ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দুর্ঘটনায় প্রাণহানি কমাতে প্রয়োজন তিন উদ্যোগ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৯
দুর্ঘটনায় প্রাণহানি কমাতে প্রয়োজন তিন উদ্যোগ মতবিনিময় সভায় বক্তারা-ছবি-বাংলানিউজ

ঢাকা: সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি দুর্ঘটনায় গুরুতরভাবে আহতদের দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিতের মাধ্যমে বাঁচাতে তিনটি উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

এই তিনটি বিষয় হলো- আইনি জটিলতা কমানো, হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে দেরি না করা এবং হাসপাতালগুলোর জরুরি বিভাগের চিকিৎসা সেবা নিয়মানুযায়ী বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।  
 
শনিবার (২৬ জানুয়ারি) রাজধানীর ডেইলি স্টার সেন্টারে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) মতবিনিময় সভায় আগত বক্তারা এমন মতামত দেন।

 

সভাটি গত ৮ জানুয়ারি হাইকোর্ট থেকে কার্যকর হওয়া সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতিকরণ ও সহায়তাকারীর সুরক্ষা প্রদান নীতিমালা, ২০১৮ এর বাস্তবায়ন ও করণীয় বিষয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।  

২০১৬ সালে ব্লাস্টের করা রিট মামলার পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি হাইকোর্ট পুর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন। ৮ জানুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ এবং বিচারপতি ফরিদ আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ নীতিমালা কার্যকরের নির্দেশ দেয়।  
 
সভায় আইনজীবী, চিকিৎসকসহ সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশ এবং সড়ক দুর্ঘটনার দাবিতে আন্দোলনকারী বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
 
নীতীমালা সম্পর্কে ব্লাস্টের পক্ষ থেকে বলা হয়, আমাদের এ বিষয়ে আইনি কোনো অবকাঠামো ছিল না। জরুরি চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের হাসপাতাল নির্মাণের কোনো রুল ছিল না। এরকম পরিস্থিতিতে একটি সড়ক দুর্ঘটনা ও বিভিন্ন আইনি জটিলতার কারণে চিকিৎসা না পেয়ে এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২০১৬ সালে হাইকোর্টে রিট মামলা করে ব্লাস্ট। এরপর হাইকোর্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে খসড়া নীতিমালা করার নির্দেশ দিলে মন্ত্রণালয় সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় নীতিমালা প্রস্তুত করে।  
 
এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, নীতিমালা অনুসারে জরুরি চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোনো শর্ত থাকবে না। এমনকি আইনি জটিলতাও বিবেচনা করা যাবে না। প্রয়োজনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজ দায়িত্বে রোগী অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করবে। আর যাদের উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে তারা রোগী গ্রহণ না করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সহায়তাকারীকে কোনো হয়রানি করা যাবে না। এক্ষেত্রে হাসপাতালে রোগী মারা গেলে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না।
 
এই নীতিমালার কিছু কিছু ক্ষেত্রে পূর্বে প্রদত্ত খসড়া নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি উল্লেখ করে ব্লাস্টের রিসার্চ স্পেশালিস্ট তাকবীর হুদা বলেন, নীতিমালার ৫২ ধারায় একটি আর্থিক সহায়তা তহবিল গঠনের কথা বলা হয়েছে কিন্তু ‘ক্ষতিপূরণ বা চিকিৎসা সহায়তার’ জন্য। এখানে এই ‘বা’ নিয়েই আমাদের উভয় ক্ষেত্রের দাবি ছিল। ৬২ ধারায় দুর্ঘটনায় দোষী ড্রাইভার, হেলপার বা প্রতিনিধিদের উপর চিকিৎসার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ২০১৭ সালে আমরা যে খসড়া নীতিমালা দিয়েছিলাম সেখানে, এই দায়িত্ব পালন না করলে ক্ষতিপূরণের কথা উল্লেখ ছিল। এ সংক্রান্ত ১৯৮০ এর আইনে দায়িত্ব পালন না করলে ছয় মাসের জন্য লাইসেন্স বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হলেও ১৯৮৩ সালে তা শিথিল করে এক মাস করা হয়। আর এ নীতিমালায় তাও কমিয়ে শুধু লাইসেন্সের ১২ পয়েন্টের এক পয়েন্ট কাটা যাবে বলে জানানো হয়। এ নীতিমালায় অর্থদণ্ড বাড়লেও অপরাধ বাড়লে (একাধিক দুর্ঘটনায় দায়ী হলে) শাস্তির বিধান বাড়ার বিধান নেই। আমাদের সুপারিশে এগুলো ছিল।
 
সড়ক দুর্ঘটনায় বেসরকারি হাসপাতালগুলোর দায়বদ্ধতা বাড়ানো উচিৎ উল্লেখ করে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. মইনুল হোসেন জানান, স্বাস্থ্য অধিদফতরকে এ বিষয়ে আরও কঠোর হতে হবে। এরকম জরুরি চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের বাধ্য করতে হবে। আর শুধু ব্যবসার উদ্দেশ্যে হাসপাতাল নির্মাণ করলে হবে না।
 
হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপারেশন ও স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স) মো. আনিসুজ্জামান বলেন, হাইওয়ের পাশের হাসপাতালগুলোকে আরও উন্নত করতে হবে। দুর্ঘটনা হয়তো রোধ করা যাবে না, তবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এ ব্যাপারে হাইওয়ে পুলিশ এমনকি ট্রাফিক পুলিশকে নিজ থেকে সহায়তা করার নির্দেশনা দেওয়া আছে।
 
এদিকে এই নীতিমালা প্রতিনিয়ত আপডেট করা হচ্ছে এবং আগের কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাকিয়া সুলতানা।  
 
বাংলাদেশ সময়: ২২০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৯
এমএএম/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।