সিলেট: ২০২১ সাল স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরটি স্মরণীয় করতে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলার পাশাপাশি আর্থ সামাজিক উন্নয়ন তথা সেবার মানসিকতা নিয়ে এগুচ্ছে সরকার।
সরকারের তরফ থেকে সিলেট বিভাগে প্রায় ১০ হাজার ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সিলেটের বিভাগীয় প্রশাসন। ইতোমধ্যে দুই হাজার ৪০০টি ঘর প্রস্তুত করা হয়েছে। যা আগামী ১০ জানুয়ারি হস্তান্তর করা হবে। বাকি ঘরগুলো আগামী তিন মাসের মধ্যে প্রস্তুত করার কথা রয়েছে।
সিলেট বিভাগীয় প্রশাসনের তথ্যমতে, সিলেট বিভাগে বরাদ্দকৃত প্রায় ১০ হাজার ঘরের মধ্যে সিলেট জেলায় বরাদ্দ চার হাজার ১৭৮টি, মৌলভীবাজারে এক হাজার ৭৫টি, হবিগঞ্জে ৪৫২ এবং সুনামগঞ্জে ৩ হাজার ৯০৮টি। এরইমধ্যে ২ হাজার ৪০০ ঘর প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে সিলেটে এক হাজার ১৮৫টি, মৌলভীবাজারে ৬৯৭টি, হবিগঞ্জে ২২৬ এবং সুনামগঞ্জে ৪২২টি। প্রস্তুত করা ঘরগুলোর চাবি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসেই ভূমিহীন পরিবারগুলোকে হস্তান্তর করা হবে।
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মো. মশিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের তরফ থেকে সিলেট বিভাগে প্রায় ১০ হাজার ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে দুই হাজার ৪০০ ঘর প্রস্তুত করা হয়েছে। আগামী ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে এসব ঘরের চাবি ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে হস্তান্তর করা হবে। আগামী তিন মাসের মধ্যে বাকি ঘরগুলো প্রস্তুত করতে কাজ করছে মাঠ প্রশাসন।
সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব ও পরিচালক স্থানীয় সরকার) মো. ফজলুল কবীর বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিটি ঘর তৈরিতে সরকারের খরচ হচ্ছে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। এর সঙ্গে ভূমিহীনরা আরও নগদ চার হাজার টাকা করে পাবেন। সে হিসাবে ভূমিহীন প্রতিটি পরিবারের পেছনে সরকারের বরাদ্দ এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
সরেজমিনে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় বিভিন্ন গ্রামে প্রশাসনের উদ্যোগে খাস জমিতে ঘর নির্মাণ করতে দেখা গেছে। কোনো কোনো স্থানে ঘর নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) এম কাজি এমদাদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সিলেট জেলায় প্রস্তুতকৃত ঘরগুলো হস্তান্তর প্রক্রিয়া চলছে। এরপর যেসব ঘর তৈরি হবে, তাৎক্ষণিক ভূমিহীন পরিবারকে তা হস্তান্তর করা হবে।
সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ঘিলাছড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাজী আবুল লেইছ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আমার ইউনিয়ন থেকে ভূমিহীন ৮৫ জনের তালিকা দিয়েছিলাম। এরমধ্যে ৩৫টি ঘরের নির্মাণ কাজ চলছে।
সরকারের এ উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে ইউপি চেয়ারম্যান হাজী আবুল লেইছ বলেন, পরিবারের সদস্যদের হারিয়ে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা ১৮ কোটি মানুষের পরিবারকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছেন। করোনাকালেও সহযোগিতা ছাড়াও বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাড়া, পঙ্গু ভাতাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি চালু রেখেছেন। এবার ভূমিহীনদের জন্য তিনি বানিয়ে দিচ্ছেন ঘর।
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাও ইউনিয়নের নোয়াগাঁওয়ের নিজাম উদ্দিন, লেবেনা বেগম, আজির উদ্দিন ও পাশ্ববর্তী কদমতলা গ্রামের সিতারা বেগমরা নতুন ঘর পাচ্ছেন। তাদের মতো ভূমিহীন ৬৪ জন ঘর পাচ্ছেন আমার ইউনিয়নে।
নন্দিরগাও ইউপি চেয়ারম্যান এস কামরুল হাসান আমিরুল বাংলানিউজকে বলেন, যাদের জমিও নেই, ঘরও নেই। নতুন ঘর পাওয়া তাদের কাছে যেন আকাশের চাঁদ পাওয়ার মতো। এক কথায় অসম্ভবকে সম্ভব করিয়ে দেখাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, সারাদেশের মধ্যে ভূমিহীন হিসেবে প্রথম ঘর পেয়েছেন তার গ্রামের কটু মিয়া। তার জমিও ছিল না, ঘর নেই। সেই কটু মিয়া সরকারের দেওয়া ঘরে প্রথম উঠেছেন। উপজেলা প্রশাসন সেই ঘর তাকে হস্তান্তর করেছে। তাই বাস্তুভিটা হীন কটু মিয়ার এখন আনন্দের সীমা নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০২১
এনইউ/আরআইএস