ঢাকা: লাগাতার হরতাল-অবরোধ চালিয়ে যাওয়া বিএনপির সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনায় যাবে না ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
যে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি বিএনপি করে আসছে, সে বিষয়েও কোনো ধরনের ছাড় না দেওয়ার অবস্থানে আওয়ামী লীগ অনড় রয়েছে।
মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের এক সেমিনারে দলটির উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বিএনপি লিখিত দিয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করলে আলোচনা হতে পারে বলে মন্তব্য করেন। পাশাপাশি তিনি বলেন, আলোচনা হতে পারে নির্বাচনী আইন ও নির্বাচন কমিশনকে আরো কীভাবে শক্তিশালী করা যায়, সে বিষয় নিয়ে।
তবে এইচটি ইমামের এই মন্তব্যের পর আলোচনার সম্ভাবনার একটা গুঞ্জন তৈরি হয়। কিন্তু বুধবার আওয়ামী লীগের এক সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ সেই সম্ভাবনা নাকচ করে দেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে বাতিল হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা অনির্বাচিত কোনো সরকার ব্যবস্থায় আর ফিরে যাবে না আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে দলটি যে কঠোর অবস্থান নিয়েছে, সে অবস্থান থেকে সরে আসবে না বলে ওই নেতারা জানান।
আওয়ামী লীগ নেতারা আরো জানান, উচ্চ আদালতের রায়ের পর নবম সংসদে সংবিধান সংশোধনের সময় বিষয়টি চিন্তা-ভাবনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে এখন নতুন করে চিন্তা-ভাবনা বা আলোচনার করার কিছু নেই।
তাছাড়া সংবিধান সংশোধনের আগে সংসদীয় কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটিতে বিএনপি সদস্যদের থাকার জন্য নাম চাওয়া হয়। তখন বিএনপি কমিটিতে থাকেনি। এখন বিএনপির চাপের কাছে নতি স্বীকার করে আওয়ামী লীগ বাতিল হওয়া পদ্ধতিতে ফিরে যাবে না বলে ওই নেতারা আরো জানান।
এদিকে, গত বছর ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহত করতে বিএনপি সর্বশক্তি নিয়োগ করে। বিএনপির বাধা অতিক্রম করেই সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচনও সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা বার বার বলে আসছে দলটি। সংবিধানে নির্বারিত সময় অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ ৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী নির্বাচন আয়োজনের কথা রয়েছে।
অপরদিকে, বিএনপির দাবি, নিদলীয় বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি ফিরিয়ে আনা এবং মধ্যবর্তী নির্বাচন দেওয়া। এই অবস্থায় বিএনপির সঙ্গে আলোচনার কোনো যৌক্তিকতাও নেই বলে আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করেন।
বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ সরাসরি নাকচ করে দেন।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপির সঙ্গে সংলাপের কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। তাদের সঙ্গে সংলাপের কোনো প্রয়োজনীয়তাও নেই। বিএনপির দাবি অনুযায়ী, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনার সম্ভাবনাও তিনি নাকচ করে দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, একটি সেটেল্ড (মীমাংসিত) বিষয় নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন নেই। যখন সংবিধান সংশোধন হয়েছে, তখন বিএনপিকে বার বার ডাকা সত্ত্বেও তারা আলোচনায় আসেনি। কমিটিতে আসেনি। এখন সেই বিষয় নিয়ে কিসের আলোচনা!
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো আলোচনার কথা ভাবছে না। তিনি আরো বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলকে ফুয়েল (জ্বালানি) দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব আওয়ামী লীগ নেয়নি। তারা নিজেরাই নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৫