ঢাকা: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি ও সমবায় বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য দুরন্ত বিপ্লবকে হত্যা করা হয়েছে দাবি তুলে তার মৃত্যু রহস্য উন্মোচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘সদয় দৃষ্টি’ কামনা করেছেন স্বজনেরা।
পাশাপাশি সাবেক এই ছাত্রনেতার দেশ ও দলের প্রতি ত্যাগের কথা বিবেচনায় নিয়ে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা জানানোর দাবিও উঠেছে পরিবারের পক্ষ থেকে।
শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত প্রয়াত দুরন্ত বিপ্লবের রুহের মাগফেরাত কামনায় স্মৃতিচারণ ও মিলাদ মাহফিলে পরিবারের পক্ষ থেকে এমন দাবি তোলা হয়।
স্মরণ সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মারুফা আক্তার পপি বলেন, “দুরন্ত মনে প্রাণে বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসতেন এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন। ”
দুরন্ত বিপ্লবের সঙ্গে দীর্ঘদিনের পরিচয়ের কথা তুলে ধরে সাবেক এই ছাত্রনেতা সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের একটা খাঁটি সন্তান ছিলেন জানিয়ে পপি বলেন, আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করি, আমরা যারা শেখ হাসিনার কর্মী, আমরা সবাই যদি মন-মানসিকতায় দুরন্ত বিপ্লবের মতো হতে পারি, আমি মনে করি বাংলাদেশ আর কোনওদিনই পিছিয়ে থাকবে না।
এসময় প্রয়াত স্বামীর স্মৃতিচারণ করে দুরন্ত বিপ্লবের স্ত্রী, ঢাকা উদ্যান সরকারি মহাবিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শারমিন তামান্না বলেন, “(দুরন্ত বিপ্লব) আয়ুর্বেদ কলেজে ভর্তি হয়েছে, স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশের মানুষ সুস্থভাবে বেঁচে থাকুক। সে নিজেও সুস্থতা চেয়েছিল, দীর্ঘ জীবন চেয়েছিল। অথচ তাকে নির্মমভাবে চলে যেতে হলো। ”
“তাও কখন? যখন তার প্রিয় দল ক্ষমতায়। ” যোগ করেন তিনি।
স্বামীর কাছে অনেক সময় নিজের প্রত্যাশার কথা জানাতেন জানিয়ে তার দেওয়া জবাবের কথা তুলে ধরে শারমিন তামান্না বলেন, “আমাকে শুধু বলতো যে, আমি কিছু পাওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ করি না। আমি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি, তাই আওয়ামী লীগ করি। ”
শারমিন তামান্না বলেন, “আমি চাইবো যে এই শিশুর মতো সরল ভালো মানুষটার এই অপঘাতে মৃত্যু, তাকে নদীতে উপুড় হয়ে ভেসে থাকতে হলো..! এর বিচার চাই এবং যারা অপরাধী, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি, যেন তিনি একটু সদয় দৃষ্টি দেন। আমরা যেন দুরন্ত বিপ্লবের হত্যাকারীকে খুঁজে শাস্তি দিতে পারি। ”
দুরন্ত বিপ্লবের ছোট বোন শাশ্বতী বিপ্লব বলেন, “ভাইয়ার যে জীবন, তার যে কন্ট্রিবিউশন এই দেশের প্রতি এবং আওয়ামী লীগের প্রতি, সে একটা রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ডিজার্ভ করে। এটা আমরা তাড়াহুড়ায় করতে পারি নাই। যদিও আমরা কবর দিয়ে ফেলেছি, তারপরও আমি চাই প্রধানমন্ত্রী বা সরকার ভাইয়ার জন্য রাষ্ট্রীয় সম্মানের ব্যবস্থা করুক। ”
স্মরণ সভায় দুরন্ত বিপ্লবের পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সহপাঠী, নিজ মতাদর্শের রাজনৈতিক সহকর্মীদের পাশাপাশি ভিন্ন মতাদর্শের রাজনৈতিক সহকর্মীরাও উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক ও দুরন্ত বিপ্লবের বন্ধু সিতি সালমা খান বলেন, “দুরন্ত কত বড় মানুষ ছিল সেই বক্তব্যে আমি যাব না। মায়ের কাছে তার সন্তান, সবসময় সন্তানই। বড় হবার প্রয়োজন নেই। বন্ধুর কাছে তার বন্ধু, কেবল বন্ধুই। বড় হবার প্রয়োজন নেই। বোনের কাছে তার ভাই, শুধু ভাই-ই। ভাইয়ের কাছে তার ভাই, ভাই-ই। একটা সাধারণ মৃত্যু তার অধিকার। সেই অধিকার থেকে দুরন্ত বঞ্চিত হয়েছে। ”
“আমরা এর শেষটা দেখে নেব। আমরা শেষ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকবো যে, কে তাকে আঘাত করেছে? সেই হাতটা আমি গুড়িয়ে দিতে চাই। ” বলেন তিনি।
প্রায় দুই যুগ আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন দুরন্ত বিপ্লব। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি ও সমবায় বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য দুরন্ত বিপ্লব কয়েক বছর ধরে কেরানীগঞ্জের বাস্তা এলাকায় সোনামাটি অ্যাগ্রো ফার্ম নামে একটি কৃষি খামার চালাচ্ছিলেন।
গত ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় কেরানীগঞ্জ থেকে মোহাম্মদপুরে মায়ের বাড়ি আসার পথে তিনি নিখোঁজ হন। কোথাও খোঁজখবর না পেয়ে দু’দিন পর ৯ নভেম্বর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে তার পরিবার।
এর মধ্যে গত ১২ নভেম্বর বিকালে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পাগলা ঘাট এলাকাস্থ বুড়িগঙ্গা থেকে ভাসমান অবস্থায় একটি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে স্বজনরা তাকে দুরন্ত বিপ্লব বলে শনাক্ত করেন।
পুলিশ বলছে, ৭ নভেম্বর তারা পুরান ঢাকার সোয়ারীঘাটের কাছে বুড়িগঙ্গায় নৌকা থেকে একজনের পড়ে যাওয়ার খবর শুনেছেন।
ময়না তদন্তকারী চিকিৎসকের ধারণা, দুরন্ত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। আর তার পরিবার সেটাই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে এর বিচার দাবি করছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫০, নভেম্বর ১৯, ২০২২
এনবি/এনএস