ক্যালিফোর্নিয়া এখনো থমথমে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ‘আইস’-এর অভিযান নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়া এখনো স্বাভাবিক হতে পারছে না।
ক্যালিফোর্নিয়ায় সাম্প্রতিক একটি আইস অভিযান এবং টেক্সাসে বন্দুক হামলার ঘটনার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই নির্দেশনার ফলে অভিবাসন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ক্ষমতা বহুগুণে বেড়ে গেছে এবং বেড়ে গেছে আন্দোলনমুখী মানুষের ও মানবাধিকার সংস্থার সংগ্রাম।
সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়ার বিভিন্ন স্থানে আইস অভিযান চলাকালে ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে পড়তে হয় এজেন্টদের। এক পর্যায়ে গ্লাসহাউস ফার্মস নামের একটি কৃষি খামারে অভিযানের সময় একজন কর্মী ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন এবং পরে মারা যান। এই ঘটনার পর রাজ্যের বিভিন্ন অংশে আইসবিরোধী বিক্ষোভ আরও তীব্র হয়ে ওঠে।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ১২ জুলাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করে ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেছেন, “আমাদের সাহসী আইস এজেন্টদের যদি আক্রমণ করা হয়, তারা যেন আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব উপায় ব্যবহার করতে পারেন। ”
তিনি আরও বলেন, “যারা আইন ভাঙছে এবং এজেন্টদের ওপর হামলা চালাচ্ছে, তাদের কোনো রেহাই দেওয়া হবে না। ”
এই নির্দেশনার ফলে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের অধীনে থাকা ‘আইস’ এখন যেকোনো হামলা প্রতিরোধে আগের চেয়ে বেশি স্বাধীনতা পাবে। একইসঙ্গে সংস্থাটির জন্য অতিরিক্ত বাজেট ও জনবল বৃদ্ধির বিষয়েও প্রশাসন আলোচনা করছে।
এদিকে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসোম ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করে প্রতিবাদের মুখে বলেছেন, “এই ধরনের নির্দেশনার মাধ্যমে আমেরিকায় আইনের শাসন দুর্বল হবে এবং সংখ্যালঘু ও অভিবাসী সম্প্রদায় আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। ”
তবে এই কঠিন সংকটে ফেডারেল আদালত ইতোমধ্যে ক্যালিফোর্নিয়ার কয়েকটি অঞ্চলে ‘অনিয়ন্ত্রিত ও জাতিগত ভিত্তিতে’ আইস কর্তৃক অভিযান বন্ধে একটি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ জারি করেছে। এটা একটি বড় পদক্ষেপ হতে পারে অহিংস পরিবেশ সৃষ্টির ক্ষেত্রে।
এদিকে অ্যাপলের নতুন চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন সবিহ খান। বিদায়ী সিওও জেফ উইলিয়ামস এ বছরের শেষ দিকে অবসর নেওয়ার পর তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। এই রদবদলটি অ্যাপলের দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পিত উত্তরাধিকার পরিকল্পনার একটি অংশ।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত সবিহ খান প্রায় ৩০ বছর ধরে অ্যাপলে কর্মরত। সর্বশেষ তিনি অ্যাপলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অব অপারেশন্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এই পদে থাকাকালীন তিনি অ্যাপলের বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনের নেতৃত্ব দিয়েছেন—যার মধ্যে পরিকল্পনা, ক্রয়, উৎপাদন এবং পরিবহন বিষয়ক দায়িত্ব ছিল। আর আজ তিনি বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান প্রযুক্তি কোম্পানির দ্বিতীয় শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত।
অ্যাপল সিইও টিম কুক তাকে ‘একজন মেধাবী কৌশলবিদ’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, অ্যাপলের উৎপাদন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা, যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন সম্প্রসারণ এবং কার্বন নিঃসরণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমানোর ক্ষেত্রে খানের অবদান অসামান্য। টিম কুক আরও বলেন সাবিহ একজন অসাধারণ কৌশলবিদ। অ্যাপলের সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান স্থপতি তিনি। আধুনিক প্রযুক্তি ও পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়েও তিনি অনেক দূর এগিয়ে গেছেন। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি নেতৃত্ব দেন মনের গভীরতা ও মূল্যবোধ দিয়ে।
উত্তর প্রদেশের মোরাদাবাদে জন্ম নেওয়া খান সিঙ্গাপুর হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান। তিনি টাফটস বিশ্ববিদ্যালয় ও রেনসেলার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিগ্রি অর্জন করেন। অ্যাপলে যোগদানের আগে তিনি জিই প্লাস্টিকসে কাজ করতেন।
সাবিহ খানের এই পদোন্নতি শুধু অ্যাপলের অভ্যন্তরীণ নেতৃত্ব বিকাশের দৃষ্টান্ত নয়, বরং বিশ্ব প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতিরও প্রতিফলন বলে ধরা হচ্ছে। এবং অনেকেই মুসলমানদের এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টি সামনে আনতে চাইছেন। আসলে সাবিহ খানের এই পদোন্নতির পেছনে রয়েছে তার ধারাবাহিক সাফল্যের সঠিকভাবে মূল্যায়ন। অ্যাপলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো যে মানুষগুলোকে পদোন্নতি দেয়, তা কোনো দেশ বা ধর্মের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই বলেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস। সাবিহ খানকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই আমার পক্ষ থেকে, সত্যিই একজন মানুষের জীবনে এটা বিরল অর্জন তাতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই।
মাহবুব আহমেদ, লেখক, উদ্যোক্তা ও মানবাধিকার কর্মী