বৈরি আবহাওয়ার কারণে কৃষকরা এ রোগ প্রতিরোধ করতে পারছেন না। ফলে আলুর উৎপাদন কমে যাওয়া ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর ২ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১৫০ হেক্টর বেশি জমিতে আলু চাষ হয়েছে। অর্থাৎ উপজেলায় মোট ২ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। এসব আলুর মধ্যে রয়েছে স্থানীয় জাতের শীল বিলেতি, সাদা গুটি, লাল পাকড়ি,ঝাউ-বিলেতি, ইন্দুরকানি প্রভৃতি।
এছাড়া উচ্চ ফলনশীল (উফশি) জাতের আলুর মধ্যে রয়েছে কার্ডিনাল, ডায়মন্ড, গ্র্যানুলা, ফেনসিলা, স্ট্যারিকস, কারেজ, রাজা, কুপরি, সুন্দরি।
কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, স্থানীয় জাতের আলু ১০০-১২০ দিনের মধ্যে ঘরে ওঠে। আর উফশি আলু ৭৫-৮৫ দিনের মধ্যে চাষিরা ঘরে তুলতে পারেন। সাধারণত অক্টোবর মাসের শেষ থেকে মধ্য নভেম্বর পর্যন্ত স্থানীয় জাতের আলু জমিতে রোপণ করে থাকেন চাষিরা। আর উফশি জাতের আলু রোপণের উৎকৃষ্ট সময় নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত। যে সব কৃষক নির্ধারিত সময়ে আলু রোপণ করেছেন তারা বিপাকে পড়েছেন। কেননা এরই মধ্যে আলু খেতে দেখা দিয়েছে লেইট ব্লাইট রোগ। চেষ্টা করেও এ রোগ নিয়ন্ত্রণে আসছে না।
সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনকালে কথা হয় পৌর শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মণ্ডলপাড়া মহল্লার কৃষক সুলতান আলি (৬০), আব্দুল মালেক ও শামসুল হকের সঙ্গে।
তারা বলেন, আমরা প্রত্যেকেই ১ একর করে জমিতে আলু চাষ করেছি, আলুতে হঠাৎ লেইট ব্লাইট রোগের আক্রমণ হওয়ায় আমরা নিরুপায় হয়ে মাঠ কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে জমিতে ওষুধ স্প্রে করেছি। কিন্তু তাতেও কিছু হচ্ছে না বরং দিনের পর দিন আলু খেত নষ্ট হচ্ছে। অনেক টাকা খরচ করে আমরা আলু লাগিয়েছিলাম আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। এখন আমাদের সংসার কীভাবে চলবে এ নিয়ে চিন্তায় আছি।
বদরগঞ্জ উপজেলার কালুপাড়া ইউপির মধ্যপাড়া গ্রামের কৃষক দুলাল মিয়া (৫০) ও হক সাহেব (৫৫) বলেন, আমরা কমপক্ষে ৪ একর জমিতে আলু চাষ করেছি লেইট ব্লাইটের কারণে আমাদের জমির আলু খেত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, এখন কি করবো ভেবে পাচ্ছি না।
তারা আরও বলেন, বাজারে ওষুধ কিনতে গেলে দোকানদাররা ওষুধের চড়া দাম ধরে ঠিকই কিন্তু কোন ওষুধটি ফানজিসাইড কোনটি হরমোন কোনটি ভিটামিন তা না ভেবে সবকিছুতেই ভিটামিন বলে চালিয়ে দেয়। আমরা অব্যশই কৃষি বিভাগের বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানাচ্ছি। কৃষকরা আরও জানিয়েছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে আলুর উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে এবং আলুর উৎপাদন খরচও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে।
বদরগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম জানান, প্রথমে গাছের পাতা আক্রান্ত হয়ে পাতাগুলো বিবর্ণ হয়ে যায়। পরবর্তীতে আলু গাছ মরে যায়। উৎপাদন মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়। এ কারণে কৃষকদের অবশ্যই আলু বীজ রোগাক্রান্ত কিনা তা দেখে জমিতে রোপণ করতে হবে। আলু চাষিরাও যদি বীজ সংরক্ষণ করেন তবে অবশ্যই কমপক্ষে এক মাস হালকা রোদে বীজের জন্য ব্যবহৃত আলুগুলিকে শুকিয়ে নিতে হবে। নতুবা আলু বীজ হিমাগারে সংরক্ষণ করতে হবে। তা হলে আলুর রোগ হবার সম্ভাবনা কমে যাবে।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে যেহেতু আলু খেতের অল্প জমিতে লেইট ব্লাইট রোগ দেখা দিয়েছে কৃষি বিভাগের উচিত দ্রুত কৃষকদের সহযোগিতা করা। যাতে মহামারী আকারে রোগটি না ছড়ায়।
বদরগঞ্জ উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) কনক চন্দ্র রায় জানান, কিছু জমিতে লেইট ব্লাইট রোগ দেখা দিয়েছিল তবে তা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মাহবুবর রহমান মোবাইল ফোনে বাংলানিউজকে জানান, লেইট ব্লাইট একটি ছত্রাক জনিত রোগ। আবহাওয়ার তারতম্য, কুয়াশা ও ঠাণ্ডার কারণে লেইট ব্লাইট রোগ দেখা দিচ্ছে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা ১০টি দলে বিভক্ত হয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। কিছু জমিতে লেইট ব্লাইট রোগ দেখা দিলেও বর্তমানে তা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৭
আরএ