ফরিদপুর: অসাধু কর্মচারীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ফরিদপুরের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গড়ে উঠেছে একটি দালাল চক্র। ঘুষ দিলে কাজ হয়ে যায় বিদ্যুৎ গতিতে, আর না দিলেই চরম ভোগান্তির শিকার হন পাসপোর্ট আবেদনকারীরা।
তবে পাসপোর্টের কর্মকর্তাদের দাবি, অফিসে কোনো দালাল চক্র নেই। অবশ্য পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, দালাল চক্রকে ধরতে তারা তৎপর। আর ফরিদপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) বলেছেন— লিখিত কোনো অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, দালাল ও অসাধু কর্মচারীদের দৌরাত্ম্যে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পাসপোর্ট করতে আসা সাধারণ মানুষজন। বাড়তি টাকা ছাড়া মিলছে না পাসপোর্ট। একদিকে দালাল চক্রের অর্থ বাণিজ্য, অন্যদিকে পাসপোর্ট অফিসের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনিয়মের কারণে জিম্মি হয়ে পড়েছেন পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা।
দালালরা বলছেন, পড়াশোনা না জানা ও পাসপোর্ট ফরম পূরণে অজ্ঞতা রয়েছে এমন মানুষজনকে সহযোগিতা করে তার বিনিময়ে কিছু অর্থ পান তারা। তবে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ— দালালদের দৌরাত্ম্যে তাদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ।
একাধিক সেবা প্রত্যাশীদের অভিযোগ, দালালদের মাধ্যমে ফরম জমা দিলে সেই ফরম সহজে জমা দেওয়া যায়। দালালদের আশ্রয় না নিলে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা হয়রানি করেন। তারা পাসপোর্ট ফরমে সংকেত ব্যবহার করেন। এছাড়া সেখানে কর্মরত কিছু আনসার সদস্যরাও দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাদের মাধ্যমেই পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা-কর্মচারীরা বাড়তি টাকার ভাগ পান।
পাসপোর্ট করতে আসা জুয়েল হোসেন নামে একজন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি ব্যাংক ড্রাফটের জন্য ৫ হাজার ৭৫০ টাকা দিয়েছি। এছাড়া তারা আমার কাছ থেকে আরও দেড় হাজার টাকা নিয়েছে। ’
ভুক্তভোগীদের দাবি— ঘুষ না দিলে ফরম পূরণে সব তথ্য ভুলে ভরে যায়, আর ঘুষ দিলে ভুল সহজেই নির্ভুল হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে সালমা নামে আরেকজন বলেন, ‘কোনো দালালের মাধ্যমে না গেলে ফরমে ভুল না থাকলেও হাজারো ভুল ধরে। আর ভুল থাকলে তো কোনো কথাই নেই। '
তবে এসব অনিয়ম অস্বীকার করে পাসপোর্ট অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী বলেন, দালালদের কারও সাথে তাদের অফিসের কেউ জড়িত নয়।
এদিকে, পাসপোর্ট অফিসে দালালদের দৌরাত্মের কথা স্বীকার করে পুলিশ জানায়, পাসপোর্ট অফিসের দালালদের চিহ্নিত করা হয়েছে। গত শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) সেবা প্রত্যাশীকে হয়রানির সময় হাতেনাতে পাঁচ দালালকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ফরিদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক শামীম আহম্মেদ বলেন, ‘দালালদের এ অফিসে ঢোকার কোনো সুযোগ নেই। পাসপোর্ট অফিসের নিয়ম হলো, আবেদনকারী নিজে ফরম পূরণ করবেন, জমা দেবেন এবং নিজে পাসপোর্ট নেবেন। ’
সব অভিযোগ মিথ্যা ভিওিহীন ও মনগড়া অসত্য তথ্য দাবি করে শামীম আহম্মেদ বলেন, আমার এ অফিসে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) হয় না। এছাড়া, প্রতিদিন এক থেকে দেড়শ ফাইল জমা পড়ে। কেউ কোনো হয়রানির শিকার হন না।
এদিকে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাকিবুল ইসলাম বলেন, পাসপোর্ট অফিসের দালাল চক্রকে ধরতে কাজ করে যাচ্ছে ডিবি পুলিশ। ইতোমধ্যে পাঁচজন দালালকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) জামাল পাশা বাংলানিউজকে বলেন, পাসপোর্ট করতে আসা কেউ হয়রানির শিকার হলে অভিযোগ পাওয়া মাত্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০২২
এসআরএস