কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রাম জেলার নদ-নদী অববাহিকার চরাঞ্চলগুলোতে বর্ষা মৌসুম ও বন্যার সময় চলাচলের একমাত্র বাহন নৌকা বা কলাগাছের ভেলা হলেও শুকনো মৌসুমে ধু ধু বালুচরের ভেতরে বাঁশের সাঁকো পাড়ি দিয়ে পথ চলতে হয় চরবাসীদের।
ব্রহ্মপুত্র এবং সোনাভরি নদের এমনি একটি দুর্গম জনবসতি রাজীবপুর উপজেলার বিচ্ছিন ইউনিয়নের নাম কোদালকাটি।
শুকনো মৌসুমে নদীর পানি কমে গেলে কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমর পানির কারণে নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় মানুষজনকে।
কোদালকাটি ইউনিয়নটির চারিদিক দিয়ে ব্রহ্মপুত্র ও সোনাভরি নদীর চরাঞ্চলের চকচকে বালুতে ছোট যানবাহন সাইকেল, মোটরসাইকেল, রিকশা, ভ্যান, অটোবাইক চলাচল করতে হয় অন্তত ছোট ছোট ১৫টি বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়ে। চরাঞ্চলবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে স্থানীয়দের সহায়তায় কোদালকাটি চরের বিভিন্ন স্থানে এসব বাঁশের সাঁকো তৈরিসহ ছোট যান চলাচলের জন্য বালুকাময় বিভিন্ন রাস্তায় মাইলের পর মাইল বিছানো হয় কাশিয়া বা খরকুটা।
স্থানীয় কিশোর-যুবকদের সঙ্গে নিয়ে চরাঞ্চলবাসীর সহায়তায় এবং স্বেচ্ছাশ্রমে এসব কাজ পরিচালনা করেন কোদালকাটি ইউনিয়নের একজন মানবিক মানুষ আমিনুর রহমান মাস্টার। প্রায় এক যুগ ধরে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের কল্যাণে স্বেচ্ছাশ্রমে নিজেকে নিয়োজিত রেখে তরুণ-কিশোর-যুবকসহ চরাঞ্চলের অসহায়, দুস্থ, সব শ্রেণির মানুষের মনের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছেন তিনি।
আমিনুর রহমান কোদালকাটি ইউনিয়নের চর সাজাই দাখিল মাদরাসায় শরীরচর্চা শিক্ষক হিসেবে কর্মরত থাকার পাশাপাশি চরবাসীর জন্য নিজের শ্রম ও সামর্থ্য মতো কাজ করে থাকেন। তার কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে তরুণ-কিশোরসহ সহযোগিতার হাত বাড়ান স্থানীয় চরবাসীরা।
কোদালকাটি চরের বাসিন্দা রাজীবপুর ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী সুরাইয়া জাহান, রুবিনা ইয়াসমীন বাংলানিউজকে জানান, প্রত্যন্ত এই চর থেকে কলেজে যাওয়া খুবই কষ্টকর। চরের মধ্য দিয়ে হাঁটু পানি পেরিয়ে যাওয়ার দুর্ভোগ লাঘবে বাঁশের সাঁকোগুলো যাতায়াতের ক্ষেত্রে খুবই কাজে লাগছে।
কোদালকাটি চরের স্থানীয় যুবক রিয়াজুল ইসলাম বাবু বাঁশের সাঁকো তৈরিতে সুবিধার কথা জানিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, স্থানীয়দের সহায়তায় স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরি বাঁশের সাঁকোতে ব্যবসায়ীদের মালামাল পরিবহন ও চরবাসীর যাতায়াতে দুর্ভোগ লাঘব হয়েছে। অথচ ইতোপূর্বে হাঁটু ও কোমর পানি ভেঙে যাতায়াত করতে হতো। পানিতে পড়ে ব্যবসায়ীদের মালামাল নষ্ট হয়ে যেতো।
যাদুরচর আলিম মাদরাসার শিক্ষক এরশাদুল হক বাংলানিউজকে জানান, উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন কোদালকাটি ইউনিয়নটির চতুর্দিকে নদী থাকায় বন্যার সময় পানিবন্দি হয়ে পড়ি এবং শুষ্ক মৌসুমে বালুর চর জেগে ওঠায় যাতায়াতের অনেক কষ্ট হয়। এই দুর্ভোগ লাঘবে আমিনুর মাস্টারসহ স্থানীয় মানুষের নিজস্ব অর্থ ও সহায়তায় স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা এবং ছোট ছোট বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছে।
চরাঞ্চলবাসীর মণিকোঠায় স্থান করে নেওয়া আমিনুর রহমান মাস্টার বাংলানিউজকে বলেন, মানুষ মানুষের জন্য, দুনিয়াটা স্বল্প সময়ের জন্য। মানুষের কষ্ট দূর হলে আমি শান্তি পাই। মানুষের ভালবাসা পাই এটাই আমার সান্ত্বনা।
কোদালকাটি ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু সাঈদ মধু বাংলানিউজকে বলেন, চরবাসীদের দুর্ভোগ লাঘবে সরকারিভাবে টেকসই একটা সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগের প্রয়োজন। কেননা বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল সরিষা, বাদাম, ধান, মিষ্টি কুমড়া, মসলা ও ডাল জাতীয় ফসলসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। তাই চরের যোগাযোগ নিয়ে ব্যাপক পরিকল্পনা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০২১
এফইএস/আরএ