মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার জাহান এই মাটি অপসারণ কাজের উদ্বোধন করেন।
এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন, মাধনগর ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন দেওয়ান, ইউপি সদস্য ডলার, সঞ্জয়সহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
নলডাঙ্গা ইউএনও শারমিন আক্তার জাহান বাংলানিউজকে জানান, কৃষকের বোরো চারা রোপণের কথা বিবেচনা করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে জিয়া খালের ভরাট করা মাটি অপসারণ করা হচ্ছে। এর আগেও গত দুই বছর ধরে সংস্কার করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদ থেকে টিআর বরাদ্দ থেকে এই কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মাটি অপসারণে ভেকু মেশিন ও ৫০ জন শ্রমিক নিয়োগ করা হয়েছে। কাজ সম্পন্ন করতে কয়েকদিন লাগতে পারে বলে জানান তিনি।
হালতিবিলের এই জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান করতে হলে জিয়া খাল পুনঃ খনন বা সংস্কারসহ বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণ করা দরকার। বিষয়টি জেলা প্রশাসনসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
এদিকে ভুক্তভোগী কৃষক বাঁশিলা গ্রামের সিদ্দিক মোল্লা, তেঘড়িয়া গ্রামের সামসুল ইসলাম জানান, পানি নিষ্কাশনে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এবারও বিশাল এলাকা জুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছিল। ফলে সোনাপাতিল, হালতিবিল ও বাঁশিলা এলাকার কয়েকশ’ কৃষক বোরো চাষ নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েন। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানানোর পর পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করায় তারা খুশি।
তারা আরো জানান, সময়মত এই উদ্যোগ নেওয়া না হলে অন্তত এক হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ আরো এক মাস পিছিয়ে যেত। এতে কৃষকদের ভোগান্তিসহ বোরো ধান উৎপাদনে বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা ছিল। তাই পানি নিষ্কাশনে স্থায়ী সমাধান চান তারা।
এলাকাবাসী জানান, গত দুই দশক আগে হালতিবিলে আমন ধানও চাষ হতো। এখন একটি মাত্র ফসল বোরো ধান হলেও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ছোঁয়ায় ইদানিংকালে রবি শস্য চাষাবাদ শুরু হচ্ছে।
কালের বির্বতনে ফসলের পরিবর্তন হলেও কৃষকের দুর্ভোগ দূর হয়নি। বন্যার কারণে বিলের আকার পরিবর্তন হয়েছে অনেকাংশে। পলি জমে কোথাও কোথাও বিলে উঁচু হয়ে ও ছোট-বড় খালগুলো দখল হয়ে গেছে। অনেকে খাল ভরাট করে সমতল জমিতে পরিণত করে চাষাবাদ করছে।
ফলে এসব খালে পানি প্রবাহ বন্ধ হওয়ায় বিলের নিচু জমিতে বন্যার পানি আটকে থাকে। এতে প্রতি বছরই কৃষকদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।
নাটোর পানি উন্নয়ন বোডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার বাংলানিউজকে জানান, হালতিবিলের বন্যার পানি যথাসময়ে অপসারণ এবং চাষ মৌসুমে পানি প্রবাহ বজায় রাখতে আশির দশকে পানা উল্লাহ খাল এবং জিয়া খাল খনন করা হয়। এর পর নব্বইয়ের দশকে জিয়া খাল পুনরায় খনন করা হয়।
কিন্তু এসব খালের উৎস মুখ স্থানীয় দখলদাররা ভরাট করে বসতি করে কিংবা বাঁধ দিয়ে পুকুর বানিয়ে মাছ চাষ করায় এসব খালে আর পানি প্রবাহ নেই। জিয়া খালে কিছুটা পানি প্রবাহ থাকলেও শুষ্ক মৌসুমের আগেই শুকিয়ে যায়। কার্যত এই খাল কৃষকের তেমন কোন উপকারেই আসে না।
নলডাঙ্গা উপজেলায় কর্মরত কৃষি অফিসার আমিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, হালতি বিলে দুই থেকে আড়াইশো হেক্টর জমিতে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। তবে জলাবদ্ধতার কারণে বোরো চাষ কিছুটা দেরি হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তাতে কৃষকের কোন ক্ষতি হতো না। কারণ এখনও বোরো চাষের অনেক সময় আছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৭
আরএ