ঢাকা: মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গৃহকর্মী হিসেবে যাওয়া অভিবাসীদের সুরক্ষার উন্নয়ন নিশ্চিতের ক্ষেত্রে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
এ বিষয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মধ্যপ্রাচ্যের নারী অধিকার বিষয়ক গবেষক রত্না বেগম বলেন, নিজেদের নাগরিকদের সুরক্ষার নিশ্চিত করার ব্যাপারে খারাপ নজির থাকলেও অভিবাসনের ওপর একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনের আয়োজন করছে বাংলাদেশ।
ঢাকায় শুরু হওয়া বিশ্বব্যাপী অভিবাসন এবং উন্নয়ন ফোরামের (জিএফএমডি) আয়োজনকে সামনে রেখে শুক্রবার (০৯ ডিসেম্বর) দেওয়া এক বিবৃতিতে এসব অভিবাসীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহবান জানানো হয়। জিএফএমডি সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের সরকারগুলোর মধ্যে অভিবাসন নীতি বিষয়ে সর্বোত্তম কার্যকলাপ এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হবে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে সক্রিয়ভাবে গৃহকর্মী পাঠানো, সেইসঙ্গে তাদের অধিকার সংরক্ষণে ব্যর্থতা ও নিম্নমজুরি নির্ধারণের কারণে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। এক্ষেত্রে অন্যান্য গৃহকর্মীদের দেশ ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা এবং নেপাল তাদের গৃহকর্মীদের ওপর বঞ্চনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। তাদের সুরক্ষা ও বেতনের পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, মধ্যপ্রাচ্যে নারী গৃহকর্মী নিয়োগের হার বাড়িয়েছে বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে জর্ডান এবং আরবের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিও করেছে।
হিউম্যান রাইট ওয়াচ বলছে, মধ্যপ্রাচ্যের আইন এবং নীতিমালা গৃহকর্মীদের ওপর অবিচার ও বঞ্চনার ব্যাপারগুলোকে বাংলাদেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে না। নিয়ন্ত্রণমূলক কাফালা ব্যবস্থা, পুরো ভূখণ্ডজুড়েই বিভিন্ন মাত্রায় চালু আছে যা, অভিবাসী গৃহকর্মীর ভিসাকে তার নিয়োগদাতার সঙ্গে যুক্ত করে ফেলে। তাদের বর্তমান নিয়োগদাতা অত্যাচারী হওয়া স্বত্বেও তাদের অনুমতি ছাড়া, নতুন কোনো নিয়োগদাতার অধীনে কাজ নিতে পারে না। ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের পূর্বাঞ্চলীয় অনেকগুলো দেশ, গৃহকর্মীদের শ্রম আইনের সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত করে। যেখানে কিছু নীতিমালা রয়েছে, সেখানেও খুব সীমিত সুরক্ষা দেওয়া হয়।
এতে বলা হয়, অনেক নিয়োগদাতা গৃহকর্মীদের অধিকারকে সম্মান করে। তবে অন্যান্য গৃহকর্মীরা ভয়াবহ অবিচার ও বঞ্চনার মুখোমুখি হওয়ার মধ্যে রয়েছে। শারীরিক লাঞ্ছনা, বেতন না দেওয়া এবং পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়, যাতে তারা কাজ ছেড়ে যেতে না পারেন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ২০১৬ সালের জুলাই মাসে ওমানে অভিবাসী গৃহকর্মীদের ওপর বঞ্চনার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ৫৯ জন কর্মীর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে, যাদের মধ্যে কয়েক ডজন ছিলো বাংলাদেশি। প্রায় সব বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মীই জানায়, নিয়োগদাতারা তাদের পাসপোর্ট কেড়ে নিয়েছেন। অনেকের নিয়োগদাতা পুরো বেতন দেয়নি। কোনও ছুটি বা বিশ্রাম ছাড়া, জোর করে লম্বা সময় ধরে কাজ করিয়েছে কিংবা যথাযথ খাবার ও থাকার জায়গা দিতে চায়নি। কেউ কেউ বলেছেন তাদের নিয়োগদাতা তাদেরকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে; তাদের কয়েকজন যৌন নির্যাতনের বর্ণনা করেছেন।
মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় সব দেশের দূতাবাসগুলো নিজ নিজ কর্মীদের অত্যাচারী নিয়োগদাতার কাছ থেকে পালিয়ে আসলে আশ্রয় দিলেও বাংলাদেশি দূতাবাসগুলো শুধু কিছু দেশে আশ্রয়ের সুবিধা দেয় বলে জানায় এইচআরডব্লিউ। আশ্রয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা না থাকায় অত্যাচারী নিয়োগদাতার বাড়ি থেকে পালিয়ে আসার পর বাংলাদেশের নারীদের যাওয়ার জায়গা খুবই কম বলে জানানো হয়। এ কারণে দূতাবাসগুলো আশ্রয়সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা এবং এধরনের কর্মীদের সাহায্য করার সক্ষম বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়।
রত্না বেগম বলেন, কম বেতন নির্ধারণ করে এবং দুর্বল সুরক্ষার ব্যবস্থা রেখে বাংলাদেশ তার কর্মীদের সম্ভাব্য নির্যাতনের ঝুঁকিতে ফেলছে। বাংলাদেশের উচিৎ সব কর্মীদের কল্যাণে অন্য দেশগুলির সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সর্বনিম্ন বেতন নির্ধারণ ও বৃদ্ধি করা এবং অন্যান্য সুবিধা প্রদান করা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৬
জেপি/জেডএস