একটি বিষয়ে আমরা সবাই কি কমিটেড হতে পারি? অন্তত একটি ব্যাপারে আমাদের সবার সিদ্ধান্ত হতে পারে এক এবং অভিন্ন। পরস্পর পরস্পরের কাছে অন্তত একটি ক্ষেত্রে আমদের অঙ্গীকার এমন হতে পারে যে, মানুষের জীবন বাঁচাতে আমরা সবাই এক।
কেননা গেল দু’একদিনের পাঁচ সাতটা ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেভাবে সাধারণ মানুষের মাঝে ভীতি সৃষ্টি করেছে, অমানবিকতার অবিশ্বাস্য চূড়ান্ত রূপ দেখেছে মানুষ এবং মিটফোর্ডে পাথর মেরে নৃশংসভাবে মেরে ফেলার ঘটনা ধরে অনুরূপ আরও কিছু ফুটেজ ছড়িয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কোনটা সাম্প্রতিক; কোনটা পুরানো তা নিয়ে সন্দেহ রয়ে গেছে যথেষ্ট। এবং এগুলোর অধিকাংশ বিগত স্বৈরশাসকের সময়ে দলীয় ক্যাডারদের দ্বারা টর্চারের শিকার হওয়া নানা স্তরের ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, অনলাইনে সরকারের সমালোচনাকারী, রাজনীতিকসহ নানা স্তরের মানুষের ওপর চলা টর্চারের কোনো কোনো ফুটেজ চলে আসছে; যেখানে সুকৌশলে হেডিং দেওয়া হচ্ছে যে, বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত কোনো নেতা চাঁদার দাবিতে এমন করছেন। অনেকেই না বুঝে শেয়ার দিচ্ছেন। আর প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের লোকজন একের পর এক ফেক আইডি খুলে অপপ্রচারের ঝুঁড়ি খুলে বসেছেন।
এবং দিনকে দিন এই ষড়যন্ত্রের মাত্রা বাড়ছে; যা রাষ্ট্রের জন্য কেবল ক্ষতিকর নয়; অদূর ভবিষ্যতে আমরা ভয়াবহ রকমের পরিস্থিতির মধ্যে পতিত হতে যাচ্ছি।
যাইহোক মূল প্রসঙ্গে আসি। এভাবে পাথর মেরে, কুপিয়ে প্রকাশ্যে যদি হত্যার চর্চা চলতে থাকে এবং এসব অপরাধ দমনে সরকারের সক্ষমতা এবং আন্তরিকতার ঘাটতি যদি গোটা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়; সে ব্যাপারে রাজনৈতিক প্রতিনিধি, সমাজ সচেতন মানুষ, সাংবাদিক, গবেষক, বিশ্লেষক তথা সমাজ ও রাজনীতি নিয়ে যারা চর্চা করেন; তাদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নেওয়ার কর্মপন্থা ঠিক করতে পারে।
তবে শুরুতেই যেটা বলে এসেছি। রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা ছাড়াই আমরা সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে পদক্ষেপ নিলে তা খুব সহজে করা সম্ভব। একটি সিদ্ধান্ত; কেবল একটি অঙ্গীকার; যেটা আমরা শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে, শাহাবাগের কিংবা অনলাইনে একটি ইভেন্ট খুলে সবাই একই সময়ে শপথ নিতে পারি। অঙ্গীকারনামার প্রয়োজনীয় তথ্য ইনপুট দিতে পারি। এবং নিঃসন্দেহে এই ঘটনা নির্মূল করে দিতে পারব আতংক সৃষ্টির মিশন নিয়ে যারা মাঠে নেমেছেন।
এবং এই অরাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম যাত্রার শুরুতে আমরা সবাই কমিটেড থাকব যে, অন্তত একটি ব্যাপারে সবার সিদ্ধান্ত এক। পরস্পর পরস্পরের কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ যেকোন পরিস্থিতিতে ‘মানুষের জীবন বাঁচানো’।
যখন যেখানে যে অবস্থায় থাকি না কেনো; চোখের সামনে কোনো ধরনের নির্মমতা দেখলে যেমন কাউকে পেটানো হচ্ছে; প্রকাশ্যে নিষ্ঠুরতা, বর্বরতা, নির্মমতা, অমানবিকতা তথা অমানুষগুলো সংঘবদ্ধ হয়ে মেরে ফেলছে একজন সত্যিকারের কোনো মানুষকে; অথবা তিনি নানা অপরাধে সম্পৃক্ত থাকলেও কাউকে শাস্তি দেওয়ার অধিকার আইন আমাকে দেয়নি।
আমরা সাধারণ মানুষ মিটফোর্ডের মতো কোনো ঘটনা অদূর ভবিষ্যতে চোখের সামনে দেখামাত্রই কাছাকাছি থাকা প্রত্যেকে চিৎকার করে উঠব উচ্চকণ্ঠে। একসাথে। অবশ্যই নরপশুদের অবস্থান, সঙ্গে থাকা অস্ত্রের ধরন, আশেপাশে থাকা লোকগুলোর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে দ্রুত অনুমান করে নেওয়ার চেষ্টা করব যে, ওরা আসলে উপস্থিত আছে কতজন। তবে কোনো ক্ষেত্রেই তাদের সংখ্যা জনগণের চেয়ে বেশি কখনও নয়।
পরিস্থিতি দ্রুততার সঙ্গে বিশ্লেষণ করে আমরা সবাই চিৎকার করতে করতে যদি এগিয়ে যেতে পারি নির্মমতার শিকার হওয়া নাম না জানা, অচেনা কিংবা চেনা; যে স্তরের এবং বয়সের মানুষ তিনি হোক না কেন; তাকে উদ্ধার করা এবং জীবন বাঁচানো হবে মানুষ হিসেবে আমাদের প্রথম অঙ্গীকার।
এটাই আমার ধর্ম; এটাই আমার পরিচয়। এবং এই সংকল্প, সাহস; বিশেষ করে ঘটনার প্রেক্ষিতে উপস্থিত সকলের মধ্যে যে মনোসংযোগ ঘটতে শুরু করবে মুহূর্তেই; একই সরল রেখায়; সেটির আত্মবিশ্বাস থেকেই রুখে দেওয়া যাবে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু। সকল অনাচার।
অবশ্যই সফলতা আসবে; সমাজ বদলে যাবে; অশান্তি দূর হবে আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতায় এবং যেটি করব বলে আমরা ইতিপূর্বে একে অপরের কাছে দিয়েছি—নৈঃশব্দ্যের প্রতিশ্রুতি।
এবং মানুষ মারার বীভৎস ঘটনার একটিও যদি আমরা থামাতে পারি আগামীতে কোনো এক ঘটনায়; বিশ্বাস করুন সেই দৃষ্টান্ত আমাদের সাহস ও মনোবলকে এতটাই দৃঢ় করে তুলবে, এতটাই শক্তির বিস্ফোরণ ঘটাবে; যা ভীত সন্ত্রস্ত করে তুলবে দুর্বৃত্তদের। বিনষ্ট হবে সকল ধরনের ষড়যন্ত্র, প্রতিশোধ এবং প্রতিহিংসার চর্চা। অন্তত প্রকাশ্যে কাউকে মেরে ফেলার মতো পৈশাচিকতা দেখতে হবে না আর একটিও।
লেখক :সাংবাদিক ও অপরাধ বিশ্লেষক