বগুড়া: বগুড়ার মাটি বিএনপি’র ঘাঁটি, বিএনপি ছাড়া এখানে কিছুই নেই , সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হবে বগুড়া থেকেই, নেতাদের এসব কথা এখন কেবলই রূপকথার গল্প। অথচ ক’দিন আগেও জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি বগুড়া বিএনপি’র ঘাঁটি বলেই পরিচিত ছিলো।
অভিযোগ রয়েছে, সহযোগী সংগঠনকে গুরুত্ব না দেওয়া ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করার পাশাপাশি কতিপয় সুবিধাবাদী ও স্বার্থান্বেষী নেতার কারণেই বিএনপি’র এই হাল হয়েছে। তাছাড়া মামলার ভয়ে প্রতিনিয়ত সরকারি দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে লিয়াজোর রাজনীতি করায় ক্রমেই ঝিমিয়ে পড়ছে আন্দোলন। যদিও এসব বিষয় মানতে নারাজ স্থানীয় মূলদলের (বিএনপি) শীর্ষ নেতারা।
অভিযোগের বিষয়গুলো কিছুটা হলেও স্পষ্ট হয়ে ওঠে চলতি বছরের ৫ জানুয়ারিতে কেন্দ্র ঘোষিত ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে। সেদিন শহরে ২০ দলের কয়েক হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত থাকলেও জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কারণে শহরের জিরো পয়েণ্ট সাতমাথা এলাকায় কোন রকম শো-ডাউন বা কর্মসূচি পালন করতে পারেনি তারা।
সেন্ট্রাল স্কুল মাঠে বিকেলে নাম মাত্র সমাবেশ করে ২০ দলীয় জোট। কিন্তু সমাবেশ চলাকালে সাতমাথা এলাকায় প্রবেশ করে কর্মসূচি পালন করার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে যুবদল, ছাত্রদল এবং উপস্থিত অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের তৃণমূল নেতাকর্মীসহ ২০ দলের শরীকদলের নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে জেলা বিএনপি’র সভাপতিকে ঢিল ছুঁড়ে ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন উপস্থিত জোট নেতাকর্মীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি পর্যায়ের দুই নেতা জানান, বারবার আন্দোলন-সংগ্রামে বা দল গোছাতে ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও হাই কমান্ড বর্তমান কমিটির নেতৃত্ব বহাল রেখেছে। ২০ দলের নেতৃত্বদানকারী আহ্বায়ক হিসেবে জেলা বিএনপি’র সভাপতি বিগত ছয় বছরে মাত্র একটি মামলার আসামি হয়েছেন। পক্ষান্তরে জামায়াত ইসলামীর আমীর অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন কমপক্ষে ৩৫ টি মামলার আসামি।
জেলা বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক ছাত্রনেতা ফজলুল বারী তালুকদার বেলাল বলেন, মূল সমস্যাটা সমন্বয়হীনতা। মূলদলের সঙ্গে সহযোগী সংগঠনের সমন্বয়টা ঠিক হলে সংগঠন শক্তিশালী হবে। সংগঠন শক্তিশালী হলে জনগণকে সম্পৃক্ত করা সহজ হবে।
বগুড়া জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের একজন পদধারী নেতা ও জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি জানান, সরকারের দমন-পীড়নে মানুষ যেমন অতিষ্ঠ, তেমনি নেতাকর্মীরাও আতঙ্কিত। তবে এ কথা সত্য, মামলা-হামলা যতই হোক বগুড়ার মানুষের সমর্থন যে দলের রয়েছে, সেই দলটির (বিএনপি) অনেক বেশি শক্তিশালী হওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু তা না হওয়ার একটি অন্যতম কারণ, আইনজীবীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের পেশাজীবীদের সঙ্গে জেলা বিএনপি’র সমন্বয়হীনতা।
আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী জেলা যুবদলের তৃতীয় সারির একজন নেতা বাংলানিউজকে জানান, আন্দোলনে জেলা বিএনপি’র ভূমিকা মোটেও কাঙ্ক্ষিত নয়। জেলা যুবদল যেখানে প্রতিনিয়ত আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে থেকে রাজনীতি করছে, সেখানে বিএনপি’র ভূমিকা গ্রহণযোগ্য নয়। আন্দোলনকে বেগবান করতে জেলা বিএনপি’র কমিটি ভেঙ্গে দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী লাভলী রহমান বলেন, সবাই সবকিছু জানেন। সকলের উচিত দলের চেয়ারপার্সনের ডাকে সাড়া দিয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়া। এ মুহূর্তে আন্দোলন ছাড়া আর কোন পথ নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপি’র একজন সিনিয়র নেতা বলেছেন, মাঠের রাজনীতিতে না থেকে ঘরে বসে পদ ধরে রাখার সংস্কৃতিটা বগুড়ায় খুব বেশি আগের নয়। শীর্ষ নেতারা মামলার ভয়ে ঘরে বসে থাকলে কখনোই আন্দোলন জমবে না এবং সে আন্দোলনে জনগণও সম্পৃক্ত হবে না।
তিনি বলেন, বয়সে ছোট বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ছোট সারির অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতাকর্মী রয়েছেন, যারা দলকে ভালবেসে আন্দোলনে নেমে বিগত ৬ বছরে অনেক মামলার আসামি হয়েছে। পক্ষান্তরে, জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মাত্র একটি করে মামলার আসামি হয়েছেন।
জেলা বিএনপি’র উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা শোকরানা কিছুটা কৌশলী হয়ে বলেন, আন্দোলন চলছে, আন্দোলনের মধ্য দিয়েই আগামী দিনের নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে।
জেলা ছাত্রদলের প্রথম সারির দুই নেতা মনে করেন, বিএনপি’র জনসমর্থন বিন্দুমাত্র কমেনি, বরং ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। কিন্তু দলের স্থানীয় নীতি নির্ধারকরা সকলকে সঙ্গে নিয়ে এবং সমন্বয় করতে পারলে বগুড়ার মাটি যে বিএনপি’র ঘাঁটি তা আরও একদফা প্রমাণ করা যেতো।
বগুড়া জেলা বিএনপি’র সভাপতি সাইফুল ইসলাম আন্দোলন হচ্ছে দাবি করে নেতৃত্বে দুর্বলতার বিষয়টি অস্বীকার করলেও এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চান দাবি করেন, তাদের আন্দোলন চলছে, চলবে। ক্রমান্বয়ে শক্তিশালী ও গতিশীল হচ্ছে আন্দোলন।
বাংলাদেশ সময়: ০৩১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৬