ঢাকা: ‘অবরোধের সঙ্গে হরতাল ফ্রি দিছে। কিন্তু জনগণ গিলছে না’।
প্রথম জনের মন্তব্যের জেরে শুরু হয় বাকযুদ্ধ। বিএনপিপন্থি একজন কণ্ঠে খানিকটা বিরক্ত ফুটিয়ে বলেন, বিএনপির কি করার আছে! রাস্তায় তো দলের লোকজনকে নামতেই দেয় না সরকার।
প্রথমজনের কণ্ঠে এবার দম্ভ। ‘ওই মিয়া, মুরদ লাগে। ৬ বছরে কোন স্থায়ী কমিটির সদস্য মাইর খাইছে? খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করার পর কোন সিনিয়র নেতা রাস্তায় নামছে? আর বিএনপির সময়ে গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের পুলিশ ঘিরে ধরে কি পিটানিই না পিটাইছে।
কিন্তু রাস্তা থেকে তাদের সরাইতে পারে নাই। যে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব গ্রেফতারের ভয়ে প্রেস ক্লাব থেকে বের হয় না, পালিয়ে থাকে, তাকে দিয়া আর কি সম্ভব?
বিএনপির পক্ষ নেওয়া ছেলেটি বলে ওঠেন, দোস্ত তুমি আওয়ামী লীগের প্রেমে অন্ধ হইয়া গেছো। তাই তুমি কিছুই দেখতে পাওনা। খালেদা জিয়াকে বাড়ি ছাড়া করছে। একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়া কেন্দ্রীয় নেতাদের জেলে পুরে রাখছে। তার দুই ছেলেকে (তারেক, কোকো) মামলা দিয়া দেশান্তরি করছে। কোনটা বাঁকি রাখছে?
তৃতীয় বন্ধু বলে ওঠেন, ‘কেন? তাকে কি দেশে আসতে বাধা দিছে? বড় বড় বুলি আওড়ানো বাদ দিয়া সাহস থাকলে তোমার নেতারে দেশে এসে মামলা ফেস করতে বল। ’
বিএনপির পক্ষ নেয়া ছেলেটি বলেন, বিচার বিভাগকে সরকার নগ্নভাবে দলীয়করণ করছে। এখানে এলে ন্যায় বিচার পাবে না। সরকার তাকে মেরে ফেলতে পারে। তাই দেশে আসছে না, সময় হলেই দেশে আসবে।
পাশে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলেন মধ্য বয়সী একজন। বাকযুদ্ধে শামিল হলেন তিনিও।
বললেন, ‘বিএনপির হত্যার রাজনীতি করার অভ্যস আছে। তারা শেখ হাসিনাকে মারার জন্য বেশ কয়েকবার চেষ্টা চালাইছে। কোটালীপাড়ায় ৬১ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রখছে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করছে। বগুড়ায় গাড়ি বহরে হামলা করছে, বাদ দিছে কোনটা? আওয়ামী লীগের সময়ে তো আর খালেদা জিয়ার উপর হামলা হয় নাই।
এবার প্রথম বন্ধু বললেন, বিচার বিভাগ দলীয়করণ বিএনপিই শুরু করছে। খোঁজ নিয়া দেখ, কতজনকে ডিঙ্গিয়ে দলীয় লোককে প্রধান বিচারপতি করা হইছিল। আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগ পাইছিল বলে বেশ কয়েকজন বিচারপতিকে স্থায়ী করেনাই বিএনপি। নিজ দলীয় বিচারপতিকে তত্বাবধায়ক সরকার প্রধান করতে বিচারপতিদের বয়স বাড়াই দিছে। বিচারপতির চেম্বারে হামলা-ভাঙচুর কোনটাই বাদ দেয়নাই বিএনপি।
তাদের কথা শুনে বিএনপি সমর্থক বন্ধুটি এবার কিছুটা রেগে যান। তিনি বলেন, তোমার আওয়ামী লীগ কি করছে? লাঠিসোটা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে ঢুকে মারপিট করছে, দলের লোকজনকে নিয়োগ দিয়েছে, বিএনপির লোকজনকে মাঠে নামতে দিচ্ছে না, তোমরা শেখাচ্ছো বিএনপিকে। এর ফল একদিন তোমাদেরকে ভোগ করতে হবে। সারাজীবন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে এমনটা ভাবার সুযোগ নেই।
বিএনপি সমর্থক ছাত্রটি বলেন, আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকার কোন অধিকার নাই। কারণ তারা ভোটারবিহীন নির্বাচনে ক্ষমতায় আসছে। আর ভোটের আগে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছিল, সংবিধানিক সংকট ঠেকাতে নির্বাচন হচ্ছে। দ্রুততম সময়ে নির্বাচন দেওয়া হবে। তারা সে প্রতিশ্রুতি ভুলে গেছে। মাত্র ১০ শতাংশ লোকের ভোট নিয়ে ক্ষমতায় থাকা অন্যায়।
এবার প্রথম বন্ধুর জবাব, ভোটের দিনে হরতাল দিয়েছিল বলে লোকজন আসতে পারেনি। এর দায় আওয়ামী লীগের নয়, বিএনপির। হরতাল ও চোরাগোপ্তা হামলা না হলে প্রমাণ হতো লোকজন আসে কি-না। তোমার নেত্রী ভোটের ট্রেন ফেল করেছে। অপেক্ষা করতে বল, হা পিত্তেস করে শুধু দু:খই বাড়বে। দলটার ক্ষতি করবে।
আরেকজন বলে বসেন, দোস্ত তোমার দল একজন মহাসচিব খুঁজে পাচ্ছে না। কতদিন ধরে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চালাচ্ছে। যদি যোগ্য কাউকে না পাওয়া যায় তাহলে তাকেই পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব দিলেই হয়। যে দলে একজন পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব হওয়ারযোগ্য লোক নাই। তার উপর আমি ভরসা পাই না।
তিনি বলেন, মানুষরে এত বোকা মনে করে বলেই বিএনপির আজ এ অবস্থা। দেশের বেশিরভাগ লোক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে। আর তোমার দল তাকে নিয়ে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে!
এবার বিএনপি সমর্থক বন্ধুটি কিছুটা নমনীয় হয়ে বলেন, আসলে বিএনপির এই অবস্থানটা আমারও পছন্দ না। যে কারণে বিএনপির জন্য রাস্তায় নামতে মন চায় না। চাটুকারে ভরে গেছে দল। প্রকৃত ও ত্যাগী নেতাদের দলে ঠাঁই নাই। সব পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায়। যে কারণে দলের আজ এই পরিণতি। ’
চায়ের কাপে ঝড়তোলা বিতর্কে অংশ নেওয়া এই ছোট্ট আড্ডার দু’জন হলেন ইউআইটিএস ছাত্র আব্দুল্লাহ আল-মাসুম (প্রথম বন্ধু) ও হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের আবু রায়হান (বিএনপি সমর্থক)।
তৃতীয় বন্ধুটির নাম ও পরিচয় জানতে চাইলে কিছুটা অস্বস্তিবোধ করে বলেন, থাক ভাই, নাম জেনে কি হবে। দেশের যে অবস্থা ভালো না। সবাই দু্’দলের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে। মানুষের মনে যে শান্তি নাই সেদিকে দল দু’টির কারো খেয়াল নাই। একজন ক্ষমতায় যেতে চায়, তো আরেকজন ক্ষমতা ধরে রাখতে লড়াইয়ে নামে।
বাংলাদেশসময়: ১৩১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৫