আদালতের নির্দেশনা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন। গত ১৫ জানুয়ারি থেকে গুলিস্তানসহ আশপাশের এলাকার হকার উচ্ছেদ শুরু হয়।
মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) পরপর তৃতীয় দিনের মতো হকার উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে ডিএসসিসি।
গুলিস্তান, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ ও বায়তুল মোকাররম এলাকায় প্রায় তিনশ’র মতো অবৈধ দোকানপাট এবং স্থাপনা উচ্ছেদের পর বদলে গেছে গুলিস্তানের চিত্র।
এদিন বেলা ৩টার দিকে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও বায়তুল মোকাররমের সামনের ফুটপাত, পশ্চিম পাশের সড়ক প্রায় জনমানবহীন।
পথচারীরা বলছেন, ফাঁকা হয়ে যাওয়া গুলিস্তানকে তাদের কাছে অপরিচিত মনে হচ্ছে।
এর আগে ৮ জানুয়ারি নগর ভবনে হকারদের বিভিন্ন সংগঠন ও পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করেন ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন। এ বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়, রোববার (১৫ জানুয়ারি) থেকে সাপ্তাহিক কর্মদিবসে গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকায় দিনের বেলা হকার বসা সম্পূর্ণ নিষেধ। তবে তারা ইচ্ছা করলে সন্ধ্যা পর থেকে তাদের নিজ নিজ জায়গায় বসতে পারবে। কিন্তু হকার সংগঠনগুলো সেই দিকে কর্ণপাত না করে বিগত দিনগুলোর মতো আবার ফুটপাত দখল করে দোকান নিয়ে বসে যায়।
তার প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার তৃতীয় দিনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) উচ্ছেদ অভিযান চালায়। ডিএসসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খান মোহাম্মদ নাজমুস শোয়েব বাংলানিউজকে জানান, আমরা এই হকার উচ্ছেদ বিষয়টাকে খুব ভাল ভাবে গুরুত্ব দিচ্ছি, পথচারীদের দুর্ভোগে থেকে রক্ষা করতে এই অভিযান চলতে থাকবে।
এদিকে পথচারীরাও ফেলছেন স্বস্তির নিঃশ্বাস, ব্যাংকার আব্দুল জলিল (৫২) বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমে বুঝতে পারছিলাম না ঠিক জায়গায় এসেছি, না ভুল জায়গায় এসেছি, বায়তুল মোকাররমের সামনে এই প্রথম এত ফাঁকা ফাঁকা মনে হচ্ছে, সাথে যানজটও কমে গেছে।
আবার অনেকেই বলছেন প্রতিদিনই রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় উচ্ছেদ হচ্ছে। আবার সপ্তাহ ঘুরে মাস না আসতেই জায়গাগুলো চিরচেনা অবস্থায় ফিরে আসে। উচ্ছেদ হয়েছে ভাল, আমরা পথচারী এই সুবিধা ভোগ করছি। তবে এই পরিস্থিতি কত দিন থাকবে তার নিশ্চয়তা নেই।
অন্যদিকে উচ্ছেদ হওয়া হকারদের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল দল ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকনের সাথে দেখা করেন, পুনর্বাসন ছাড়া হকার উচ্ছেদ বন্ধসহ ১০ দফা দাবি তুলে ধরেন তারা।
হকার উচ্ছেদ প্রসঙ্গে মেয়র সাঈদ খোকন বাংলানিউজকে বলেন, সাধারণ মানুষের পথচলায় কোন রকম বিঘ্ন সৃষ্টি করা যাবে না। আমি সিদ্ধান্ত থেকে একচুলও নড়বো না। যতক্ষণ রাস্তায় হকার ততক্ষণ অভিযান চলবে।
তিনি বলেন, হকার উচ্ছেদের ফলে গুলিস্তানের রাতের চিত্র বদলে গেছে। রাতের বেলায় এলইডি লাইটের আলোতে জমজমাট বাজার বসে। আমার চেষ্টা থাকবে পরিস্থিতি যেন আগের অবস্থায় আর কোনোভাবেই ফেরত না যায়। এসব এলাকার আর হকার বসতে দেওয়া হবে না।
এই বিষয়ে কাপড় বিক্রেতা হকার আব্দুর রউফ বলেন, এভাবে আমাদের পেটে লাথি মারলে আমরা চলবো কি করে। আগে যদি আমাদের কোন একটা ব্যবস্থা করে দিতো তা হলে আমরা সব কিছু মেনে নিতাম। এখন না পাবো আর্থিক সহযোগিতা। না পাচ্ছি পুনর্বাসন ।
সুবিধা পাওয়া পথচারীদের অনেকেই আবার হাঁটা চলার সুবিধার পাশাপাশি হকারদের পুনর্বাসনের কথাও বলছেন।
বেসরকারি চাকুরিজীবী মো. রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, যদি এই হকারদের সঠিকভাবে কোন জায়গায় স্থানান্তর করা না হয়, এই শতশত মানুষ যদি বেকার হয়ে যায়, তাহলে চলাফেরা করতে সুবিধার চেয়ে অসুবিধা বেশি হবে। কেন না এরাই তখন পেটের দায়ে চুরি ডাকাতি আর ছিনতাই করবে। তাই এই হকারদের উচ্ছেদের পাশাপাশি পুনর্বাসন করার বিষয়টাতেও সমান ভাবে জোর দেওয়া উচিৎ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৭
এসটি/আরআই