কক্সবাজার শহরের বাজারঘাটায় পৌরসভা মার্কেট সংলগ্ন রাখাইন পাড়ায় এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা ২০/২৫ জন ইয়াবা বিক্রেতা পালাক্রমে রাস্তার পাশে, চায়ের দোকানে বসে প্রকাশ্যে ইয়াবা বিক্রি করেন।
বৃহস্পতিবার (০৪ জানুয়ারি) শহরের পূর্ব রাখাইনপাড়ার গিয়ে দেখা যায়, গলির মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছেন মধ্যবয়সী এক লোক। হাত ও লুঙ্গির ভাঁজে, কোমরে পলিথিনে মোড়ানো ইয়াবা। একের পর এক যুবক এসে তার হাতে টাকা গুঁজে দিচ্ছে। এরপর ছোট পলিথিনে মোড়ানো একটি করে প্যাকেট নিয়ে হাওয়া হয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় এক চা দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মধ্যবয়সী ওই লোকটির নাম জব্বার। তিনি নিজেই ইয়াবাসেবী। এভাবে খুচরা ইয়াবা বিক্রি করে যা লাভ হয় তাই দিয়ে নিজেই ইয়াবা সেবন করেন।
গোয়েন্দা সূত্র মতে জানা যায়, এভাবে শহরের বাজারঘাটার পূর্ব রাখাইনপাড়া, পশ্চিম রাখাইনপাড়া, বৈদ্যঘোনার মোড়, পাহাড়তলীর ইসলামপুর খেলার মাঠ, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের নুর হোটেল, কলাতলীর মোড়, সুগন্ধা পয়েন্ট, সি ইন পয়েন্ট, হোটেল সিগালের সামনে, লাবনী পয়েন্ট, জিয়া গেস্ট ইন, কটেজ জোন, হলিডের মোড়, বাহারছড়ার গণস্বাস্থ্য মোড়, গাড়ির মাঠের কবরস্থান রোড, সমিতি বাজার স্কুলের পেছনের গলিসহ আরো ১০/১২টি স্পটে প্রকাশ্যে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক বিক্রি হয়। এই সিন্ডিকেটে প্রায় দুই শতাধিক ছোট-বড় মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবী জড়িত রয়েছে।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র (ভারপ্রাপ্ত) মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, শহরের রাখাইনপাড়ায় শুধু হাঁকডাক করে ইয়াবা বিক্রি হয় তা নয়, রীতিমতো সেখানে মাদকের হাট বসে। একদিকে চলে বিকিকিনি অন্যদিকে রাস্তায় ও বিক্রেতার বাসাতেই আছে ইয়াবা সেবনের ব্যবস্থা। বিষয়টি অনেকবার আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মিটিংয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। দু’একদিন সংশ্লিষ্টরা নড়েচড়ে বসেন। এরপর আগের মতোই চলতে থাকে।
প্রতিদিন শহরের বড় বাজারের পূর্ব ও পশ্চিম রাখাইনপাড়া, টেকপাড়ার হিন্দুপাড়া ও হাঙ্গরপাড়ায় ইয়াবার হাট বসে বলে জানান ভারপ্রাপ্ত মেয়র।
এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর থানার ওসি (অপারেশন) মাঈন উদ্দিন বলেন, শহরের অনেকগুলো স্পটে প্রকাশ্যে ইয়াবা বিক্রি করা হয়। অনেক স্পটে আমরা অতীতে অভিযান চালিয়েছি। তবে অভিযানকালে মাদক পাওয়া না গেলে আমাদের করার কিছু থাকে না।
তিনি আরও বলেন, দেখুন ইয়াবা দেখতে অনেকটা হিস্টাসিন ট্যাবলেটের মতো। খুচরা বিক্রেতাদের কাছে সর্বোচ্চ ২০/২৫টি ইয়াবা একসাথে থাকে। তারা পুলিশের আগমন টের পেলেই সেই ইয়াবাগুলো দূরে ছুড়ে দেয়।
ওসি বলেন, আজ (বৃহস্পতিবার) সকালেও পাহাড়তলীর ইসলামপুর মাঠ থেকে একজন খুচরা ইয়াবা বিক্রেতাকে আটক করেছি। এর আগে ২৭ ডিসেম্বর হেঁকে ইয়াবা বিক্রিকালে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দিয়েছি।
ইয়াবা রোধ করতে হলে সমাজের গণমান্য ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে মনে করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহযোগিতা করতে হবে। অভিভাবক ও এলাকাবাসী সচেতন না হলে ইয়াবার আগ্রাসন থেকে মুক্তি নেই বলে মনে করেন তিনি।
র্যাব-৭ কক্সবাজার ক্যাম্প কমান্ডার মেজর রুহুল আমিন বলেন, প্রকাশ্যে ইয়াবা বিক্রির সংবাদের তথ্যের ভিত্তিতে আমরা ২৫ ডিসেম্বর পূর্ব রাখাইনপাড়ায় অভিযান চালাই। অভিযানে খুচরা ইয়াবা বিক্রেতা আক্তার হোসেন ও ইয়াবা মজুদকারী লাচিং প্রু রাখাইনকে নগদ ২১ হাজার টাকা ও ৫শ’ ইয়াবা ট্যাবলেটসহ গ্রেপ্তার করে মামলা দায়ের করি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) খালেদ মাহমুদ বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে প্রায়ই সময় ইয়াবাসেবী ও খুচরা ইয়াবা বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হয়। আমরা গেল বছর কমপক্ষে ৩০/৪০ জনকে ইয়াবা বিক্রি ও সেবনের অপরাধে কমপক্ষে ১ মাসের সাজা দিয়েছি। শুধু আইনের প্রয়োগ করে সমাজ থেকে মাদক নিমূর্ল করা সম্ভব নয়। এ জন্য দরকার জনসচেতনতা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০১৭
টিটি/এমজেএফ