সকাল ৮টার পরে সূর্যের দেখা মিললেও তেজটাও বেশ ক্ষীণই। সন্ধ্যার পরপরই আবার কুয়াশার দখলে চলে যাচ্ছে আকাশ।
নিজেদের বেপরোয়া গতিতে ছুটার চিরাচরিত স্বভাব থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না এ যানবাহনের চালকরা। মহাসড়কে দুর্ঘটনার হোতাও হয়ে উঠছে পরিবহনটি। তাদের আগ্রাসী আচরণ নিয়েও অভিযোগের কমতি নেই বিভিন্ন যানবাহনের চালকদের।
বুধবার (১৮ জানুয়ারি) ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এমন পরিস্থিতির কথাই জানা যায়।
কুয়াশা আর ঠান্ডা বাতাসে সাঁঝ সকালে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষের সংখ্যা কমে চোখে পড়ে। তীব্র শীতে কাহিল হয়ে পড়ছে মানুষ। ফলে ভোগান্তি বেশি হচ্ছে এ মহাসড়কে চলাচলরত যাত্রী ও পরিবহন চালকদের। অনাকাঙিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতেই তাদের বেশি সতর্কতা নিয়ে ছুটতে হচ্ছে।
ভোর থেকেই কুয়াশার চাদরে আকাশ মোড়ানো থাকায় যানবাহন চালকদের সমস্যার কথা তুলে ধরে শফিকুল ইসলাম নামে একটি পরিবহনের চালক বাংলানিউজকে বলেন, ‘কুয়াশায় যান চালানোটা রিস্কি। সতর্কতার সঙ্গেই ছুটতে হয় আমাদের। একটু অসতর্ক হলেই প্রাণহানির আশঙ্কা। ফলে ধীর গতিতেই যান চালাতে হচ্ছে। ’
কুয়াশার বিড়ম্বনার মধ্যে সবচেয়ে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালায় কোন পরিবহনের চালকরা- এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা-নেত্রকোনা রুটে চলাচল করা হযরত শাহজালাল পরিবহনের চালক মাসুদ মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘এনার চালকরা অন্য যানবাহনকে সহজে সাইড দিতে চায় না। তারা সড়ককে আকাশ ভেবেই গাড়ি চালায়। সবকিছু তছনছ করেই তারা ছুটতে চায়। এতে যাত্রীদের পাশাপাশি চালকদের মধ্যেও আতঙ্ক থাকে সবসময়। ’
আর এনার মালিকের সুপ্রিম পাওয়ার। দুর্ঘটনা ঘটাইলেও জরিমানা কম। তাই ওরা কিছু পরোয়া করে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চালক স্মরণ করিয়ে দেন বছর কয়েক আগে জেলার ভালুকায় এনা পরিবহনের চাপায় প্রাণ হারান ধর্মমন্ত্রী প্রিন্সিপাল মতিউর রহমানের কনিষ্ঠপুত্র চিকিৎসক মুশফিকুর রহমান শুভ।
তিনি বলেন, ‘এনা কাউকে মানে না। পাত্তাই দেয় না। তাদের কাছে নিয়ম-নীতির কোনো বালাই নেই। মালিক ক্ষমতাসীন দলের অনেক ক্ষমতাবান হওয়ায় চালকরা মহাসড়কে বেপরোয়া গাড়ি চালাচ্ছেন। ’
মহাসড়কে নিয়মিত চলাচলকারী কলেজ শিক্ষক আনোয়ার হোসেন রীতিমত রসিকতা করে ছাড়লেন। তিনি বললেন, ‘মাছের রাজা ইলিশ। আর বেপরোয়া গতির রাজা এনা পরিবহন। ’
এ পরিবহনের মালিক ও চালকের কাছে জীবন তুচ্ছ, মুনাফাটাই বড়। তাদের কারণে মহাসড়কের দুর্ঘটনা ঘটছে বেশি বলে জানান তিনি।
‘ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের ভালুকা পয়েন্টে এখনও মহাসড়কের নির্মাণ কাজ চলমান থাকায় খানিক সময় পর-পর লেন বদল করতে হয় চালকদের। ফলে এ অংশটুকুতে বিভিন্ন পরিবহনের চালকরা গতি নিয়ন্ত্রণে রাখলেও এনা পরিবহনের চালকরা অদৃশ্য প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠেন। তাদের ভাবখানা এমন যেন যে তারা আকাশপথে বিমান চালাচ্ছেন’-এমন অভিযোগ করেন একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী।
বেশি ট্রিপ মেরে বাড়তি আশায় মালিকরাই চালকদের অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নামিয়ে দিচ্ছেন অভিযোগ করেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনা পরিবহনের একচালক।
তিনি বলেন, মালিকদের নির্দেশনার কারণেই চালকদের মাথায় বাড়তি চাপ থাকে। ফলে গতির সঙ্গেই পুরো পথ পাড়ি দিতে হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৭
এমএএএম/টিআই