ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘পাকিস্তান বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলে এই বাংলাদেশ পেতাম না’

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২২
‘পাকিস্তান বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলে এই বাংলাদেশ পেতাম না’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন

ঢাকা: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের স্বাধীনতার মতোই তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি যদি ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে না আসতেন, পাকিস্তানের সামরিক জান্তারা তাকে হত্যা করলে আমরা এই বাংলাদেশ পেতাম না।

সোমবার (১০ জানুয়ারি) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।

বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো শাহরিয়ার আলম।

আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি ও যুক্তরাজ্যের স্টাডি সার্কেলের সভাপতি সৈয়দ মোজাম্মেল আলী প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর সমালোচকদের কেউ কেউ এখনও বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি শাসকদের গ্রেফতারের সুযোগ না দিয়ে আত্মগোপন করতে পারতেন। আত্মগোপনে থেকে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে পারতেন। যারা এ ধরনের কথা বলেন, তারা আসলে সেই সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা সম্পর্কে জানেন না। আমরা সবাই জানি, বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করেছেন সিংহের মতো, বীরের মতো। তিনি লুকোচুরি পছন্দ করতেন না। তিনি তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘আমি পালিয়ে থাকার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। কারণ আমি গোপন রাজনীতি পছন্দ করি না, আর বিশ্বাসও করি না। ’

মন্ত্রী বলেন, ব্রিটিশ ধাঁচের সংসদীয় গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ছিল বঙ্গবন্ধুর পছন্দ। আত্মগোপন না করে গ্রেফতার হওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল বঙ্গবন্ধুর জীবনের সবচেয়ে সঠিক সিদ্ধান্তের একটি।

ড. মোমেন বলেন, আলোচক সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর আলোচনা থেকে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ইতিহাসের বরপুত্রের গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে আমরা সুনিপুণ ধারণা পেয়েছি। হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণের পরপরই ব্রিটিশ বৈদেশিক দফতরের কর্মকর্তারা রাষ্ট্রীয় অতিথির মর্যাদা দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানান। ব্রিটিশ সরকারের সম্মানিত অতিথি হিসেবে লন্ডনের ক্ল্যারিজেস হোটেলে নিয়ে আসা হয় তাকে। বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতির কথা জেনে হাজার হাজার বাঙালি ‘জয় বাঙলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে লন্ডনের আকাশ-বাতাস মুখর করে তোলে। দুপুরের দিকে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এক মুহূর্তের জন্য আমি বাংলাদেশের কথা ভুলিনি। আমি ধরে নিয়েছিলাম ওরা আমাকে হত্যা করবে। আপনাদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাব না। কিন্তু আমার জনগণ মুক্তি অর্জন করবে। ’

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন লন্ডনে পৌঁছান, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী অ্যাডওয়ার্ড হিথ তখন ছিলেন লন্ডনের বাইরে। বঙ্গবন্ধুর পৌঁছানোর কথা শুনে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি বাতিল করে অ্যাডওয়ার্ড হিথ ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে ছুটে আসেন এবং বঙ্গবন্ধুকে নজিরবিহীন সম্মান দেখান, যা ইতিহাসে বিরল। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ের বাইরে এসে গাড়ির দরজা খুলে ততক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন, যতক্ষণ না বঙ্গবন্ধু গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন। ৮ জানুয়ারি রাতে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে স্বীকৃতির বিষয়টি উত্থাপন করেন।

তিনি বলেন, পররাষ্ট্র নীতি এবং কূটনীতি একটি সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক উভয় ধরনের প্রভাবকের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে এবং সময়ের বিবর্তনে বিকশিত হয়। কেবল একজন সত্যিকারের দূরদর্শী নেতাই এই উভয় ধরনের চাহিদাকে একত্রিত করে সফলভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারেন। সৌভাগ্যক্রমে, প্রতিষ্ঠার সূচনায় বাংলাদেশ সত্যিকারের একজন দূরদর্শী নেতা পেয়েছিল যিনি আমাদের পররাষ্ট্র নীতির মূলভিত্তি গড়ে দিয়েছিলেন। বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে তিনি বিশ্বাস রেখেছিলেন ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও প্রতি বিদ্বেষ নয়’-এই কালোত্তীর্ণ মূলমন্ত্রে। জাতির পিতা জীবদ্দশাতেই মূল্যবোধ এবং আদর্শভিত্তিক পররাষ্ট্র নীতির প্রচলন করেছিলেন যা যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও  প্রশংসা এনে দিয়েছিল। স্বাধীনতা লাভের খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা বিশ্বের অধিকাংশ দেশের স্বীকৃতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্র নীতি জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতেও প্রশংসিত হয়েছিল। বাংলাদেশ খুব অল্প সময়ের মধ্যেই একটি স্বতন্ত্র সার্বভৌম স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসন পেয়েছিল। বঙ্গবন্ধু হিমালয়ের মতো উঁচু হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বিশ্ব নেতৃত্বের মঞ্চে। বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশ নামের প্রতিশব্দ। দুর্ভাগ্যক্রমে, আমরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হারানোর মধ্য দিয়ে সেই গতিপথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গিয়েছিলাম। ‘সোনার বাংলা’ আরও অনেক আগেই আমরা পেতে পারতাম যদি বঙ্গবন্ধুকে আমরা রক্ষা করতে পারতাম।

তিনি বলেন, আজ বঙ্গবন্ধু নেই। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, তার রক্ত যার ধমনীতে, যে রক্ত আপসহীন, যে রক্ত পরাভব মানে না, যে রক্ত হাসিমুখে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে জানে, সেই রক্তের উত্তরাধিকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত সরকার অর্থনৈতিক মুক্তি এনে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ। বাংলার মানুষকে জাতির পিতা যেমন স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যাও তেমনি আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন এবং রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সম্ভাবনাময় প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করে জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ গঠনে দলমত নির্বিশেষে সবাইকেই আমরা এ মহতী কর্মের মহান ব্রতে শামিল করতে সক্ষম হব।

বাংলাদেশ সময়: ২০০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২২
টিআর/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।