ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সেই আড্ডাস্থলে এখন শুধু পোড়া গন্ধ

প্রশান্ত মিত্র, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৯
সেই আড্ডাস্থলে এখন শুধু পোড়া গন্ধ ওয়াহেদ ম্যানশন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছে ফায়ার সার্ভিস

ঢাকা: পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী চকবাজারের চুড়িহাট্টা এলাকা ছিল স্থানীয়দের আড্ডাস্থল। দিনের কাজকর্ম শেষে এলাকাবাসী এক হতেন এখানেই। দু’দিন আগের প্রাণচঞ্চল্যে ভরা সেই চুড়িহাট্টায় এখন আর আড্ডা নেই, তবে লোকারণ্য। বাতাসে এখন পোড়া গন্ধ আর প্রিয়জনকে হারানোর মাতম।

শুক্রবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে দেখা যায়, ওয়াহেদ ম্যানশনের আশপাশের মোট পাঁচটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে। এর বাইরেও কয়েকটি ভবনের নিচতলায় বিভিন্ন দোকান পুড়ে গেছে।

পুড়ে যাওয়া কয়লার স্তূপে এখনো সাক্ষী হয়ে আছে সর্বনাশা কেমিক্যাল পদার্থ।

স্থানীয় বাবিন্দা জাফর আহমেদ বলেন, চুড়িহাট্টার এই মোড়টি ছিল এলাকার সবার আড্ডাখানা। কাউকে ফোন দিয়ে কোথায় আছে জানতে চাইলেই বলতো, চুড়িহাট্টা মোড়ে আছি। সবাই সারাদিন কাজ-কর্ম শেষ করে এখানে এসে মিলিত হতেন। এখানে হোটেল-চা দোকানগুলো ছিল একেকটা আড্ডাখানা। আর মুহূর্তের মধ্যেই পুরো এলাকাটা মৃত্যুপুরী হয়ে গেলো।

চকবাজার এলাকাজুড়ে চলছে শোকের মাতম। চুড়িহাট্টার আশপাশের এলাকার বেশিরভাগ দোকানই ছিল এদিন বন্ধ। ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা কর্ডন করে রাখলেও নিরাপদ ফিতার পাশে উন্মুখ এলাকাবাসীর ভিড়। সবার দৃষ্টি সেই মোড়ের দিকে। মুহূর্তের মধ্যেই কীভাবে কী হয়ে গেলো বুঝে উঠতে পারছেন না কেউই।

পোড়া কেমিক্যালএদিকে, পুড়ে যাওয়া পাঁচটি ভবনে সতর্কবার্তাসহ সাইনবোর্ড টাঙিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। লাল ফিতা দিয়ে ভবনগুলো কর্ডন করে রাখা হয়েছে।

ব্যানারে লেখা রয়েছে, 'ঝুকিপূর্ণ ভবন। ভবনটি ব্যবহার না করার জন্য সকলকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো'। চুড়িহাট্টার নন্দ কুমার দত্ত রোডের ১৮, ৬৩/২,৬৩/৩ ৬৪ এবং ৬৫ নম্বর ভবনগুলোতে ব্যানারগুলো টাঙানো হয়েছে।
শুক্রবার সিটি করপোরেশনের ১১ সদস্যের কমিটি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ৫ সদস্যের কমিটি ভবনগুলো পরিদর্শন করেন। আর ক্ষতিগ্রস্ত চুড়িহাট্টা মোড়ের সড়ক পরিষ্কারে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নকর্মীদের।

ওয়াহেদ ম্যানশনের নিচতলার বিভিন্ন পোড়া দোকান ও হোটেলগুলো এখনো দু’দিন আগের প্রাণ চাঞ্চল্যের জানান দিচ্ছে। হোটেলের পোড়া আসবাবগুলোতে কতো প্রাণের আড্ডা জমতো নিয়মিত। আজ সবগুলোই একেকটা মৃত্যুপুরী।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতের বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষ ব্যাপার। তবে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে যাওয়া ও আগুনের দীর্ঘস্থায়ীত্বের কারণ বিভিন্ন রকমের দাহ্য পদার্থ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ওয়াহেদ ম্যানশনের দ্বিতীয় তলার পুরোটাতেই গোডাউন ছিল। এখানে গ্যাস লাইটার রিফিল পদার্থ, বডি স্প্রে রিফিল, রঙের তারফিন, প্লাস্টিক পণ্যসহ বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ ছিল। যে কারণে তাৎক্ষণিকভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি হয়ে পড়ে কষ্টসাধ্য।

এছাড়া, সরু গলি ও পানির স্বল্পতার কারণটিও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ভুগিয়েছে বেশ। ন্যূনতম জায়গা ছেড়ে না দেওয়া ও আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে রাসায়নিক মজুদের মূল্য দিতে হয়েছে অর্ধ শতাধিক প্রাণের বিনিময়ে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৯
পিএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।