ঢাকা: সহিংসতা প্রতিরোধে বৃহস্পতিবার (১৫ জানুয়ারি) বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটাকে ‘নজিরবিহীন, অমানবিক ও আতঙ্কজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।
শুক্রবার (১৬ জানুয়ারি) বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক অধিকারসমূহ তথা বাক, সমাবেশ, চলাচলের স্বাধীনতা ও জনগণের ভোটাধিকার পুনরুরুদ্ধারের চলমান আন্দোলনকে দমাতে বর্তমান অবৈধ সরকার জনগণের টাকায় পরিচালিত বিভিন্ন সরকারী বাহিনীকে জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে। বিজিবি’র মহাপরিচালক ‘প্রয়োজনে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করবে বিজিবি’ বলে যে হুমকি দিয়েছেন সেটি নজীরবিহীন, অমানবিক ও আতঙ্কজনক। বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিজেদের লোকদের বসিয়ে এই সমস্ত বাহিনীগুলোকে গণশত্রুতে পরিণত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিজিবির দায়িত্ব সীমান্ত পাহারা দেওয়া। প্রায় প্রতিদিনই আমাদের দেশের লোককে সীমান্তে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। ফেলানীর লাশ যখন কাঁটাতারের ওপর ঝোলে তখন এই ধরনের মহাপরিচালকরা নিশ্চুপ থাকে। কিন্তু জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করতে এরা দ্রুত তৎপরতা দেখায়।
বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, যৌথবাহিনীর নামে গ্রামে-গঞ্জে নিরীহ জনগণের ওপর চালানো হচ্ছে আক্রমণ। ৠাব, পুলিশ ও বিজিবি’র সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনী মানুষ হত্যার নির্দেশনা নিয়ে চলমান আন্দোলনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। ৭২-৭৫ এর রক্ষীবাহিনীর প্রেতাত্মা নিয়ে এই যৌথবাহিনী গ্রামে-গঞ্জে বিভৎস তাণ্ডব চালাচ্ছে।
বিএনপির এ মুখপাত্র আরও অভিযোগ করেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ-কানসাটের কয়েকটি গ্রামে যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হত্যা, বাড়িঘর ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে। আতঙ্কে দিশেহারা মানুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। এই পৈশাচিক তাণ্ডব চলছে শিবগঞ্জ-কানসাটসহ সারা বাংলাদেশে। বাপকে ধরতে গিয়ে তাকে না পেয়ে ছেলেকে কিংবা ছেলেকে ধরতে গিয়ে তাকে না পেয়ে পিতাকে অথবা ভাইকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরিবারের মা-বোনদের সঙ্গে করা হচ্ছে ভয়ংকর অসদাচরণ।
রিজভী বলেন, আমরা দলের পক্ষ থেকে বারবার বলেছিলাম, বর্তমান আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন আর জনগণের বাহিনী নয়, এটি দলীয় ক্যাডারে সাজানো আওয়ামী রক্ষাকারী বাহিনী, যদিও জনগণের টাকায় তারা বেতন পায়’।
তিনি বলেন, শতকরা ৫ ভাগ ভোট নিয়ে জোর করে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরা এই প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মসনদ থেকে অবতরণ করতে এতো অনীহা কেন? কারণ এই ভোটারবিহীন সরকার এতোই অনাচার করেছে যে, জনগণের ক্রোধের ভয়ে দলীয় লোকদের দিয়ে গঠিত আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর প্রহরায় ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে আছে। তাই সংকট নিরসন করতে তারা ভয় পাচ্ছে। শান্তি, স্থিতি ও সুস্থির রাজনীতির পরিবেশ সৃষ্টিতে তারা অনাগ্রহী এবং এই কারণেই একটি স্বচ্ছ ও সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দিতে তারা ভয় পায়।
বিএনপির দফতরের দায়িত্বে থাকা এ যুগ্ম মহাসচিব দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, বিএনপি প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না এবং ক্ষমতায় গেলে কারও প্রতি প্রতিহিংসামূলক আচরণ করবে না। আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর। জনগণের ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়া ও একটি অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্যই আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে লাগাতার এই আন্দোলনে রত আছি। এই অবৈধ সরকার এখন খাদের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে।
তিনি সরকারের প্রতি আবারও আহবান জানিয়ে বলেন, একটি অর্থবহ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে এই মুহূর্তে কার্যকর সংলাপের ব্যবস্থা করুন। উৎপীড়ন, পরিকল্পিত নাশকতা, প্রকাশ্য গুলি করে অবরোধকারীদের হত্যা আর ধরপাকড়ের পথ থেকে সরে আসুন। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি দিন। যতক্ষণ পর্যন্ত না বিজয় অর্জিত হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত চলমান অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৫