ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পরিবারের দায়িত্বহীনতায় অপরাধে ঝুঁকছে শিশুরা

রীনা আকতার তুলি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৭
পরিবারের দায়িত্বহীনতায় অপরাধে ঝুঁকছে শিশুরা সম্প্রতি সময় হত্যার শিকার হওয়া কিশোর আদনান ও আব্দুল আজিজ

ঢাকা: বিশ্বায়নের যুগে তথ্য ও প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের পাশাপাশি অপব্যবহারও সব দেশেই চলছে। তবে বাংলাদেশে এর বিস্তৃতি ব্যাপক। অন্যদিকে পাবিরারিক অনুশাসন না থাকা ও সামাজিক শৃঙ্খলা নষ্ট হওয়ায় দেশজুড়েই চলছে নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড।

নারীর প্রতি নানা বিরূপ আচরণ ও সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ানোর পাশাপাশি শিশুদের হত্যার মতো ঘটনায় মেতে ওঠা যেনো খেলায় পরিণত হয়েছে। ভয়ঙ্কর এ অপরাধে মেতে ওঠার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী দায়িত্বহীন পরিবার।

সম্প্রতি শিশুরাই শিশুদের হত্যা করছে এমন ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এসব অভিমত জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়া রহমান এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরীসহ বিশেষজ্ঞদের অভিমত শিশুদের এই ভয়ঙ্কর খেলায় মেতে ওঠার জন্য পারিবারিক অনুশাসন ও সংস্কৃতির পরিবর্তন সবচেয়ে বেশি দায়ী।

গত ৬ জানুয়ারি উত্তরায় পাড়া ও মহল্লা ভিত্তিক কিশোরদের গ্রুপিং বা গ্যাংবাজির শিকার হয়ে হত্যার শিকার হয় অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী আদনান। অন্যদিকে গত ১৮ জানুয়ারি তেজকুনি পাড়ায় প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে খুন হয় আব্দুল আজিজ নামে এক কিশোর।

কিশোর অপরাধের বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের অভিমত তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহার ছাড়াও সামাজিক ও সংস্কৃতিক পরিবর্তন, পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাব, বিদেশি টিভি চ্যালেন দেখা, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় ঘাটতি, হঠাৎ প্রযুক্তির আমূল পরিবর্তন, পারিবারিক অনুশাসন এবং মূল্যবোধের অবক্ষয়কে কিশোর অপরাধের অন্যতম কারণ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়া রহমান অভিমত জানিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, পাড়া ও মহল্লা ভিত্তিক গ্রুপিংয়ের মাধ্যমে কিশোরদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

হত্যাকাণ্ডের কারণ হিসেবে তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহারকে দায়ী করে অধ্যাপক জিয়া রহমান বলেন, হঠাৎ তথ্য-প্রযুক্তির আমূল পরিবর্তনের ফলে কিশোররা এর অপব্যবহার বেশি করছে। প্রযুক্তির অপব্যবহারের কারণেই বেড়েছে কিশোর অপরাধ। প্রযু্ক্তি সংক্রান্ত ডিভাইসগুলো ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকায় সর্বত্র  চলছে এর অবাদ ব্যবহার। প্রযুক্তির কল্যাণে যেমন উপকৃত হচ্ছে মানুষ আবার তেমনি এর অপব্যবহারে ক্ষতিগ্রস্তও হচ্ছে।

উদাহরণ তুলে ধরে অধ্যাপক জিয়া রহমান বলেন, ১৯২০ সালে আমেরিকাতে যখন তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে যায়। তখন কিশোর অপরাধও বেড়ে গিয়েছিল। তাই এটি আমাদের দেশের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়।

অধ্যাপক জিয়া মনে করেন, দেশে একটি নতুন শ্রেণি তৈরি হয়েছে যারা অনেক টাকা পয়সার মালিক। কিন্তু তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা নেই। তাদের ছেলে-মেয়েরা এসব অপরাধে বেশি জড়িয়ে পড়ে। কারণ পারিবারিক অনুশাসন তাদের কম ছুঁয়ে থাকে। ফেসবুক, ভিডিও গেইমস, ইমো, টেলিগ্রাম এসব নেগেটিভ বিষয়গুলো কিশোরদের মনের ওপর ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলছে।

রাশেদা কে চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে কিশোর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু হত্যার কারণ শিশুমনে ভয়ঙ্কর অপরাধ স্থান পাওয়া। এ জন্য পারিবারিক অনুশাসন এবং সমাজ পরিবর্তনই বেশি দায়ী।

আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব, বিভিন্ন বিদেশি টিভি চ্যানেল কিশোরদের মনস্তাত্ত্বিকভাবে বিরূপ প্রভাব ফেলছে বলে মনে করেন রাশেদা কে চৌধুরী।

তিনি আরও বলেন, কিশোর বয়সে শুধু পরিবার নয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেও অনেক কিছু শেখে। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কিশোরদের মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে নয়, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে। এর ফলে ঘটছে কিশোর অপরাধ।

অধ্যাপক জিয়া রহমান এবং রাশেদা কে চৌধুরী সুপারিশ তুলে জানান, এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পরিবাররিক কাউন্সিলিং প্রয়োজন। কিশোরদের মধ্যে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে মূল্যবোধ তৈরি করা জরুরি।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৭
আরএটি/জিপি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।