ঢাকা, বুধবার, ১ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৬ জুলাই ২০২৫, ২০ মহররম ১৪৪৭

রাজনীতি

কেবল সংলাপেই নড়বেন অনড় খালেদা

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:৩৫, জানুয়ারি ১৮, ২০১৫
কেবল সংলাপেই নড়বেন অনড় খালেদা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া

ঢাকা: আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে এখনো অনড় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তবে সরকারের পক্ষ থেকে সংলাপের উদ্যোগ নিলে অবরোধ কর্মসূচি থেকে সরে আসবেন তিনি।



সেক্ষেত্রে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে আগে। দিতে হবে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব। অথবা তার দেওয়া সাত দফা প্রস্তাবের আলোকে শুরু করতে হবে আলোচনা। অন্যথায় চলমান আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন ২০ দলীয় জোটের নেত্রী।
 
গুলশান কার্যালয়ে গত ১৫ দিন ধরে অবরুদ্ধ খালেদা জিয়ার সঙ্গে দুই দফায় বিএনপির নীতি নির্ধারণী ফোরামের চার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য দেখা করতে গেলে তাদের সঙ্গে আলাপকালে এ মনোভাব ব্যক্ত করেন তিনি।
 
গত ১১ জানুয়ারি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া অবরুদ্ধ খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গুলশান কার্যালয়ে যান।
 
সূত্র জানায়, অবরুদ্ধ হওয়ার এক সপ্তাহ পর দেখা করতে যাওয়া বিএনপির নীতি নির্ধারণী ফোরামের এই তিন গুরুত্বপূর্ণ নেতা আন্দোলন সম্পর্কে দলের চেয়ারপারসনের দিক নির্দেশনা চান।
 
এ সময় খালেদা জিয়া তাদের বলেন, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতায় তিনি দেখেছেন; মাঝ পথে আন্দোলন বিরতি দিলে তার ফলাফল ইতিবাচক হয় না। এ কারণেই বিশ্ব ইজতেমার মধ্যে আন্দোলন স্থগিত করেননি তিনি। সাময়িকভাবে এতে কিছুটা সমালোচনা হলেও দীর্ঘ মেয়াদে এর ভালো ফল পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
 
তারপরও এক সময় না এক সময় আন্দোলনের ইতি টানতে হবে। সেক্ষেত্রে সংলাপের ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগের অপেক্ষায় থাকবেন তিনি। এই উদ্যোগ গ্রহণ না করা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
 
জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির ওই তিন সদস্যকে খালেদা জিয়া বলেন, সরকার যদি নিজে থেকে সংলাপের উদ্যোগ গ্রহণ করে তো ভালো। ইগো প্রবলেমের কারণে সেটা না করলে অন্তত তৃতীয় কোনো পক্ষ বা দলের মধ্যস্থতায় সংলাপের উদ্যোগ নিলেও আলোচনায় বসতে রাজি বিএনপি। এ ছাড়া অন্য কোনো প্রস্তাবে আন্দোলন আপাতত থেকে পিছু হটছেন না খালেদা জিয়া।
 
শুক্রবার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিএনপি হরতাল অবরোধ তুলে নিলে তাদেরকে শর্ত সাপেক্ষে সভা সমাবেশ করতে দেওয়ার বিষয়টি ভেবে দেখবে সরকার।

এর পর শনিবার রাতে (১৭ জানুয়ারি) অবরুদ্ধ খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার গুলশান কার্যালয়ে দেখা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার।
 
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের দেওয়া সভা-সমাবেশ করার প্রস্তাব নিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলেন এমকে আনোয়ার। কিন্তু এতে ইতিবাচক সাড়া দেননি তিনি।
 
খালেদা জিয়ার সাফ কথা, গত বছর ৫ জানুয়ারি হঠাৎ করে আন্দোলন থেকে সরে এসে যে ভুল তিনি করেছেন সে ভুলের পুনরাবৃত্তি করতে চান না তিনি। তাই সরকারের দেওয়া জনসভা করার প্রস্তাব নিয়ে ভাবছেন না।
 
বিএনপি কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হওয়া ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনায় খালেদা জিয়া বলেছেন, ঢাকা ব্যতীত সারা দেশেই আন্দোলন হচ্ছে এবং সে আন্দোলনে দিন দিন সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ছে।
 
প্রায় দেড় কোটি মানুষের ঢাকা সিটিতে জীবন ও জীবিকার তাগিদে রাস্তায় নামা মানুষগুলোকে দেখে সরকার মনে করছে বিএনপির আন্দোলন ব্যর্থ।
 
সুতরাং গত বছরের মতো আন্দোলন হঠাৎ থামিয়ে দিয়ে আর কোনো রকম ভুল করতে চান না খালেদা জিয়া। আন্দোলনের পরিণতি যাই হোক এর শেষ দেখে নেবেন তিনি।
 
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান রোববার বাংলানিউজকে বলেন, ম্যাডামের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে অনেক আগে (১১ জানুয়ারি)। আপটেড জানতে চাইলে সর্বশেষ যারা দেখা করেছেন তাদের সঙ্গে কথা বললে ভালো হয়।
 
তবে আমি এটুকু বলবো,  সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতার কথা ম্যাডাম বরাবরই বলে আসছেন। এখন যে পরিস্থিতি চলছে তাতে আন্দোলন থেকে ফিরে আসার সুযোগ খুব কম। তবে সরকারের পক্ষ থেকে নিষ্ঠার সঙ্গে ইফেক্টিভ (কার্যকর) সংলাপের উদ্যোগ নেওয়া হলে তা গ্রহণ করা যেতে পারে বলে মনে করি।
 
সরকার সংলাপের উদ্যোগ নিলে খালেদা জিয়া কর্মসূচি প্রত্যাহার করে আলোচনায় বসবেন কি না জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য এমকে আনোয়ার রোববার দুপুরে বাংলানিউজকে বলেন, সরকার কোন বিষয়ে সংলাপ করতে চায় সেটি জানার পর এ প্রশ্নের জবাব দেওয়া যাবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।