একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ড. মোমেন। সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিজ কার্যালয়ে বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন তার অনেক পরিকল্পনার কথা।
ড. মোমেন বলেন, আমরা নতুন কিছুর জন্য পরিবর্তন আনতে চাইছি। উন্নয়নের মহাযাত্রায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিভাবে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে, কিভাবে অ্যাক্টিভ ভূমিকা পালন করবে—সেটাই আমাদের একটি ফোকাস থাকবে।
সেই ফোকাস কিভাবে থাকবে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুনিয়ার সব দেশের সরকারের একটি অবস্থান থাকে। আমরা সেটা জানি। আবার সব দেশেই কিন্তু পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি বলে একটি জিনিসও আছে। বিভিন্ন অপিনয়ন বিল্ডার্স থাকে, তারাও সরকারের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য কাজ করে। তারা সরকারকে বিভিন্নভাবে হেল্প করে। আমরাও চাই এখানে পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি শক্তিশালী করতে। এতে আমরা সমাজের বহু লোককে সম্পৃক্ত করতে পারবো। তাদের বুদ্ধি ও মতামত নিতে পারবো। তারাও আমাদের প্রোমোট করতে পারবেন।
পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি শক্তিশালী করার বিষয়ে আপনার পরিকল্পনা কী? উত্তরে ড. মোমেন বলেন, এই যেমন ধরেন, রোহিঙ্গার ইস্যু। এমন ধরনের ইস্যুতে আমরা কেন সবকিছু করতে যাবো? আমাদের অনেক পাবলিক গ্রুপ আছে, তারাই এমন একটি ইভেন্টে এসব ইস্যু সামনে আনতে পারবে। নিউইয়র্কে এমন অনেক গ্রুপ আছে, আমরা সেখানে অতিথি হিসেবে গেলাম। তারা আয়োজন করলো। এটা ইউরোপের কোনো ক্যাপিটালেও হতে পারে। ইংল্যান্ডেও হতে পারে। সেখানে আমাদের বহু প্রবাসী আছে, আমরা তাদের সহায়তা নিতে পারি। তারা এভাবেই পাবলিক ডিপ্লোম্যাসিতে সহায়তা করতে পারেন। এমন অনেক চিন্তা-ভাবনা আছে, আমি চাই একটি ডিসিপ্লিনে নিয়ে আসা।
দেশের স্বার্থ কিভাবে প্রোমোট করা যায়, এ বিষয়ে আপনার পরিকল্পনা কীরকম— জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমার দেশের ইন্টারেস্টকে প্রোমোট করতে চাই। একই সঙ্গে সেই ইন্টারেস্টকে প্রটেকশনও দিতে চাই। এগুলো আমাদের ফরেন পলিসির বড় একটি অবজেকটিভ হবে। গ্লোবাল লিডারশিপেও আমরা ভূমিকা রাখতে চাই। বিশেষ করে শান্তি ও নিরাপত্তার প্রশ্নে আমরা কাজ করবো। আমরা এমন একটি দেশ, যে সবসময় শান্তির পক্ষেই ছিলাম।
বিদেশে আমাদের দেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরার বিষয়ে আপনার পরিকল্পনা কী? উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের সব জিনিসের বিদেশে সবসময় কারেক্ট রিফ্লেক্ট হয় না। আমি কারেক্ট রিফ্লেক্ট চাই। আমাদের দেশের এক সময় রিফ্লেক্ট ছিলো এমন যে, আমরা দারিদ্র্যপীড়িত দেশ। তবে এখন আর সেটা নেই। এখন বলা হচ্ছে, হিউম্যান রাইটস ভায়োলেট হচ্ছে। দুনিয়ার সব দেশেই এটা কমবেশি হয়। আমি সেদিন বলেছি, আমেরিকাতে বছরে ৩৩ হাজার লোক পুলিশ মেরে ফেলে। রিসার্চ এটাই বলে। তবে এটা কখনোই মিডিয়ায় আসে না। তবে আমাদের এখানে একটা-দুইটা হলেই মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার হয়।
আমাদের পররাষ্ট্র নীতিতে পূর্বমুখী নীতি রয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী? পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, আমরা দেশের স্বার্থে যা করার সেগুলোই করবো।
আবুল কালাম আব্দুল মোমেন একজন অর্থনীতিবিদ ও কূটনীতিক। তিনি আগস্ট ২০০৯ থেকে অক্টোবর ২০১৫ পর্যন্ত জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এ কে আব্দুল মোমেন ১৯৪৭ সালের ২৩ আগস্ট বাংলাদেশের সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আবু আহমদ আব্দুল হাফিজ ছিলেন সিলেট জেলা মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা। তার মা সৈয়দা শাহার বানু ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক এবং সিলেটে নারী জাগরণের অগ্রদূত। তার ভাই আবুল মাল আবদুল মুহিত বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
আব্দুল মোমেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯ সালে অর্থনীতিতে বি.এ এবং ১৯৭১ সালে উন্নয়ন অর্থনীতিতে এম.এ অর্জন করেন। তিনি ১৯৭৯ সালে হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে এমবিএ পাস করেন। এরপর ১৯৭৬ সালে ঢাকার সেন্ট্রাল কলেজ থেকে আইনশাস্ত্রে এলএলবি অর্জন করেন। এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে তার লেখাপড়া চালিয়ে যান এবং নর্থইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, বোস্টন, ম্যাসাচুসেটস থেকে ১৯৮৮ সালে অর্থনীতিতে পিএইচডি সম্পন্ন করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৯
টিআর/এমজেএফ