ঢাকা: অবরোধের নামে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সহিংসতায় জড়িতদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরিয়ে দিতেও দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
রোববার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর সচিবালয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে তিনি দেশের জনগণের প্রতি এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন, স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করেন, স্বাধীন জাতি হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক, যারা এই নীতি বিশ্বাস করেন, তাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
তিনি বলেন, যারা মানুষ খুন করে, পেট্রোল বোমা মারে, অগ্নিসংযোগ করে তাদের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে এবং এদের ধরিয়ে দিতে হবে।
খালেদা জিয়া ও বিএনপি তাদের হাহাকারের আগুনে দেশ জ্বালিয়ে দিতে চান মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা সংসদেও নেই, বিরোধী দলেও নেই বলে তাদের মধ্যে হাহাকার। তারা তাদের হাহাকারের আগুনে দেশকে জ্বালিয়ে দিতে চায়। তাই তারা মানুষকে পুড়িয়ে মারছে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী থেকে শুরু করে গর্ভবর্তী মহিলাও রেহাই পাচ্ছেন না।
বিএনপিকে চিটিংবাজ দল হিসেবে আখ্যা দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, বিএনপি দেশের ভেতরে মিথ্যাচার করতে করতে দেশের বাহিরেও মিথ্যাচার করছে। এখন বিদেশিরাও পাড় পাচ্ছেন না।
সব সময় শুনি তারা ভারতবিরোধী। আবার দেখি ভারতের বিজেপি নেতার টেলিফোন নিয়ে চালবাজি। এতে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলে শেখ হাসিনা মন্তব্য করেন।
বিএনপিকে জনমুখী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি তারা মনে করেন ভারতের বিজেপি তাদের ক্ষমতায় বসাবে বা কংগ্রেসম্যানরা তাদের ক্ষমতায় বসাবে, আমাদের সরকারকে উৎখাত করে দেবে। তাহলে সেটা আমাদের দুর্ভাগ্য।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের পরমুখী হয়ে থাকতে হবে কেন? জনগণমুখী হতে হবে। জনগণের শক্তিতেই বলিয়ান হতে হবে। জনগণের সমর্থন আদায় করতে হবে। পরের দিকে মুখ করে থাকলে হবে না। আমরা সেটা চাইও না।
বিএনপির অবরোধ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া নিজেই নিজেকে অবরোধবাসিনী করে অবরোধ করছেন। ওনার (খালেদা) বাসা রেখে অফিসে থাকার দরকার কী? উনি নিরাপত্তার কথা বলে চিঠি লিখবেন, আবার নিরাপত্তার জন্য পুলিশ দিলে বলবেন অবরোধ করা হয়েছে। আমরা যাবো কোথায়?
বিএনপি নেত্রী তার নেতাকর্মী সবার সঙ্গে দেখা করছেন, কথা বলছেন, কর্মসূচি দিচ্ছেন। তাহলে তিনি কীভাবে অবরুদ্ধ? বিএনপিকে ইঙ্গেত করে তিনি এ প্রশ্ন রাখেন।
দেশকে পিছিয়ে দেওয়ার জন্যই অবৈধভাবে বিএনপির জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন সবক্ষেত্রে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, তখন কিসের আন্দোলন। আমাদের দুর্ভাগ্য যখনই মানুষ একটু সুখের মুখ দেখে তখনই একটা আঘাত আসে।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল নির্বাচনে আসবে। তারা রাজনৈতিক ভুল করেছে নির্বাচনে না এসে। তারা নির্বাচন বানচাল করতে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড করেছে। নির্বাচনে ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে। ভোট না পড়লে একটা কথা ছিল।
৫ জানুয়ারি নির্বাচনকালীন সহিংসতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা নির্বাচন ঠেকানোর নামে সহিংসতা করেছে। নির্বাচন না হলে কী হতো। অগণতান্ত্রিক সরকার আসতো। জরুরি অবস্থা আসতো অথবা মার্শাল ল’ । আমি জানি না তারা কি এগুলো আনতে চায় কি-না? কিন্তু সারা বিশ্বে এখন আর এটা গ্রহণযোগ্য না।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের একটা শ্রেণি আছে যারা বিদেশিদের সঙ্গে দহরম-মহরম করে ক্ষমতায় যাওয়ার কথা চিন্তা করেন। মন্ত্রী হওয়ার কথা চিন্তা করে। কিন্তু তারা জনগণের কাছে যান না। অসাংবিধানিক সরকার আসলে তাদের লাভ হয়। কিন্তু দেশের জন্য লাভ হয় না।
এ সময় মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের অবদানের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ ও তা মানুষের কাছে তুলে ধরতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন।
এ সময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, ভারপ্রাপ্ত সচিব এমএম হান্নানসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৩ ঘন্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৫/আপডেটেড : ১৫৩৮ ঘণ্টা