গাছ থেকে রস সংগ্রহের এ দৃশ্য গ্রাম-বাংলার অতি প্রাচীন। কিন্তু নতুনত্ব হলো হাঁড়ির পরিবর্তে বোতলের ব্যবহার।
খুলনার বটিয়াঘাটা-দাকোপ-নলিয়ান সড়কের দুই ধারের খেজুর গাছে মাটির হাঁড়ির পরিবর্তে প্লাস্টিকের বোতল বলে দিচ্ছে মাটির হাঁড়ির দিন শেষ!
রস সংগ্রহের সময় গোপালখালী গ্রামের গাছি আলাউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, মাটির হাঁড়ির পরিবর্তে প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করলে পাখি মুখ দিতে পারে না। ময়লা পড়ে না। প্লাস্টিকের বোতল বড় গাছে উঠাতে ও নামাতে সহজ। আর ছোট গাছে কুকুর-বিড়ালের ‘জিহ্বা’ থেকে রক্ষা করা যায়।
এছাড়া একটি মাটির হাঁড়ির দাম ১০ টাকা যেখানে বোতলের দাম মাত্র ১ টাকা। তিনি জানান, প্রতিদিন বিকেলে গাছ কেটে তাতে বোতল লাগানো হয়। গাছের রসের উপর নির্ভর করে বোতলের আকার। সারা রাত টপ টপ করে ফোঁটায় ফোঁটায় রস পড়ে। সকালে সূর্য ওঠার আগেই, কিংবা বোতল রসে ভরে গেলে নামিয়ে আনতে হয়।
স্থানীয় সাবেক ইউপি মেম্বার আব্দুল কুদ্দুস ফকির বাংলানিউজকে বলেন, চিরাচরিত সনাতন পদ্ধতিতে মাটির হাঁড়িতে খেজুর গাছ থেকে রাতভর রস পড়তে থাকতো। সেই রস ভোরে সূর্য ওঠার আগে গাছিরা এক জায়গায় জড়ো করতেন। কিন্তু এখন মাটির হাঁড়ির পরিবর্তে প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করেন। যাকে স্থানীয়ভাবে ‘ডিজিটাল হাঁড়ি’ বলা হয়।
তিনি জানান, গ্রামাঞ্চলের গৃহস্থের বাড়ি বাড়ি ঘটা করে এখন চলছে শীতের আবেশে রসের পিঠা দিয়ে নাইওর-জামাই বরণের উৎসব।
খেজুর গাছের মালিক গোবিন্দ বাংলানিউজকে জানান, প্লাস্টিকের বোতলের অনেক সুবিধা আছে। আবার অসুবিধাও আছে। মাটির হাঁড়ি পুড়িয়ে রস সংগ্রহ করলে সে রস থাকতো একদম টাটকা। আর বোতলে বেশি সময় রস রাখলে গন্ধ হয়ে যায়। রং ও স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়।
তিনি আরও জানান, বোতলে রস সংগ্রহ করা হলেও হাঁড়ি হিসেবে বিক্রি করা হয়। ছোট এক হাঁড়ি রস ৫০ টাকা ও বড় এক হাঁড়ি রস ১০০ টাকায় বিক্রি করা হয়।
এদিকে খুলনা মহানগরীর একান্ত কাছের উপজেলা বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া, ফুলতলা, রূপসার গ্রামগুলোতে শহরের ভোজনরসিক অনেকে সকাল হলে খেজুর রস কিনতে যান। ভোরে গাছির হাঁড়ি থেকে সতেজ রস কিনে অনেকে তা পান করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৬
এমআরএম/জেডএস