দেরিতে হলেও চীনারা এখন অনুধাবন করতে পেরেছে যে, ল্যাংগুয়েজ ইজ দ্য কি অব কমিউনিকেশন্স। আর তাই নতুন প্রজন্মকে ইংরেজিতে দক্ষ করে গড়ে তুলতে সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সে দেশে।
চীনের ব্যস্ততম শহর গুয়াংজু ঘুরে দেখা যায়, সন্ধ্যার পর থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শুরু হয় ইংরেজি শেখার আসর। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ইংরেজি বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। তবে ইংরেজি না জানার কারণে চীনাদের যে খুব একটা বেগ পেতে হচ্ছে তা নয়। এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তির উৎকর্ষ তাদের জন্য আশীর্বাদ। ছোট-বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বল্প শিক্ষিত বা ইংরেজি সম্পর্কে অদক্ষ বিক্রয়কর্মীদের ভরসা উইচ্যাট, গুগল ট্রান্সলেটসহ প্রযুক্তির মাধ্যমগুলো।
গুয়াংজু সিটির সান ইয়ান লি এলাকায় প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুয়াংজু চেন জিজেং মেমোরিয়াল মিডেল স্কুলে ঢুকে দেখা গেল মূল পাঠ্য কার্যক্রমের শেষে দুপুরে শিশুদের ইংরেজি বিষয়ের ওপর বিশেষ পাঠ দেওয়া হচ্ছে। এ সময় লিক্সিয়া নামের এক শিক্ষিকা জানান, চীনের প্রায় প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখন ইংরেজি বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও এ বিষয়ে এগিয়ে আসছে। তাও ইয়ান মিডেল স্কুল নামে নিম্ন মাধ্যমিক একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও একই ধরনের চিত্র দেখা যায়।
জানা গেছে, বিশ্বব্যাপী যোগাযোগের উন্নতির প্রসারে চীন আন্তর্জাতিক ভাষাগত দিক থেকে অনেকখানিই পিছিয়ে রয়েছে। প্রথমদিকে ইংরেজি ভাষা নিয়ে ততটা মনযোগ না দিলেও ক্রমেই চীন সরকার আন্তর্জাতিক ভাষার গুরুত্ব বুঝতে শুরু করেছে। ফলে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ বিষয়টির ওপর বাড়তি মনযোগ দেওয়া হচ্ছে। ফলে তরুণ শিক্ষার্থীরা জ্যেষ্ঠদের চেয়ে ইংরেজিতে কথা বলার দিক থেকে কিছুটা হলেও এগিয়ে।
চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত একাধিক বিদেশি শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চীনা ছেলে মেয়েরা ইংরেজিতে পারদর্শী হয়ে উঠতে বিদেশি শিক্ষার্থী বন্ধুদের সহায়তা নিতে একটুও দ্বিধাবোধ করে না। বরং বিদেশিদের তারা নিজেদের জন্য সহায়ক হিসেবেই বিবেচনা করে থাকে। বিশেষ করে ইংরেজিতে কথা বলার চর্চা করতে তারা বিদেশি সহপাঠীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব আরো জোরদার করে থাকে। এমনকি ইংরেজির প্রতি আগ্রহী চীনা তরুণরা বিদেশিদের খুঁজে খুঁজে বন্ধুত্বের হাত বাড়ায়।
গুয়াংজু সিটির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সন্ধ্যায় বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিশু-কিশোরদের ইংরেজির পাঠ দেওয়া হয়। সান ইয়ান লি এলাকার এমন একটি প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি নিজেদের কার্যক্রম শুরু করেছে। প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ইংরেজি বিষয়ের ওপর কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ইংরেজির ওপর গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটি স্লোগান দিয়েছে, ল্যাংগুয়েজ ইজ দ্য কি অব কমিউনিকেশন্স।
খবর নিয়ে জানা যায়, ইংরেজি ভাষার প্রসার ঘটাতে চীন সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সেগুলো ইতোমধ্যে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। সরকারের শিক্ষানীতির মধ্যে অন্যতম হলো-সিইটি (কলেজ ইংলিশ টেস্ট) পরীক্ষা। অন্য বিষয়ের পাশাপাশি প্রতিটি শিক্ষার্থীকে বিশেষ এ বিষয়েও পাস করতে হবে। বিষয়টি অনেকটা বাংলাদেশের IELTS বা TOEFL -এর আদলে হলেও একটা দিক থেকে তারা এগিয়ে। সেটি হলো বাংলাদেশে এসব বিষয়ের ওপর লিখিত পরীক্ষায় পাস করতে হয়। আর চীনে লিখিত পরীক্ষার পাশাপাশি স্পিকিং টেস্টও জুড়ে দেওয়া হয়। এর ফলে ক্রমেই সে দেশের নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা ইংরেজির ওপর দক্ষ হতে শুরু করেছে।
তবে যারা অশিক্ষিত, কম বা স্বল্প শিক্ষিত তারা জীবনযাপনের ক্ষেত্রে অনেক রকমের কৌশল অবলম্বন করে থাকে। যেমন-একজন বিক্রয়কর্মী সারাক্ষণ সঙ্গে রাখেন ছোট্ট একটি ক্যালকুলেটর। বিদেশি ক্রেতার সঙ্গে দর কষাকষি করতে তাকে আর ইংরেজিতে কথা বলার মতো কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয় না। ক্যালকুলেটরের সঙ্গে শারীরিক ভাষার মিশেলে সে এক অন্য রকমের আনন্দ।
আবার, অনেকে মোবাইল ফোনে উইচ্যাট প্রযুক্তির আশ্রয় নিয়ে থাকেন। যেমন-কোনো বিদেশি ক্রেতা পেলে প্রথমে উইচ্যাটে ওই বিক্রয়কর্মী যুক্ত হন। এরপর বিদেশি ক্রেতা ইংরেজিতে যে বার্তা লিখে পাঠান, চীনা বিক্রয়কর্মী সহজেই স্বয়ংক্রিয় গুগল ট্রান্সলেটের মাধ্যমে সেই বার্তাটিকে চাইনিজ ভাষায় রূপান্তর করে নেন। এভাবেই চীনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদেশি ক্রেতাদের সামাল দেওয়ার চিত্র দেখা গেছে। সে ক্ষেত্রে তাদের জন্য বড় সুবিধা হলো অধিকাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেই ওয়াইফাই সক্রিয় থাকে সারাক্ষণ। যে কোন ক্রেতা ইচ্ছে করলে উন্মুক্ত পার্সওয়ার্ডের মাধ্যমে সে সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন।
চীনারা ভালো ইংরেজি বলতে পারেন না- এ অপবাদ দীর্ঘদিনের। যে কোনো দেশের মানুষ ভ্রমণ বা ব্যবসার কাজে চীনে পাড়ি জমালে সবার আগে ভাষা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এর কারণই হলো চীনা নাগরিকদের ইংরেজির ওপর অদক্ষতা। সেই অবস্থা থেকে কাটিয়ে উঠতে চীন সরকারের নানা পদক্ষেপ এবং বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন উদ্যোগ ধীরে ধীরে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। আর নতুন প্রজন্মকে আন্তর্জাতিক ভাষার ওপর দক্ষ করে গড়ে তুলতে চীনের সরকারি বেসরকারি সব উদ্যোগের সুফল নিকট অতীতেই পাওয়া যেতে পারে।
লেখব: জয়নাল আবেদীন, news.joynal@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৯ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৫
জেডএম