কুমিল্লা: বিএনপির ডাকা অবরোধের সপ্তম দিন চলছে। অথচ বিএনপি-জামায়াতের সিনিয়র নেতাদের দেখা মিলছে না কুমিল্লার রাজনৈতিক মাঠে।
জামায়াত-শিবিরের কিছু নেতা কারাগারে এবং মামলা-গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেকে। কুমিল্লা (দক্ষিণ) জেলা বিএনপির সভাপতি বেগম রাবেয়া চৌধুরী অসুস্থ। মাঠে দেখা মিলছে না কুমিল্লা (দক্ষিণ) জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী আমিন উর রশীদ ইয়াছিন ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কুকেও।
এছাড়া কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবদলের সভাপতি আমিরুজ্জামান আমিরসহ আরো কয়েকজন দ্বিতীয় সারির নেতা তাদের কর্মীদের নিয়ে কুমিল্লা ক্লাবের উদ্যোগে কক্সবাজার বনভোজনে রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বাংলানিউজকে জানান, ৬ জানুয়ারির অবরোধে জেলা বিএনপি-যুব-ছাত্রদলের কিছু নেতাকর্মী ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার আলেখারচর বিশ্বরোড এলাকায় কিছুক্ষণ অবস্থান করেছিল। পরে পুলিশের ধাওয়ায় তারা মহাসড়ক থেকে চলে যান।
এরপর থেকে তাদের আর মহাসড়কে দেখা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে কুমিল্লা নগরীতে ছোট একটি মিছিল করেই আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছেন, বিএনপির দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির নেতা-কর্মীরা। যেন অনেকটা দায়সারা দায়িত্ব পালন!
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে কুমিল্লা (দক্ষিণ) জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী আমিন উর রশীদ ইয়াছিন নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিয়ে ছিলেন বেশি মনোযোগী। দলের বিভিন্ন আন্দোলন-কর্মসূচিতে স্বল্প সময়ের জন্যই তিনি হাজির হতেন। তবে, এবারের লাগাতার অবরোধ কর্মসূচিতে তার আর দেখা মিলেনি।
কুমিল্লা (দক্ষিণ) জেলা বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কুও বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। ওই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি জোট। দলের নির্দেশনা উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশ নিয়ে মনিরুল হক সাক্কু মেয়র পদে বিজয়ী হন।
এতে করে প্রথমে দলের সদস্য পদ খোয়া গেলেও বিজয়ের পর ওই পদ ফিরে পান তিনি। আওয়ামী লীগের একটি অংশ ও বিএনপির একটি অংশের ভোটেই নির্বাচিত হন তিনি। এমনটিই এখনো মনে করেন কুমিল্লার রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা। আর তাই সরকার বিরোধী আন্দোলন-কর্মসূচি প্রায় এড়িয়ে চলেন অথবা মাঝে-মধ্যে স্বল্প সময়ের জন্য উপস্থিত হন তিনি।
এদিকে, অবরোধের প্রথম দিন কুমিল্লা আলেখারচর বিশ্বরোড এলাকায় ট্রাক ভাঙচুরের নাশকতা মামলায় হাজী ইয়াছিন-মেয়র সাক্কু গ্রুপের উল্লেখযোগ্য কোনো নেতাকর্মীর নাম না থাকাটাও রহস্যের জন্ম দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএনপি নেতা জানান, জেলা ও মহানগর বিএনপির অনেক নেতাই অনেকটা সমঝোতার রাজনীতি করছেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বিএনপির কিছু নেতার সঙ্গে সরকার দলীয় লোকজনের স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আর এ কারণেই কুমিল্লার রাজনৈতিক চিত্র ও প্রেক্ষাপট অনেকটাই ভিন্ন।
কুমিল্লা (দক্ষিণ) জেলা বিএনপির সভাপতি বেগম রাবেয়া চৌধুরী অসুস্থ। তাই মাঠে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো সক্ষমতা এখন আর নেই তার। জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ফজলুল হক ফজলুকে অবরোধের ৬দিনে ২/৩ দিন মাঠে দেখা গেছে।
অপরদিকে, কুমিল্লা (দক্ষিণ) জেলা যুবদলের সভাপতি আমিরুজ্জামান আমির, কুমিল্লা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাইমুল হক রিংকু (মেয়র সাক্কুর ছোট ভোই), যুবদল নেতা নজরুল ইসলাম স্বপন, সদর (দক্ষিণ) উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুব চৌধুরী ও মহানগর বিএনপি নেতা হুমায়ন কবির, জেলা বিএনপি নেতা রহমান ও শাহ আলমসহ আরো অনেক নেতা তাদের কর্মী নিয়ে কুমিল্লা ক্লাব আয়োজিত ৫ দিনের বনভোজনে গেছেন কক্সবাজারে ৮ জানুয়ারি।
বনভোজনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কুমিল্লা সদর সংসদ সদস্য ও মহানগর আ.লীগ নেতা হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার।
জানা গেছে, অবরোধ চলাকালে প্রতিদিনই জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয় থেকে স্বল্প পরিসরে মিছিল বের করছেন বিএনপি-জামায়াতের কিছু নেতা-কর্মী। মিছিল শেষে তাদের অনেকেই মাঠে থাকছেন না।
কুমিল্লা জেলা (দক্ষিণ) ছাত্রদলের সাংগাঠনিক সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপু বাংলানিউজকে জানান, ইয়াছিন ভাই ও সাক্কু ভাই ঢাকায় আছেন। তারা অসুস্থ। অবরোধের জন্য কুমিল্লা আসতে বিলম্ব হচ্ছে। তবে, তাদের দিক নির্দেশনায় আমরা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছি।
কুমিল্লা (দক্ষিণ) জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ফজলুল হক ফজলু বাংলানিউজকে বলেন, নেতাদের আন্দোলনে মাঠে না থাকাটাও হয়তো রাজনৈতিক একটি কৌশল।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৫