খুলনা: ‘প্রায় ১০ বছর আগে জায়গা কিনে বসতি করছি। তখন রাস্তা দেখে জমি কিনি।
বুধবার (৬ জানুয়ারি) খুলনার রূপসা উপজেলার ১ নম্বর আইচগাতি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দেয়ারা গ্রামের বাসিন্দা ইশারুল আক্ষেপ করে এসব কথা বলেন।
দেয়ারার ভোরের বাজারের পূর্ব দিকে সরদার বাড়ির সামনের চলাচলের ৩২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৬ ফুট প্রস্থের রাস্তা বন্ধ করা দেওয়ায় প্রায় ২৫টি পরিবার অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।
আইচগাতি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলমগীর মল্লিক ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে রাস্তাটি বন্ধের অভিযোগ করছেন প্রতিবেশীরা। রাস্তা বন্ধ করায় পরিবারগুলো প্রায় ২ মাস ধরে মহা বিড়ম্বনায় পড়েছে।
ইশারুল বলেন, ‘আমার ১২ বছরের এক প্রতিবন্ধী সন্তান রয়েছে। ওর শরীর অনেক ভারী। প্রায়ই অসুস্থ থাকে ও। ওকে মাঝে মধ্যে ডাক্তার খানায় নিয়ে যেতে হলে ঘাড়ে করে নিয়ে যেতে হয়। এটা অনেক কষ্টকর। এ যুগেও এ ধরনের আচরণ করে মানুষ, তা ভাবা যায় না। জাহেলিয়াতের যুগের মতো আচরণ করছে তারা। আমরা যে কী মানবেতর জীবনযাপন করছি, তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। ’
আক্তার নামে অপর এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, আমাদের কথা বলার জায়গা নেই। ভ্যান চালিয়ে খাই। অনেক হাত-পা ধরেছি কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। ওরা দাবি করছে রাস্তার জায়গা ওদের। রাস্তার ওপর ১০/১০ ইঞ্চি পিলার পুতে রেখেছে। গাছ ফেলে রাস্তা আটকে রেখেছে। মানুষ মরলে লাশ নিয়ে যাওয়ার মতো জায়গা নেই। রাস্তাটি ইউনিয়ন পরিষদের তা তারা মানতে রাজি না। ’
ওই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী ইউসুফ বলেন, ‘১০০ বছরের পুরানো রাস্তা এটি। আবু মল্লিকের ছেলে মনিরুল মল্লিক, জাহাঙ্গীর মল্লিক ও আলমগীর মল্লিক এখন রাস্তাটি নিজেদের বলে দাবি করে রাস্তা আটকে দিয়েছেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবাইকে হুমকি দিচ্ছেন কেউ রাস্তা দিয়ে গেলে তার পা ভেঙে দেবে। এ কারণে আমরা আশপাশের বিভিন্ন বাগান দিয়ে যাতায়াত করছি। বিকল্প কোনো রাস্তা না থাকায় ২৫টি পরিবারের সদস্যরা বেকায়দায় পড়েছেন। ’
অবরুদ্ধ এসব পরিবারের সদস্যরা বলেন, ‘এখানের প্রায় সবাই খেটে খাওয়া দিনমজুর। সবাই শান্তিপ্রিয় গরিব মানুষ। যারা রাস্তাটি বন্ধ করেছেন, তারা স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা। হঠাৎ করে তারা তাদের জমি দাবি করে রাস্তাটি দখল করে নেন। এ কারণে চলাচল করতে পারছি না আমরা। ’
অভিযুক্ত আলমগীর মল্লিক বাংলানিউজকে বলেন, ‘সম্পূর্ণ রাস্তাটি হচ্ছে আমাদের জায়গার ওপর। আমাদের পেছনের লোকজন এ রাস্তার ওপর দিয়ে চলাচল করছিল। তারা এখন আমাদের রাস্তা দেখিয়ে তাদের জমি বেশি দামে বিক্রি করছে। আমি তাদের বলেছি তোমরা ৬ ফুট জায়গা দাও, আমি ২ ফুট জায়গা দিয়ে ৮ ফুট রাস্তা করি। যাতে পরে এ রাস্তা নিয়ে কোনো সমস্যা না হয়। ’
আইচগাতি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক আশরাফুজ্জামান বাবুল বাংলানিউজকে বলেন, ‘রাস্তার জায়গা তাদের, এটা ঠিক। কিন্তু জনগণের চলাচলের জন্য তাদের পরিবারের সদস্যরা দিয়ে দিয়েছিল। এ কারণে আমার আগের চেয়ারম্যান প্রায় ১০ বছর আগে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে রাস্তায় ইটও বসিয়ে দেন। এখন সে রাস্তা কেউ নিজের বলে দাবি করতে পারে না। ’
অন্যদিকে, রূপসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন আক্তার বাংলানিউজকে জানান, রাস্তা আটকে দেওয়ার বিষয়টি তিনি গতকাল জেনেছেন। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০২১
এমআরএম/এফএম