ঢাকা: কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে জুলাই বিপ্লবীসহ দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামের যোদ্ধাদের স্মরণ করে জামায়াতে ইসলামীর নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম বলেছেন, এই আত্মত্যাগই বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য আলোর পথ দেখাবে।
বুধবার (২৮ মে) সকালে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে তাকে বরণে জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত সংক্ষিপ্ত সভায় আজহার এ কথা বলেন।
এদিন সকাল ৯টা ৫ মিনিটে আজহারকে কারামুক্তি দেওয়া হয়। তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের (কেরানীগঞ্জ) তত্ত্বাবধানে শাহবাগে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। কারামুক্তি পেয়ে ওই সভার মঞ্চে যান তিনি।
আজহারুল ইসলাম বলেন, প্রায় ১৪ বছর পর আমি আজ ছাড়া পেলাম। আমি এখন মুক্ত। আমি এখন স্বাধীন, আলহামদুলিল্লাহ। আমি এখন স্বাধীন দেশের একজন স্বাধীন নাগরিক। আল্লাহ যদি তৌফিক দেন, অবশ্যই বাকি জীবন আপনাদের সঙ্গেই থাকবো ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, এই মুক্তি শুধু আমার নয়, এটি একটি দীর্ঘ লড়াইয়ের ফল। একটি অন্যায় ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় আমাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সত্য চিরকাল চাপা থাকে না। আজ সেই সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
আজহারুল ইসলাম বলেন, আমি সর্বপ্রথম আদালতকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তারা দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। তবে এটা সত্য যে, এতদিন দেশে ন্যায়বিচার ছিল না। বিচার ব্যবস্থাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। আমাদের অনেক ভাইকে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে দুনিয়া থেকে বিদায় করা হয়েছে।
আইনজীবীরা দীর্ঘ সময় ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন উল্লেখ করে আজহারুল ইসলাম বলেন, তারা সঠিক তথ্য-উপাত্ত, দলিল ও যুক্তি উপস্থাপন করে প্রমাণ করেছেন, এই মামলায় কোনো ভিত্তি ছিল না। আল্লাহর রহমতে আমি আজ মুক্ত, কিন্তু যারা নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন, তাদের আর ফেরানো যাবে না।
৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই জুলাইয়ের মহাবিপ্লবীদের। যাদের রক্ত, ঘাম আর আন্দোলনের ফসল আজকের এই মুক্তি। তাদের কারণেই ৫ আগস্ট দেশের জনগণ এক অত্যাচারী স্বৈরশাসকের পতন ঘটিয়েছে। যারা ১৫ বছর ধরে রাজপথে নিজেদের রক্ত ঢেলে জনগণের ঘাড়ে চেপে বসা একদলীয় শাসনের অবসান ঘটিয়েছেন, তাদের শাহাদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা কামনা করি। এই রক্ত কখনো বৃথা যাবে না। এই আত্মত্যাগই বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য আলোর পথ দেখাবে।
জামায়াতের এই নেতা বলেন, আগামী দিনে জনগণের সঙ্গে আছি। আমি জানি, এই মুক্তি আমার ওপর আরও অনেক বড় দায়িত্ব নিয়ে এসেছে। আমি কথা দিচ্ছি, আল্লাহ যদি আমাকে তৌফিক দেন, তবে জীবনসায়াহ্ন পর্যন্ত জনগণের অধিকার, ন্যায়বিচার ও ইসলামী মূল্যবোধের পক্ষে লড়াই চালিয়ে যাব। আমি আপনাদের সঙ্গেই থাকবো ইনশাআল্লাহ। আমরা কখনো অন্যায়ের কাছে মাথানত করিনি, করবোও না। আমাদের আন্দোলন থেমে নেই, থামবেও না। আজ থেকে আবার নতুনভাবে পথচলা শুরু হলো।
সংক্ষিপ্ত এ পথ সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর পর্যায়ের নেতারা।
এর আগে মঙ্গলবার (২৭ মে) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ টি এম আজহারুল ইসলামের আপিল মঞ্জুর করে তাকে খালাসের রায় দেন।
রায়ে সর্বোচ্চ আদালত ২০১৪ সালে এ টি এম আজহারের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায় ও মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে আপিল বিভাগের দেওয়া আগের রায় বাতিল ঘোষণা করেছেন। এ ছাড়া অন্য কোনো মামলা না থাকলে তাকে অবিলম্বে মুক্তি দিতেও বলা হয়।
২০১২ সালে ঢাকার মগবাজারের বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন জামায়াতের তখনকার সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম। তখন থেকেই তিনি কারাবন্দি ছিলেন।
গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আজহারকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে আসা হয়। এর কিছুদিন পর তাকে কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এমএমআই/এইচএ/