ঢাকা: রাজধানীর উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর সড়কের ৪১ নম্বর প্লটটি ১৫ বছর আগে বরাদ্দ পান যুক্তরাজ্যপ্রবাসী চিকিৎসক রেজাউল ইসলাম। কিন্তু দীর্ঘ ১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও নিজের প্লটটি বুঝে পাননি তিনি।
কীভাবে এমনটি ঘটলো? এর সবিস্তার বর্ণনা উঠে এসেছে বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশে (আইডিইবি) রাজউকের সেবা সম্পর্কিত বিষয়ের ওপর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক ফলোআপ গণশুনানিতে।
পুরো ঘটনা তুলে ধরে রেজাউল বলেন, প্লটটি বরাদ্দ পাওয়ার পর তিনি যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। এরপর যখন তিনি দেশে ফিরলেন, তখন দেখলেন তার প্লটে অন্য একজন বাড়ি তৈরি করেছেন।
প্লটটি ফিরে পেতে তিনি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। কিভাবে নিজের প্লটটি ফিরে পাওয়া যায় তার জন্য নানাদিকে ছোটাছুটি শুরু করেন। কিন্তু ফল ‘শূন্য’ই থেকে যায়।
এরমধ্যে গত ২৭ জানুয়ারি রাজউকের সেবা সম্পর্কিত বিষয়ের ওপর একটি গণশুনানির আয়োজন করে দুদক। সেখানে বিষয়টি তুলে ধরেন রেজাউল ইসলাম। তখন রাজউকের পক্ষ থেকে বলা হয়, নতুন একটি প্লট বানিয়ে তাকে দেওয়া হবে। কিন্তু কবে প্লটটি তিনি পাবেন, আদৌ পাবেন কিনা তা নিয়ে তার মধ্যে থেকে যায় সংশয়।
বুধবারের ফলোআপ শুনানিতে ভিডিও কনফারেন্সের ব্যবস্থা ছিল। এর মাধ্যমেই যুক্তরাজ্য থেকে অংশ নেন রেজাউল। তিনি বলেন, ওই শুনানির (জানুয়ারি) পর দীর্ঘ ১০ মাস পেরিয়ে গেছে। আমি এখনও আমার প্লট বুঝে পাইনি। ভবিষ্যতে পাবো কিনা তারও কোনো লক্ষণ দেখছি না।
রেজাউলের বক্তব্যের পর নাসির খান নামে আরেক ব্যক্তি সরাসরি ঘুষের অভিযোগ তোলেন। তিনি দাবি করেন, উত্তরায় তার একটি প্লট বুঝে পেতে রাজউকের সাবেক এক চেয়ারম্যান দুই কোটি টাকা ঘুষ দাবি করেছিলেন। কিন্তু তিনি ঘুষ দেননি।
এ দু’টি অভিযোগের প্রত্যুত্তরে দুদকের কমিশনার (তদন্ত) এ এফ এম আমিনুল ইসলাম বলেন, “একজন ১৫টি বছর ধরে তার বরাদ্দকৃত প্লট বুঝে পাননি। আর পাবেন কিনা সেটারও কোনো লক্ষণ তিনি দেখছেন না। অন্যদিকে এখন একজন বলছেন, তার প্লট বরাদ্দ পেতে রাজউকের এক চেয়ারম্যান তার কাছে দুই কোটি টাকা ঘুষ দাবি করেছেন। এতে কি আপনাদের সম্মান অনেক বাড়লো? নাকি একটুও আপনাদের মাথা হেট হয় না। ”
২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে অভিযোগগুলোর অবস্থা জানতেই বুধবার এই ফলোআপ শুনানির আয়োজন করা হয়।
এ শুনানিতে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ছিলো, কোনো সমস্যায় পড়ে রাজউকের কাছে গেলেও কোনো সমাধান হচ্ছে না, দিনের পর দিন ঘুরে। এছাড়া নিজের প্লট অন্যের নামে বরাদ্দ দেওয়া, লটারিতে বিজয়ী হয়েও প্লট না পাওয়া, নামজারি সমস্যা, প্ল্যান পাস করার ক্ষেত্রে হয়রানির অভিযোগও করেন তারা।
শুনানিতে দুদকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ডা. নাসির উদ্দিন আহমেদ, রাজউক চেয়ারম্যান বজলুল করিম চৌধুরী, দুদক কমিশনার এএফএম আমিনুল ইসলাম অংশ নেন। শুনানি সঞ্চালনা করেন দুদকের মহাপরিচালক ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়া ও ঢাকা বিভাগীয় পরিচালক নাসিম আনোয়ার।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৬
এসজে/এইচএ/