খুলনা: খুলনা মহানগর জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, খুলনা শিল্প ও বর্ণিক সমিতির সাবেক সভাপতি শেখ আবুল কাশেম হত্যা মামলার বিচারিক কাযক্রম দীর্ঘ প্রায় ২৬ বছর পর শুরু হয়েছে। এতদিন মামলাটি পরিচালনায় উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ ছিল।
রোববার (৩ জানুয়ারি) স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের চিঠি খুলনার জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে আসে। এরপর ওই মামলার অবশিষ্ট কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আগামী ২৬ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন ওই আদালতের বিচারক (জেলা জজ) মো. সাইফুজ্জামান হিরো।
জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আরিফ মাহমুদ বলেন, আদালতের পাওয়া চিঠি অনুযায়ী উচ্চ আদালত ওই মামলার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেছেন ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে। আর তাতে ওই আদালতের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষর করেছেন ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে ওই চিঠিটি খুলনায় আসতে এতদিন লেগেছে। আদালতের কাছে চিঠি আসার সঙ্গে সঙ্গে ওই মামলার কার্যক্রম চালানোর জন্য পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী ২৬ জানুয়ারি।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৭ সালে চার্জশিট থেকে একজনের নাম বাদ দেওয়ায় আদেশ স্থগিত চেয়ে প্রথম দফা আবেদন করেন ওই মামলার বাদী আলমগীর হোসেন। ১৯৯৯ সালে সেই আদেশ প্রত্যাহার করে নেন উচ্চ আদালত। ২০০৯ সালেও মামলার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। ২০১৩ সালে সেটি প্রত্যাহার করে নেন উচ্চ আদালত। পরে মামলার আসামি আব্দুল গফ্ফার বিশ্বাসের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের মার্চ মাসে মামলাটি ছয় মাসের জন্য আবার স্থগিত করেন উচ্চ আদালত। পরে ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত আদেশ দেওয়া হয়।
খুলনা জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের উচ্চমান বেঞ্চ সহকারী মো. ছায়েদুল হক বলেন, ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মামলাটি জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে আসে। ওই সময় একজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। পরবর্তীসময়ে ২০০৮ সালে চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে সেটি দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।
সেখানে ১৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। কিন্তু ১৩৫ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় ওই বছরই তা আবার জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে চলে আসে। কিন্তু এতদিন স্থগিতাদেশ থাকায় মামলাটি ওইভাবে পড়ে ছিল। সবশেষ উচ্চ আদালতের চিঠি পাওয়ার পর পুনরায় মামলার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
আবুল কাশেমের ভাইপো ও ওই হত্যা মামলার তিন নম্বর সাক্ষী শেখ মনিরুজ্জামান বলেন, শুধু আমার পরিবার নয়, খুলনাবাসী চান ওই মামলার বিচার হোক।
তবে আর যেন কোনোভাবেই মামলাটি স্থগিত করা না হয় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আদালতের কাছে অনুরোধ করেন তিনি।
১৯৯৫ সালের ২৫ এপ্রিল দুপুরে খুলনা থানার সামনে প্রকাশ্যে আবুল কাশেম ও তার গাড়িচালক মিকাইল হোসেনকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ১৯৯৬ সালের ৫ মে সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন আদালতে ১০ জনের নামে ওই হত্যা মামলার চার্জশিট দাখিল করেন। ওই হত্যা মামলায় তিন আসামি আদালতের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন।
চার্জশিট অনুযায়ী ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ১০ জনের মধ্যে একজন মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। আর দু’জন মারা গেছেন। বাকি ৭ আসামি বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০২১
এমআরএম/এএ