ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বাংলানিউজের সংবাদে জমি পাচ্ছে সুমা

মাহবুবুর রহমান মুন্না, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৭
বাংলানিউজের সংবাদে জমি পাচ্ছে সুমা সুমার পরিবারকে জমি বরাদ্দ ও বাড়ি করে দেওয়ার ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান /ছবি: মানজারুল ইসলাম

খুলনার বাগমারা চর রূপসা থেকে: ‘আসমানীদের দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও। বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি, একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি।…’

পল্লীকবি জসীমউদ্‌দীনের ‘আসমানী’ কবিতার সেই আসমানীদের দেখতে আর রসুলপুর যেতে হবে না। খুলনার রূপসা উপজেলার বাগমারা চর রূপসার শাজাহান হাজির বস্তিতে সুমা খাতুনের ঘর দেখলেই ভেসে উঠবে আসমানীর বাড়ির প্রতিচ্ছবি।

হতদরিদ্র অদম্য মেধাবী ছাত্রী সুমা খাতুন দিনমজুর মা ও ছোট বোনকে নিয়ে বসবাস করে এ বস্তিতে। দিনে একবেলা খেয়ে ও একটি জামা পরে শত দারিদ্র্যের মাঝেও ২০১৬ সালে রূপসা উপজেলার বাগমারা দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে সুমা খাতুন।
সুমার হাতে কম্বল তুলে দিচ্ছেন জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান/ছবি: মানজারুল ইসলাম
বর্তমানে সুমা শামসুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। স্কুল থেকে বিনামূল্যে বই পেলেও খাতা, কলম, পোশাক, ব্যাগ কিনে দিতে পারছেন না তার দিনমজুর মা খাদিজা বেগম। যে কারণে নতুন শ্রেণিতে স্কুলে যেতে পারছে না সুমা।  

সুমা খাতুনকে নিয়ে রোববার (১৫ জানুয়ারি) ‘গোল্ডেন ‘এ প্লাস’ পেয়েও শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত সুমার!’ শিরোনামে বাংলানিউজে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

সংবাদ প্রকাশের পর খুলনার জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে বস্তিতে গিয়ে সুমার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। জীর্ণ ঘর আর কষ্টের মধ্যেও সুমা ও তার বোন রুমার লেখাপড়ার আদম্য ইচ্ছা দেখে তিনি তাদের জন্য সরকারি খাসজমি বরাদ্দ ও বাড়ি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এছাড়া সুমার পরিবারকে দু’টি কম্বল ও ২ হাজার টাকা দেন।

এ সময় তিনি রূপসার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে দু’দিনের মধ্যে সরকারি খাসজমি দেখার নির্দেশ দেন।

তার এ প্রতিশ্রুতির ঘোষণা শুনে সুমা ও তার পরিবারের মুখে খুশির হাসি ফুটেছে।

জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাংলানিউজে মানবিক সংবাদটি দেখার পর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুমার পরিবারের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়ানো হলো। এজন্য বাংলানিউজকে ধন্যবাদ’।
জেলা প্রশাসকের প্রতিশ্রুতিতে হাসি ফুটেছে সুমা ও তার পরিবারের মুখে/ছবি: মানজারুল ইসলামএ সময় উপস্থিত ছিলেন রূপসা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন বাদশা, ভাইস চেয়ারম্যান শাহিনা আক্তার লিপি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইলিয়াছুর রহমান, রূপসা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মাহাবুবুর রহমান, বর্তমান সহ সভাপতি রবিউল ইসলাম তোতা, সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম ডালিম, নৈহাটী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বুলবুল, বাগমারা দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান, শিক্ষক শাহনেওয়াজ মিলন, সাংবাদিক রোটারিয়ান মোসলেহ উদ্দীন তুহিন, নৈহাটী ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার (১,২,৩ নং ওয়ার্ড) রীনা পারভিন ও ইউপি মেম্বার ইলিয়াস শেখ।

সাংবাদিক রোটারিয়ান মোসলেহ উদ্দীন তুহিন সুমার মাকে দর্জির কাজ শিখে ব্যবসা শুরুর জন্য ৫ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।  

এর আগে সোমবার (১৬ জানুয়ারি) বাংলানিউজের সংবাদ পড়ে সুমার জন্য শিক্ষা উপকরণ বাবদ ৫ হাজার টাকা ও তার মা খাদিজা বেগমকে একটি সিঙ্গার সেলাই মেশিন দিয়ে সহযোগিতা করেছেন চট্টগ্রামের জার্মান ভাষা শিক্ষা কেন্দ্র ডি স্প্রাখের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একটি মোবাইল ফোন দেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক সাংবাদিক।

এছাড়া সিঙ্গাপুর প্রবাসী খুলনার এক ব্যক্তি সুমা ও তার বোনের আজীবনের লেখাপড়ার খরচ চালানোর প্রতিশ্রুতি দেন বাংলানিউজের কাছে।  

সুমার তিন বছর বয়সে তার বাবা তাদের ফেলে রেখে চলে যান। সেই থেকে তার আর কোনো খোঁজ নেই। ফরিদপুরের খাদিজা বেগম সেই থেকে দুই মেয়েকে নিয়ে জীবন সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। অভাব অনটনে খেয়ে না খেয়ে বুকের হাড় বের হয়ে গেলেও সুমা তার প্রচেষ্টা ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে।      

বাংলাদেশ সময়:  ১৮১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৬
এমআরএম/এএসআর

**
বাংলানিউজের সংবাদে হাসি ফুটলো সুমার মুখে
** বাংলানিউজে সংবাদ প্রকাশের পর সুমা পাচ্ছে আর্থিক সহযোগিতা
** গোল্ডেন ‘এ প্লাস’ পেয়েও শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত সুমার!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।