ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সন্তানের সঙ্গেই চলে গেলেন তারা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৯
সন্তানের সঙ্গেই চলে গেলেন তারা লিপু, তার স্ত্রী নাসরিন ও ছেলে আফতাহী

ঢাকা: অফিস শেষে এক রিকশায় বাসায় ফিরছিলেন সালেহ মোহাম্মদ লিপু আর স্ত্রী নাসরিন আক্তার তাদের ছেলে আফতাহীকে (৮) নিয়ে। সর্বশেষ বাসা থেকে তিন মিনিট দূরত্বে আটকে ছিলেন যানজটে। এরপর আর খোঁজ মেলেনি তাদের।

পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশনের সামনে ডান পাশের রাস্তায় ছিল সর্বশেষ অবস্থান মোবাইল ট্র্যাকিংয়ে। সকাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গের সামনে ভাই, ভাবী আর ভাতিজার খোঁজে দাঁড়িয়ে আছেন লিপুর ভাই ইসমাইল হোসেন।

শুক্রবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাছে ডিএনএ’র নমুনা দিয়ে আহাজারি করছিলেন নাসরিন আক্তারের ভাই আনোয়ার হোসেন রনি।

লিপুর ভাই ইসমাইল বলেন, জানি না ভাই-ভাবি-ভাতিজা কোথায় আছেন। আগুনের পরে মোবাইলে কল দিয়েছি, বন্ধ দেখাচ্ছে। আমার ভাতিজাও ছিল এক রিকশায়। জানি তাদের আর ফিরে পাবো না। কিন্তু শেষবারের মতো দেহটাও পেলে নিজেদের সান্ত্বনা দিতে পারতাম। সবাই বলছে কেউ বেঁচে নেই মর্গে গিয়ে সবগুলো মরদেহ দেখেছি কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।

বোন নাসরিন আক্তারের কথা জিজ্ঞেস করলে বাংলানিউজকে আনোয়ার হোসেন রনি বলেন, মাত্র ২০ দিন হয়েছে অফিস কাছে হবে বলে তারা নতুন বাসা নিয়েছিল। ভাই একটি বেসরকারি আইসক্রিম কোম্পানির বিতরণ কর্মকর্তা। আমাদের সব শেষ কি নিয়ে বাঁচবো আমরা।

তিনি বলেন, উর্দু রোড থেকে ৪-৫ মিনিটের দূরত্বে ছিলেন তারা। অফিসে সিসিটিভি ফুটেজে বের হয়ে যাওয়ার ছবি দেখেছি এটিই আমাদের শেষ দেখা। ইসলামপুর থেকে আমার বোনের অফিস করতে ঝামেলা হতো। তাই নন্দ কুমার রোডের এই বাসায় চলে আসে তারা। ভাতিজাসহ এক রিকশায় বাসায় ফিরছিলেন তারা। রাত ১০টার পরে আর কোনো হদিস পাচ্ছি না তাদের। সব জায়গায় খুঁজলাম এখনো কিছু জানতে পারলাম না। একসঙ্গেই তারা চলে গেলেন সবাইকে ছেড়ে। আর কোনদিন ফিরবেন না। তাদের সঙ্গে আর কোনদিন কথা হবে না। আমার বোন আর আমাকে ডাকবে না।

আট বছরের ভাতিজা আফতাহী পড়তেন বকশীবাজারের বীকন স্কুলে। সেও ছিল ওই রিকশায়। তিন মিনিট দূরেই ছিল বাসা। প্রতিদিনের মতো সেদিন রাতেও বাসায় ফিরছিলেন তারা। রাতের খাবার একসঙ্গে খেয়ে বাসায় যেতেন সব সময়। ধারণা করা হচ্ছে আগুনে পুড়েছেন তিন জন। কোথাও তাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। সর্বশেষ সিআইডির নমুনা সংগ্রহ টিমের কাছে রক্ত ও লালার স্যাম্পল দিয়ে রাখছেন তারা।

ঢামেক হাসপাতালের মর্গের সামনে এমন অসংখ্য মানুষের স্বজনদের ভিড় লক্ষ করা গেছে সকাল থেকেই। কেউ ভাই খুঁজছেন, কেউ খুঁজছেন বাবা আবার কেউ খুঁজছেন প্রিয় মায়ের মুখ।

ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অনেকের চেহারা জ্বলে যাওয়ায় মরদেহ শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।  

ঢাকা মেডিকেলের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডাক্তার সোহেল মাহমুদ বলেন,  এই আগুনে অনেকের চেহারা পুরোপুরি অস্বাভাবিক আকৃতি ধারণ করেছে। এতে কে কার স্বজন তা তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের পক্ষে নির্ণয় করা সম্ভব নয়। ডিএনএ ম্যাচিংয়ের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সর্বশেষ ৬৭ জনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেলে পাঠিয়েছিল। এর মধ্যে যাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে তাদের মরদেহ স্বজনদের বুজিয়ে দিয়েছে পুলিশ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯
ডিএসএস/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।