ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

খুঁটি আছে, বিন নেই!

মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০১৮
খুঁটি আছে, বিন নেই! খোয়া গেছে বিন, দাঁড়িয়ে আছে খুঁটি

ঢাকা: রাজধানী ঢাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নতির লক্ষ্যে শহরের মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছিল মিনি ডাস্টবিন। দুই সিটি করপোরেশনের এলাকায় ডাস্টবিন বসানো প্রকল্পে খরচ হয়েছিল ৬ কোটি টাকার মতো। পুরো প্রকল্পই এখন প্রায় ভেস্তে যাচ্ছে জনগণের সচেতনতার অভাব ও দুই সিটি করপোরেশনের তদারকি অবহেলার কারণে।

কর্তব্যরতদের অবহেলার কারণে উত্তর সিটি করপোরেশনের ডাস্টবিন প্রকল্পকে প্রায় মৃত বলা চলে। পাশাপাশি দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ডাস্টবিন প্রকল্পের অবস্থাও নাজেহাল।

দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকরতারা ডাস্টবিন লাগানো পর্যন্তই কাজ করেছেন। ডাস্টবিনগুলোর সঠিক ব্যবহার ও পরবর্তী রক্ষণাবেক্ষণে তাদের কোনো মনোযোগই ছিল না। ফলে দুই সিটি করপোরেশনকে এখন ৬ কোটি টাকার লোকসান গুণতে হচ্ছে।

এর ফলে দুই সিটি করপোরেশনের এলাকায় লাগানো অধিকাংশ ডাস্টবিনের খুঁটিগুলো রয়ে গেলেও বিন নেই। আবার যেটির খুঁটি ও বিন দুই-ই আছে সেটি ব্যবহারযোগ্য নয়। ডাস্টবিন প্রকল্প রাজধানীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে কোনো ভূমিকাই রাখতে পারেনি। এটিকে শুধুমাত্র সিটি করপোরেশনের টাকা অপচয় ছাড়া আর অন্য কিছু বলার জো নেই।

২০১৬ সালে বনানী থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত রাস্তার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় প্রায় ১৫০ মিটার দূরত্বে ডাস্টবিন বসিয়েছিল ডিএনসিসি। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, অধিকাংশ ডাস্টবিনের খুঁটি ছাড়া বিনের কোনো অস্তিত্ব নেই। আবার কিছু জায়গায় গোড়া থেকে ডাস্টবিন উধাও।
খোয়া গেছে বিন, দাঁড়িয়ে আছে খুঁটিরাজধানীর শাহবাগ, আজিমপুর, ধানমন্ডি, ফার্মগেট, বনানী এলাকা ঘুরেও এ চিত্র দেখা গেছে। অন্যদিকে কিছু কিছু এলাকায় ডাস্টবিনের অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে।

আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, হাতের নাগালে বা নির্দিষ্ট দূরত্বে ডাস্টবিন থাকা সত্যেও এর ব্যবহার করেননি নগরবাসী। ফলে একাধারে ময়লা আবর্জনায় পূর্ণ হচ্ছে রাজধানীর পানি নিষ্কাশনের বিভিন্ন নালা।

তাই ডাস্টবিন প্রকল্পের ব্যর্থতা কেবল দুই সিটি করপোরেশনের নয়। এতে সমানভাবে অংশীদারিত্ব ছিল নগরবাসীরও। রাস্তায় ডাস্টবিন বসানোর সময় থেকেই এর ব্যবহারে অনীহা দেখা যায় নগরবাসীর মধ্যে।

অনেক আবাসিক এলাকায় দেখা গেছে, ডাস্টবিন হাতের নাগালে থাকা সত্ত্বেও তারা এর ব্যবহার না করে রাস্তায় ময়লা ফেলেছেন। এক শ্রেণির অস্বাদু মানুষ ডাস্টবিনগুলোকে নষ্ট এবং চুরি করেছে।

তবে অন্য আঙ্গিকে এর ব্যর্থতা দুই সিটি করপোরেশনেরই ওপর বর্তায়। কারণ নাগরিকদের ডাস্টবিন ব্যবহারে সচেতন করার বিষয়টি নিয়ে তারা কাজ করেনি। ফলে সবার চোখের সামনে এই ডাস্টবিন প্রকল্পটি বিফল হয়েছে।

এ বিষয়ে নগরবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডাস্টবিন বসানো হলেও এর কার্যকরী কোনো ফল না পাওয়ায় তারা এর ব্যবহারে উৎসাহী হননি। অনেকে ডাস্টবিনে ময়লা আবর্জনা ফেললেও রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় উন্মুক ময়লার স্তূপ দেখে হতাশ হয়েছেন।
ব্যবহার হয়েছে গুটিকয়েক ডাস্টবিনরাজধানীর ইন্দিরা রোডের বাসিন্দা ইভান বাংলানিউজকে বলেন, প্রথম যখন ডাস্টবিনগুলো লাগানো হয়েছে তখন নিয়মিত ব্যবহার করতাম। কিন্তু পরে দেখি ডাস্টবিনের ময়লা প্রতিদিন সরানো হয় না এবং এর আশপাশে ময়লার স্তূপ হয়ে থাকে। এরপর থেকে আর ব্যবহার করিনি।

রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা মোহাম্মদ নূর বাংলানিউজকে বলেন, রাস্তায় শুধু তো খুঁটি দেখি, বিন তো নাই। তাহলে ময়লা আবর্জনা ফেলব কোথায়। প্রশাসনের লোকদের চোখের সামনে টোকাইরা বিনগুলো চুরি করে নিয়ে গেছে, কেউ কিছু বলে নাই। আসলে লোক দেখানো কাজ করে সমস্যার সমাধান হবে না।

এদিকে ডাস্টবিন প্রকল্প ব্যর্থতা ঘুচতে না ঘুচতে উত্তর সিটি করপোরেশনে শুরু হয়ে গেছে নতুন ডাস্টবিন প্রকল্পের কাজ। আবার নতুন করে বসানো হবে নতুন ডিজাইনের ডাস্টবিন। এর জন্য নাকি নগরবাসীর কাছ থেকে ডিজাইন ও পরামর্শও চাওয়া হবে।

এ বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর মো. আবদুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এই ডাস্টবিনগুলো তেমন একটা সাড়া ফেলতে পারেনি সবার মধ্যে। তাই আমরা এখন ব্যবহার উপযোগী ও ঢাকার মানুষের কথা মাথায় রেখে নতুন ডিজাইনের ডাস্টবিন বসানোর পরিকল্পনা করছি। এজন্য নগরবাসীর কাছ থেকেও মতামত নেব।

তিনি বলেন, ডিজাইন পেলে পুরাতন ডাস্টবিনগুলো সরিয়ে নতুন ডাস্টবিন বসানো হবে। আর এই কাজ চলতি বছরেই আমরা শেষ করব বলে আশা করি।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে আগের প্রকল্পটি কী কারণে ব্যর্থ হয়েছে তা না বের করে নতুন ডিজাইনের ডাস্টবিন বসালেই কি কাজ শেষ হয়ে যাবে? আর এতে মানুষ ডাস্টবিন ব্যবহারে আকৃষ্ট হবে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়।

অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই সিটিতে ১০ হাজার ডাস্টবিন বসানো হয়ছিল। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে রয়েছে প্রায় ছয় হাজার ডাস্টবিন।

তাদের দেওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ডিএসসিসি এলাকায় ২২০টি বিন চুরি হয়েছে। ৭০০টি বিন নষ্ট বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় এক হাজার ডাস্টবিন ব্যবহার হচ্ছে না। বাকিগুলো ঠিকঠাক চলছে।

তবে বাস্তবে এই চিত্র দেখা গেছে উল্টো। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার অধিকাংশ ডাস্টবিনই উধাও। খুঁটি থাকলেও বিন নেই, বিন থাকলে ব্যবহার অনুপযোগী আবার অনেক জায়গায় দেখা গেছে কিছুই নেই।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তদারকি ও মানুষের সচেতনতার অভাবে এমনটা হয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থার উন্নতির জন্য বসানো হলেও তা কাজে আসেনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০১৮
এমএসি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।