শনিবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে গাজীপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্ত্রী জীবন্নাহার তার স্বামী রফিকুল ইসলামকে খুনের বর্ণনা দেন।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার জানান, পাঁচ বছর আগে ময়মনসিংহের তারাকান্দা থানার উলামাকান্দি এলাকার আব্দুল লতিফের ছেলে রফিকুল ইসলামের সঙ্গে নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার বিষমপুর গ্রামের চাঁনমিয়ার মেয়ে জীবন্নাহারের বিয়ে হয়।
চাকরির সুবাদে স্বামী রফিকুল ইসলাম, জীবন্নাহারকে নিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গড়গড়িয়া মাস্টার বাড়ির মেঘনা কারখানার সীমানা প্রাচীরের পাশে গিলার চালা এলাকার আব্দুল হাই মাস্টারের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। রফিকুল স্থানীয় ‘হাউ আর ইউ’ টেক্সটাইল কারখানায় লোডার পদে এবং স্ত্রী স্থানীয় মেঘনা নিট কম্পোজিট লিমিটেড কারখানায় সুয়িং অপারেটর পদে চাকরি করেন। স্বামী বেতন পেতেন সাত হাজার টাকা আর স্ত্রী বেতন বেতন পান ১৩ হাজার টাকা। বিভিন্ন সময় স্বামী তার স্ত্রীর বেতনের টাকা তার কাছে দিতে বলতেন। কিন্তু জীবন্নাহার বেতনের টাকা তার কাছে না দিয়ে মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই কলহ হতো। সপ্তাহখানেক আগে স্ত্রী জীবন্নাহার স্বামী রফিকুলকে ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।
গত বৃহস্পতিবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে এসব নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা কাটাকাটি হয় এবং এক পর্যায়ে স্ত্রীকে থাপ্পর মেরে স্বামী খাটে শুয়ে থাকেন। এসময় কিছু বুঝে ওঠার আগে স্ত্রী জীবন্নাহার ইট দিয়ে স্বামীর মাথায় আঘাত করলে খাট থেকে নিচে পড়ে যান। এমতাবস্থায় স্ত্রী উপর্যুপরি ইট দিয়ে স্বামীর মাথায় আঘাত করলে অচেতন হয়ে পড়েন রফিকুল ইসলাম। একপর্যায়ে গামছা দিয়ে স্বামীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর ঘরে থাকা ওয়ার্ডরোবে মরদেহটি লুকিয়ে রেখে জীবন্নাহার কারখানায় চলে যান। পরে কারখানা থেকে রাতে বাসায় ফিরে মরদেহটি ওয়ার্ডরোব থেকে বের করে বটি দিয়ে দুই হাত কনুই থেকে, দুই পা হাঁটু থেকে এবং ঘাড় থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। পরে মাথা-হাত-পা বিচ্ছিন্ন দেহাংশটি বস্তায় ভরে পাশের বাঁশ ঝাড়ে, পা দু’টি অদূরে টয়লেটের পাশে এবং মাথা, দুই হাতের অংশগুলো ময়লার ড্রেনে ফেলে দেয়। পরদিন সকালে এলাকাবাসী বাঁশ ঝাড়ের নিচে রক্তমাখা বস্তা ও মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। পরে দুপুরে শ্রীপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ওই খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করেন এবং স্ত্রী জীবন্নাহারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদকালে জীবন্নাহার খুনের ঘটনা স্বীকার করেন।
শ্রীপুর থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) মো. জাবেদুল ইসলাম জানান, এ ব্যাপারে রফিকুলের বাবা আব্দুল লতিফ বাদী হয়ে জীবন্নাহারকে আসামি করে শ্রীপুর থানায় মামলা করেছেন। এ মামলায় আটক জীবন্নাহারকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা জানতে তদন্ত চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহারসহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল শেখ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, ২৬ জানুয়ারি, ২০১৯
আরএস/আরআর