কুয়াশাঢাকা ভোরে রাজশাহী মহানগরীর গৌরহাঙ্গা রেলগেটে কাজের সন্ধানে আসা পঞ্চাশোর্ধ্ব আশরাফুল বলছিলেন শীত নিয়ে তার সীমাহীন কষ্টের কথা।
কেবল শীতার্ত আশরাফুল নন, পদ্মাপাড়ের রাজশাহী শহরের প্রতিটি খেটে খাওয়া ছিন্নমূল মানুষের শীত নিয়ে একই অভিব্যক্তি।
হিমেল হাওয়ার দাপটে রাজশাহীর মানুষ শীতে কাবু হয়ে পড়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে হাড় কাঁপানো শীত পড়ছে। ভোরে সূর্য উঠলেও তা ঘন কুয়াশার চাদর ভেদ করতে পারছেন না।
দুপুরের দিকে রোদের দেখা মিললেও তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হচ্ছে না। ফলে দিনভর কেবলই শীত আর শীত। শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম বলছেন শীতার্তরা। এ জন্য সমাজের বিত্তশালীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বাংলানিউজকে জানান, শনিবার (৬ জানুয়ারি) ভোরে রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রোববার (৭ জানুয়ারি) সেই তাপমাত্রা আরও কমে ৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছে। সোমবার (৮ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় একই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এবারের মৌসুমে যা এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) থেকে রাজশাহীতে মৃদ্যু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়। ওই দিন রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর পর শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) সামান্য বেড়ে তাপমাত্রা দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু শনিবার (৬ জানুয়ারি) থেকে তা আরও কমে তীব্র শৈত্যপ্রবাহে রূপ নেয়। আগামী কয়েকদিন দুর্যোগপূর্ণ এ আবহাওয়া পরিস্থিতি উন্নতির কোনো সম্ভাবনা নেই।
এর আগে গত বছরের ১৪ জানুয়ারি রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল বলেও জানান এই আবহাওয়া কর্মকর্তা।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আরিফ হোসেন জানান, শীত যতই বাড়ছে হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর সংখ্য ততই বাড়ছে। এর মধ্যে শিশু ও বয়স্করা কোল্ড ডায়রিয়া নিয়ে বেশি ভর্তি হচ্ছেন। এছাড়া অনেকেই শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছেন।
এ সময় শিশুদের উষ্ণ পরিবেশে রাখা, কুসুম গরম পানি পান করানো, উষ্ণ পানি ছাড়া বয়স্কদের গোসল না করা, গরম কাপড় ছাড়া বাইরে বের না হওয়া, অ্যাজমা রোগীদের সঙ্গে ইনহেলার রাখা এবং হৃদরোগীদের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালি বাংলানিউজকে বলেন, তাপমাত্র ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলেই বোরো বীজতলার কোল্ড ইনজুরি, আলুর আর্লি ব্লাইটসহ ফসলের নানান শীতজনিত রোগের প্রার্দুভাব দেখা দেয়।
এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তাই ধানসহ অন্য ফসল বাঁচাতে রাজশাহীর প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের কৃষকদের অবশ্যই কাছের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার শরণাপন্ন হতে হবে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন ঊর্ধ্বতন এই কৃষি কর্মকর্তা।
জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. হেলাল মাহমুদ শরীফ বাংলানিউজকে বলেন, এরই মধ্যে সরকারিভাবে ৫২ হাজার ৫০০ পিস কম্বল রাজশাহীর ৯ উপজেলায় বিতরণ করা হয়েছে। আরও ৩০ হাজার কম্বলের চাহিদা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে পাঠানো হয়েছে। আজকালের মধ্যে সেগুলো এসে পৌঁছালে আবারও তা বিতরণ করা হবে। তবে সরকারি নির্দেশনা না থাকায় এখন পর্যন্ত সিটি করপোরেশন এলাকায় কোনো কম্বল বিতরণ হয়নি। কিন্তু ব্যক্তি পর্যায় থেকে পাওয়া শীতবস্ত্র এখানে দেওয়া হচ্ছে।
তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা কম বলেও স্বীকার করেন জেলা প্রশাসক।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৮
এসএস/এএ