ঢাকা: কল্যাণধর্মী রাষ্ট্র হতে হলে বাংলাদেশকে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জোর দিতে হবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ছাড়া এ সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিন দক্ষিণ এশিয়া বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) এ ওয়েবিনারের আয়োজন করে।
আর্টিকেল নাইনটিন দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সলের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক শেখ মো. মনিরুজ্জামান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সহকারী পরিচালক এবং টেলিভিশন সংবাদ পাঠিকা তামান্না মুস্তারী মৌ, এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর প্রশাসনিক কর্মকর্তা বাহাদুর রইচুর রহমান এবং ট্রান্সজেন্ডার অধিকারকর্মী ও ‘সম্পর্কের নয়া সেতু’র সভাপতি জয়া সিকদার। আর্টিকেল নাইনটিনের পরামর্শক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং আর্টিকেল নাইনটিনের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার মরিয়ম শেলি সংস্থার কার্যক্রম তুলে ধরেন।
ওয়েবিনারে সরকারি-বেসরকারি অংশীজন, জাতীয় ও তৃণমূলে কর্মরত সাংবাদিক, লৈঙ্গিক অধিকারকর্মী, এনজিও ও নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
মূল প্রবন্ধে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি বলেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা হলো সুশাসন তথা আইনের শাসনের মূল উপাদান। বাংলাদেশে আইন আছে কিন্তু আইনের প্রয়োগ কম, অপপ্রয়োগ বেশি। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, তথ্য অধিকার আইন একটি জনকল্যাণমূলক আইন। অথচ তথ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিতে এই আইনের কার্যকর ভূমিকা ও প্রভাব নেই। বিপরীতে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নাগরিকদের ডিজিটাল সুরক্ষা নিশ্চিত করবে ভাবা হয়েছিল। কার্যত দেখা গেলো- এই আইনের কারণে নাগরিকদের; বিশেষ করে সাংবাদিকদের মতপ্রকাশের অধিকার খর্ব হচ্ছে।
তিনি বলেন, কার্যকর সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে আইন ও নীতি প্রণয়নে স্বচ্ছতা এবং তা বাস্তবায়নে জবাবদিহিতার বিকল্প নেই।
অনুষ্ঠানে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক শেখ মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্র হওয়ার দিকে এগুচ্ছে। তাই সব স্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় সরকারের প্রচেষ্টাও অব্যাহত আছে। তথ্য অধিকার আইন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণার বাস্তবায়ন তারই অংশ। আরও কার্যকরভাবে সেবা দেওয়ার জন্য এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর কার্যক্রম ’অটোমেশন’ করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সহকারী পরিচালক ও টেলিভিশন সংবাদ পাঠিকা তামান্না মুস্তারী মৌ বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থায় স্কুল-কলেজে ভর্তি কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে সরকার সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে অনলাইনে আবেদন শেষে ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে বিতর্কমুক্তভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা হচ্ছে।
এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর প্রশাসনিক কর্মকর্তা বাহাদুর রইচুর রহমান বলেন, স্বচ্ছতার জন্য সঠিক তথ্য পাওয়াটা জরুরি। নির্বাচনের আগে অনেক সময় অপপ্রচার ও অপতথ্য ছড়ায়। তাই সঠিক তথ্য সরবরাহের মাধ্যমে গণমাধ্যম কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
ট্রান্সজেন্ডার নারী ও সম্পর্কের নয়া সেতুর সভাপতি জয়া সিকদার বলেন, লৈঙ্গিক পরিচয় পরিবর্তনের কারণে ট্রান্সজেন্ডার মানুষেরা দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, শিক্ষা সনদ এবং জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তির ক্ষেত্রে হয়রানি ও নিগ্রহের শিকার হন। ট্রান্সজেন্ডার, ট্রান্সম্যান, ট্রান্সওমেন ও হিজড়া জনগোষ্ঠী নিয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে। এ জনগোষ্ঠীর মানুষেরা সমাজে নানাভাবে পিছিয়ে আছে।
অনুষ্ঠানে আর্টিকেল নাইনটিন দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে সবার অংশগ্রহণে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের কথা বলা হয়েছে। কোনো জনগোষ্ঠীকে পিছিয়ে রেখে একটি দেশ এগুতে পারে না। এসডিজি অর্জন করতে চাইলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২২
টিআর/আরআইএস