ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

বিএনপির স্থায়ী কমিটির বিবৃতি

অবরোধ অব্যাহত থাকবে

সিনিয়র স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৫
অবরোধ অব্যাহত থাকবে

ঢাকা: পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত বিএনপির অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়েছে দলটির স্থায়ী কমিটির এক বিবৃতিতে।  

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্থায়ী কমিটির পক্ষে দলের ভাইস-চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান এ বিবৃতি পাঠান।



বিবৃতিতে বলা হয়, প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও ভোটারবিহীন নির্বাচনী প্রহসনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে গায়ের জোরে জনপ্রতিনিধিত্বহীন বর্তমান সরকার এক বছরেরও বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রক্ষমতা আঁকড়ে ধরে বসে আছে। এমন একটি সরকারের আদেশ-নির্দেশ ও কর্তৃত্ব মেনে চলতে জনগণের এবং একই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো বাধ্যবাধকতা থাকে না।

তা সত্ত্বেও তারা অন্যায় ও অবৈধভাবে দলীয়করণকৃত রাষ্ট্রীয় সংস্থা ও প্রতিষ্ঠাগুলোকে দেশবাসীকে দমন ও জনগণের ওপর জুলুম-নির্যাতনের হাতিয়ার হিসাবে চরমভাবে অপব্যবহার করছে। এতে জনগণ চরম ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে, অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে সারা দেশ।

অতিষ্ঠ জনগণের পক্ষ থেকে বারবার দাবি করা সত্ত্বেও আমরা কঠোর আন্দোলনের কোনো কর্মসূচি না নিয়ে একটি বছর ধরে অপেক্ষা করেছি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ এবং গণতান্ত্রিক বিশ্ব বারংবার দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য ইনক্লুসিভ নির্বাচনের জন্য আলোচনার মাধ্যমে একটি ফয়সালার আহ্বান জানিয়ে আসছে।

কিন্তু ক্ষমতাসীনরা সে ধরনের উদ্যোগ নেয়ার ব্যাপারে তাদের আগেকার প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘণ করে চাতুরি, প্রতারণা, অপকৌশল ও অপপ্রচারণারনার আশ্রয় নিয়ে চলেছে। পরিহাস, অশ্লীল আক্রমণাত্মক ভাষা ও বলপ্রয়োগের মাধ্যমে তারা সমঝোতার আহ্বানকে নাকচ করে এসেছে।

প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ও ভোটারবর্জিত কলঙ্কিত নির্বাচনী প্রহসনের মাধ্যমে তারা যে গুরুতর ভুল ও অন্যায় করেছে তার খেসারত দিতে বা শোধরাতে তারা রাজি নয়। তাদের কথা ও কাজে এর দায় তারা আমাদের উপর চাপাতে চায় এবং এর খেসারত জনগণকে দিয়ে দেয়াতে চায়।

জনগণ তাদের নির্বাচনী প্রহসন বর্জন করায় ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় বসা সরকার জনগণকে আরো দীর্ঘদিন ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত রাখতে চায়।

আমরা গত এক বছরে কোনো আন্দোলন না করলেও এই জনসম্মতিহীন সরকারের জুলুম-পীড়ন, হামলা-মামলা, গুম-খুন, গ্রেফতার-মিথ্যাচার থেমে থাকেনি। সব ধরনের নিষ্ঠুর অনৈতিক ও অরাজনৈতিক পন্থায় তারা আমাদেরকে নির্মূল করার অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। নিস্তরঙ্গ পরিবেশেও তারা দেশ-জাতির কল্যাণে কোনো ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্য দেখাতে পারেনি। লুণ্ঠন, দুর্নীতি, দলীয়করণ, সন্ত্রাস, উৎপীড়ন, ভিন্নমত দমন ও কুৎসা রটনাতেই তাদের অধিকাংশ সময় কেটেছে। তাদের নিত্যকার কথা ও কাজে ‘বিএনপি, ২০ দল, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ফোবিয়া’ বা আতঙ্কই ফুটে উঠেছে।

দেশবাসী দেখেছেন, সম্প্রতি খালেদা জিয়া একটি মিথ্যা মামলায় স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে হাজিরা দিতে গেলে তাঁর গাড়িবহর ও সমবেত নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ওপর আইন-শৃংখলা বাহিনীর ছত্রছায়ায় সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র হামলা চালায়। সংবাদ-মাধ্যমে তার সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়। তাদের কাউকে ধরা হয়নি। উল্টো মিথ্যা ও সাজানো মামলায় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মোবিন চৌধুরী, বীরবিক্রমসহ সিনিয়র নেতা ও অন্যদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

গাজীপুরে খালেদা জিয়ার সমাবেশস্থলে ছাত্রলীগকে দিয়ে পাল্টা সমাবেশ ডাকিয়ে ১৪৪ ধারা জারি করে তাঁকে সমাবেশ করতে দেয়া হয়নি। এমন চরম উস্কানির মুখেও পরম ধৈর্য্য ও সংযম বজায় রেখে খালেদা জিয়া একটি সমঝোতার উদ্দেশ্যে সংলাপের সূচনার ভিত্তি হিসেবে সাত দফা প্রস্তাবনা পেশ করেন। কিন্তু ক্ষমতার মোহে অন্ধ বলদর্পী শাসকমহল সমঝোতা ও সংলাপের সকল সম্ভাবনা তাৎক্ষণিকভাবে নাকচ করে দেয়। জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে নির্বাচনী প্রহসনের দিন ৫ জানুয়ারি আমরা ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন এবং এ উপলক্ষে ঢাকায় একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাইলে তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

ক্ষমতাসীনরা সারা দেশের সবধরনের যানবাহন বন্ধ করে ঢাকাকে কার্যত বিচ্ছিন্ন ও অবরুদ্ধ করে ফেলে। বিএনপি’র সদর দপ্তর থেকে সবাইকে বের করে পুলিশি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তালা ঝুলানো হয়। দেশবাসী দেখেছে, ৫ জানুয়ারি ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে সরকার সমর্থক সন্ত্রাসীরা পুলিশের ছত্রছায়ায় রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মহড়া দিয়েছে। জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি সভায় যোগ দিতে গেলে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের জন্য এই সন্ত্রাসীরা এক নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।

খালেদা জিয়াকে গুলশানে তাঁর রাজনৈতিক কার্যালয়ে পুলিশ বেষ্টনী এবং বালু, ইট ও ময়লাবাহী ট্রাকবহর দিয়ে অবরুদ্ধ করে ফেলা হয়। গত ১১ দিন ধরে সেখানেই তাঁকে বেআইনিভাবে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। অথচ ক্ষমতাসীনরা এ নিয়ে সীমাহীন মিথ্যাচার করে চলেছে।

শুধু তাই নয়, ৫ জানুয়ারি অপরাহ্নে তিনি দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পল্টনে যেতে চাইলে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা অফিস ফটকে তাঁর গতিরোধ করে এবং কার্যালয়ের অভ্যন্তরে তাঁর গাড়ির উপর কয়েক দফা নিষিদ্ধ ঘোষিত বিষাক্ত পেপার স্প্রে ছোঁড়ে। এতে খালেদা জিয়া নিজে, আরো নারীসহ উপস্থিত নেতা-কর্মী, সাংবাদিক ও অফিসের কর্মচারীরা অনেকেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।

এই দুঃসহ পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের মাধ্যমে দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের জন্য শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন। সেই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে এবং পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।