুস সালাম বাংলানিউজকে জানান, এক সপ্তাহ থেকে তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। এর মধ্যে গত ৬ ডিসেম্বর থেকে তাপমাত্রা কমার হার বেশি।
এক পরিসংখ্যানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত ৬ ডিসেম্বর রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৭ ডিসেম্বর তা একটু বেড়ে ১৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়ায়। তবে ৮ ডিসেম্বর আবার কমে আসে ১৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। শুক্রবার (০৯ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা মৌসুমের সর্বনিম্ন। সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৮ শতাংশ। এছাড়া বর্তমানে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৪-২৫ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করছে বলে জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকা আবহাওয়া অধিদফতরের বরাত দিয়ে আবদুস সালাম বলেন, ডিসেম্বরের শেষের দিকে এক বা একাধিক শৈত্য প্রবাহের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ডিসেম্বরের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি মাসে স্বাভাবিক শীত থাকবে। তবে ডিসেম্বরের শেষার্ধ্বে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এক থেকে দু’টি মৃদু বা মাঝারি শৈত্য প্রবাহ বয়ে যেতে পারে। আর রাজশাহীর উপর দিয়ে শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাওয়ার সময় এই অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ থেকে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যেতে পরে।
এদিকে, উত্তরের কনকনে ঠাণ্ডা বাতাসের কারণে এরই মধ্যে রাজশাহীতে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। শীত বাড়তে থাকায় মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে ফুটপাতের ওপর গরম কাপড়ের ভাসমান দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা। শীতবস্ত্র কিনতে মহানগরীর ফুটপাতে প্রতিদিনই বাড়ছে নিম্ন আয়ের মানুষদের ভিড়।
মহানগরীর সাহেব বাজার এলাকার ফুটপাত ব্যবসায়ী আফতাব হোসেন বলেন, হঠাৎ শীত বাড়ায় রোজই ক্রেতা বাড়ছে। কম দামে শীতবস্ত্রের জন্য এখনও নিম্ন এবং মধ্যবিত্তদের কাছে ফুটপাতই ভরসা।
তবে শীতবস্ত্র কিনতে যাওয়া সিরোইল এলাকার গৃহিণী ফারহানা ইসলাম বলেন, ফুটপাতের দোকানেও দাম কম নয়। শীত পড়তেই দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে বিদেশ থেকে আমদানি করা এক্সপোর্ট কোয়ালিটির শীতবস্ত্রগুলোর দাম বেশি হাঁকছেন। আমদানি খরচ বাড়ার অজুহাতে তারা দাম বেশি নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন এ গৃহিণী।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৬
এসএস/জেডএস