ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আগের মতো দোলা নেই নাগরদোলায়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৭
আগের মতো দোলা নেই নাগরদোলায় আগের মতো দোলা নেই নাগরদোলায়

ঢাকা: নাগরদোলা, নামটি শুনলেই মনের মধ্যে কেমন যেন একটা দোলা লাগে। হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে সেই ছোটবেলায়। মনে পড়ে যায় গ্রাম বাংলার মেলা, পার্বণ আর নানা স্মৃতি।

গ্রামের কোনো মেলা নাগরদোলা ছাড়া কল্পনাই করা যায় না। নাগরদোলা নিয়ে গল্প আছে, আছে গান-সিনেমা।

আর সেই নাগরদোলার আজ করুণ দশা। নানা ধরনের ইলেক্ট্রনিক বিনোদন সামগ্রীর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পাল্লা দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারছে না নাগরদোলা।

শহুরে বাচ্চারা এখন নাগরদোলায় ওঠে না। তাদের পছন্দ নানা ধরনের ইলেকক্ট্রনিক রাইড। তাই এখন আগের মতো আর দোল খায় না নাগরদোলা।
 
এতে নাগরদোলার সঙ্গে যাদের জীবিকা জড়িত তাদের সংসার চলছে কোনমতে। তারা এখন কিভাবে জীবনযাপন করছেন সে বিষয়ে কথা হয় মোস্তফা কামালের সঙ্গে। নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জের বাসিন্দা মোস্তফা প্রায় ৩০ বছর ধরে এ পেশার সঙ্গে জড়িত। এ পেশার সঙ্গে যুক্ত হওয়া এবং এ পেশাতেই থেকে যাওয়া নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে নানা কথা বললেন মোস্তফা। তিনি এখন ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় নাগরদোলা নিয়ে এসেছেন।

বাণিজ্যমেলায় দেখা যায় অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক রাইড সারাদিন ব্যস্ত। সেখানে নাগরদোলা ঘুরে না বললেই চলে। আগের মতো দোলা নেই নাগরদোলায়

নাগরদোলা চালিয়েই সংসার চলে জানিয়ে মোস্তফা বাংল‍ানিউজকে বলেন, এইটা দিয়ে আমার বাচ্চারে লেখাপড়া করাই। এটা দিয়েই সংসার চলে। এটাই আমার সবকিছু। আমার সাড়ে ৯ বছরের এক ছেলে আছে। সে মাদ্রাসায় পড়ছে।

১৯৮৮ সালে বাড়ির লোকদের সঙ্গে রাগ করে ঢাকায় আসেন মোস্তফা। বলেন, আমি নিজেই বাড়ি থেকে রাগ কইরা ৮৮-তে এ জগতে ঢুকছি। রাজধানীর রমনা থেকে আমার নাগরদোলায় চাকরির জীবন শুরু। সেই বছর ১৬ ডিসেম্বর মেলায় ঘুরতে আইসা এ জায়গায় আমি কাজে জয়েন দিলাম। তারপর থেকেই এ পেশায় আছি।

নাগরদোল‍া নিজের কিনা এ প্রসঙ্গে বলেন, আমার না। তবে এইটা আমার দায়িত্বে আছে। মালিকের পাঁচটা গাছ (নাগরদোলা) আছে। সেগুলোর ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে আছি। কম চলায় তিনটি ফালাই রাখছি। একটা এইখানে, আরেকটা নোয়াখালী আছে।
 
নাগরদোলা নিয়ে বহু জায়গায় ঘুরেছেন মোস্তফা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বহু জায়গায় আমি ঘুরছি। মনে করেন চট্টগ্রাম থেকে কুষ্টিয়া, এখান থেকে সিলেট ভোলাগঞ্জ বর্ডার পর্যন্ত।
৮৮ তে নাগরদোলার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সময় জন প্রতি ১/২ টাকা নিতাম। আর এখন জায়গা বুঝে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়। বাণিজ্য মেলায় নেওয়া হচ্ছে ৩০ টাকা করে- জানালেন মোস্তফা।
 আগের মতো দোলা নেই নাগরদোলায়
তিনি বলেন, যখন শুরু করছি তখন মানুষের একটা চাহিদা ছিল। এখন সেই চাহিদা নাই। চাহিদাটা খুবই কইমা গেছে। আগে যদিও আমরা ১/২ টাকা কইরা গাছ ঘুরাইছি, তখন আমাদের একটা চাহিদা ছিল, আকর্ষণ ছিল। আর এখন ৩০ টাকা কইরা চালাইয়া আমাদের যে টাকাটা আমদানি হয়, আগে ১/২ টাকা কইরা যে আমদানি অইছে তার চেয়ে এখন কম হয়।

নাগরদোলার চাহিদা কমার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এখন তো এইডার চাহিদা নাই। আগে অনেকেই এইডারে ভালোবাসতো, দৌড়াইয়া আসতো। এখন অন্য ধরনের বিনোদন বাইর অইয়া গেছে। নতুন মডেলের নতুন বিনোদন বাড়ছে। এগুলোতো আগে ছিলো না। যেমন বিমান চক্কর, ঘোড়া চক্কর, শামপান, রাডার, ট্রেন এগুলোর প্রতি বাচ্চাদের আকর্ষণ বেশি। তবে শামপান আর রাইডেই সব থেকে বেশি আকর্ষণ এখন।
 
বর্তমানে নাগরদোলার পরিস্থিতি খুবই খারাপ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১ তারিখে বাণিজ্য মেলায় আসছি। আমরা এখানে চারজন আছি। অনেক খরচ আছে। এখনো আমাদের লস। এ কয়দিনে আমাদের খাওয়ার খরচও ওঠেনি ঠিকমতো। ১০/১২ তারিখ পর্যন্ত তো পুরাই লস গেছে। এখন সব খরচ কইরা সমান সমান।

নতুন নতুন বিনোদন বাড়তাছে, ইলেক্ট্রনিক জিনিস বাড়তাছে। তার জন্য এইটার চাহিদা কমতাছে। মালিক আর কতো দিন লস দিবো। হয়তো কোনো দিন বন্ধ কইরা দিবো। অন্যগোও একই অবস্থা।
 
মোস্তফা হতাশ কণ্ঠে বলেন, এমনভাবে চলতে থাকলে কয়েক বছর পর হয়তো আর নাগরদোলা দেখাই যাইবো না।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৭
এমএইচকে/আরআর/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।