ঢাকা: আদালত অবমাননার দায়ে ব্রিটিশ নাগরিক সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে করা জরিমানা ও এজলাসকক্ষে দাঁড়িয়ে থাকার রায় নিয়ে বিবৃতি দেওয়ায় ড. শাহদীন মালিকসহ দেশের ৪৯ বিশিষ্ট ব্যক্তির কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
আগামী ২৭ জানুয়ারির মধ্যে তাদেরকে বিবৃতি ও আচরণের ব্যাখ্যা দিতে হবে।
বুধবার (১৪ জানুয়ারি) এ আদেশ দেন চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনাল তার আদেশে বলেছেন, আগামী ২৭ জানুয়ারি এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশ দেওয়া হবে। ওই দিনের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে বা আইনজীবীদের মাধ্যমে তাদের বিবৃতি ও এ ধরনের আচরণের ব্যাখ্যা দিতে হবে।
৪৯ জনের মধ্যে ১১ জন দেশের বাইরে অবস্থান করায় ট্রাইব্যুনাল তার আদেশ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর দূতাবাসের মাধ্যমে ওই ১১ জনকে অবহিত করা এবং তাদের ব্যাখ্যা সংগ্রহ করে ট্রাইব্যুনালে জমা দিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আদেশ দিয়েছেন।
ট্রাইব্যুনালে নিষ্পত্তি হওয়া মামলার বিষয়ে ব্যক্তিগত ব্লগে আপত্তিকর মন্তব্যের মাধ্যমে আদালত অবমাননার দায়ে ব্রিটিশ নাগরিক সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে গত বছরের ২ ডিসেম্বর ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ৭ দিনের কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল-২। তাকে ওইদিন ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম চলা পর্যন্ত এজলাসকক্ষে বসে থাকতেও হয়। রায়ে ডেভিড বার্গম্যান কিভাবে বাংলাদেশে সাংবাদিকতা করছেন, তা খতিয়ে দেখতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
পরে জরিমানা পরিশোধ করা ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান বর্তমানে ইংরেজি দৈনিক দ্য নিউএজের বিশেষ প্রতিনিধি। তিনি সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেনের জামাতা।
এরপর গত বছরের ২০ ডিসেম্বর দৈনিক প্রথম আলোয় ‘বার্গম্যানের সাজায় ৫০ নাগরিকের উদ্বেগ’ একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়, যেখানে বলা হয়েছিল, এ রায়ের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশের ৫০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি একটি বিবৃতি দিয়েছেন।
এ প্রতিবেদন নজরে এলে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর দৈনিক প্রথম আলোকে রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে ওই বিবৃতির মূল কপি ট্রাইব্যুনালে জমা দিতে আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-২।
বুধবার বিবৃতি দানকারী ৫০ বিশিষ্টজনের নাম-পরিচয় ও তাদের বর্তমান অবস্থানস্থল সম্পর্কে লিখিতভাবে জানান ড. শাহদীন মালিক। এর আগে মঙ্গলবার (১৩ জানুয়ারি) রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ৫০ বিশিষ্টজনের স্বাক্ষরিত বিবৃতির মূল কপি ট্রাইব্যুনালে জমা দেয় প্রথম আলো। এছাড়া বিবৃতিটি প্রথম আলোর মেইলে ই-মেইল করে পাঠানো হয়েছিল লেখক ও সংগঠক হানা শামস আহমেদ এর মেইল থেকে। প্রথম আলো হানা শামস আহমেদের সম্পর্কেও জানায় ট্রাইব্যুনালকে।
৫০ বিশিষ্টজনের মধ্যে একজন খুশি কবির পরে জানিয়েছিলেন, বিবৃতিটিতে তিনি স্বাক্ষর করেননি বা এর সঙ্গে তার সম্পর্ক নেই বলেও জানায় প্রথম আলো। এ কারণে খুশি কবিরকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে বাকি ৪৯ জনের বিষয়ে শুনানি হয়।
অন্যদিকে বার্গম্যানের আদালত অবমাননার রায়ের পরে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর ‘Muzzling Speech in Bangladesh’ শিরোনামে নিউইয়র্ক টাইমসে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়। ২৮ ডিসেম্বর প্রথম আলোকে আদেশ দানের পাশাপাশি এ সম্পাদকীয় নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। ওই সম্পাদকীয়তে বার্গম্যানের শাস্তি প্রত্যাহার করে নেওয়ার দাবি জানানোয় বিস্ময় প্রকাশও করেন ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনাল ওইদিন তার আদেশে বলেন, দৈনিক প্রথম আলোয় ‘বার্গম্যানের সাজায় ৫০ নাগরিকের উদ্বেগ’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ এবং ‘Muzzling Speech in Bangladesh’ শিরোনামে নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত সম্পাদকীয় ভুল ধারণার ওপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে। এ ধরনের সংবাদ এবং সম্পাদকীয় প্রকাশ আদালতের মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করে।
নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত ওই সম্পাদকীয় নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে ট্রাইব্যুনাল তার আদেশে বলেন, নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে অবমাননা করেছে।
আদালত অবমাননার দায়ে ডেভিড বার্গম্যানের শাস্তি প্রত্যাহার করে নেওয়ার দাবি জানিয়ে প্রকাশিত সম্পাদকীয় নিয়ে ট্রাইব্যুনাল আরো বলেন, আমরা বুঝতে পারছি না, কিভাবে একটি বিদেশি দৈনিক একটি স্বাধীন দেশের আদালতের আদেশ প্রত্যাহার করতে বলে!
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৫
.jpg)
