ধুনট (বগুড়া): ১৪ ডিসেম্বর (বুধবার) বগুড়ার ধুনট উপজেলা হানাদার মুক্ত দিবস। মুক্তিযুদ্ধের দামাল ছেলেরা মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় ১৯৭১ সালের এই দিনে ধুনট উপজেলাকে হানাদারমুক্ত করেন।
একাত্তরের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা গোলাম ওহাব জানান, ডিসেম্বর মাসের প্রথম থেকেই ধুনট হানাদারমুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার খোরশেদ আলমের নেতৃত্বে চিকাশি ইউনিয়ন থেকে কালেরপাড়া গ্রামে প্রবেশপথে ইছামতি নদীর তীরে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধ হয়।
সেদিন ছিল ১৯৭১ সালের ১২ডিসেম্বর। পাকসেনাদের আক্রমণের মুখে সন্ধ্যায় পিঁছু হটতে বাধ্য হন মুক্তিযোদ্ধারা। সেই যুদ্ধে পাকসেনাদের বুলেটের আঘাতে তাঁর (গোলাম ওহাব) হাতের একটি আঙুল উড়ে যায়। এই খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধাদের কানে পৌঁছে দেওয়া হয় এই বার্তা।
তিনি আরো জানান, মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার হামিদুর রহমান, খোরশেদ আলম, জ্যোতি ও শাহাজাহান আলীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের ৪টি দল ১৩ ডিসেম্বর রাতে চারদিক থেকে একযোগে ধুনট শহর আক্রমণ করেন। এলাকায় রাতভর চরম উত্তেজনা বিরাজ করতে থাকে।
চারদিকে থেমে থেমে গুলির আওয়াজ। পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর উপর্যুপুরি আক্রমণ। আক্রমণের মুখে ওই রাতেই ধুনট শহর ছেড়ে চলে যায় পাকিস্তানি সেনারা। যাওয়ার আগে তারা বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করে।
একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর ভোর ৪টার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা বীরের বেশে ধুনট শহরে প্রবেশ করেন। মুক্তিযোদ্ধারা ওই সময় ধুনট সদরের খোকা মিয়া ও খোকসাহাটা গ্রামের ইব্রাহীব হোসেন নামে চিহ্নিত দুই রাজাকারকে হত্যার পর বিজয় উল্লাস করেন। এরপর ১৪ ডিসেম্বর সকাল ৭টার দিকে ধুনট থানা প্রাঙ্গণে একত্রিত হন মুক্তিযোদ্ধারা।
যুদ্ধকালীন কমান্ডার হামিদুর রহমান জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি হানাদারদের অনেকেই মারা যায়। বাকিরা পালিয়ে জীবন রক্ষা করে। রাজাকার আলবদররা আত্মসমর্পণ করতে থাকে। শক্রমুক্ত ঘোষণার পর জনতা রাস্তায় নেমে আসেন। আনন্দ মিছিল করতে থাকেন। সেদিন হাজারো জনতা কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে আওয়াজ তোলে জয় বাংলা।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৬
পিসি/