ঢাকা: চলমান আন্দোলন জোরদার করতে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সরাসরি নিজেই তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বিএনপি চেযারপারসন খালেদা জিয়া। নিচ্ছেন খোঁজখবর, দিচ্ছেন উৎসাহ।
জেলা পর্যায়ের একাধিক নেতা বাংলানিউজকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
নেতারা বলেন, ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) নিজেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আন্দোলনের খবর নিয়েছেন। ফোনে ম্যাডাম আন্দোলন জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন। দিয়েছেন আন্দোলনের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বগুড়া জেলার এক নেতা জানান, ম্যাডাম ফোনে সর্বসাধারণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন জোরদার করার কথা বলেছেন। ম্যাডামের ফোন আমাদের আন্দোলনে উৎসাহ যোগাচ্ছে। আমরা সফল আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই। জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে চাই।
একই ধরনের কথা বলেন রাজশাহী জেলার এক শীর্ষ নেতা। তিনি বলেন, এই সরকার জনগণের গণতন্ত্র কেড়ে নিয়েছে। আর বিএনপি চেয়ারপারসন জনগণের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে আন্দোলন করছে। আমরা ম্যাডামের সঙ্গে আছি। ম্যাডামের ডাকে আমরা আন্দোলন সফল করবোই।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, খালেদা জিয়া দলীয় প্রধান হিসেবে তৃণমুলে যোগাযোগ করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের আহ্বান জানাতেই পারেন। যদি দলীয় চেয়ারপারসন সরাসরি তৃণমুলে যোগাযোগ করেন তবে তা একটি ভালো উদ্যোগ।
এর মাধ্যমে দলীয় প্রধান জনগণের কাছে পৌঁছুতে পারবেন। সাধারণ জনগণের সঙ্গে চেয়ারপারসনের সম্পৃক্ততা বাড়বে। জনগণ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আরও বেশি সক্রিয় হবে। এতে আন্দোলন জোরদার হবে বলে।
এদিকে কয়েকটি জেলার একাধিক নেতা কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কর্মসূচি দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা রাজপথে না বের হয়ে ঘরে বসে থাকছেন। কোনো কোনো নেতা গোপন স্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন আচরণে মনবল ভেঙ্গে যাচ্ছে জেলা, উপজেলা পর্যায়ের কর্মীদের।
কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন আচরণে খোদ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও বিরক্ত বলে তার কাছের একাধিক নেতা জানিয়েছেন। গত ১১ জানুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু মিরপুর থেকে আটক হলে বিএনপির গুলশান কর্যালয়ের এক কর্মকর্তা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
গুলশান কার্যলয়ের সামনে সাংবাদিকদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, কেন্দ্রীয় নেতারা কেউ আন্দোলনে নামছেন না। অথচ ঠিকই আটক হচ্ছেন। এসব নেতা আন্দোলন যাতে না করতে হয় সে জন্য নিজেরাই পুলিশের কাছে ধরা দিচ্ছেন বলেও বিদ্রুপ প্রকাশ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, ম্যাডাম সবকিছুই বোঝেন।
টানা ৮ দিন গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ থাকার পর ওই দিনই (১১ জানুয়ারি) প্রথম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে ওই দিন দেখা করা তিন সদস্যের মধ্যে ছিলেন ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান ও ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার।
কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন আচরণে কিছু কিছু জেলা ও উপজেলার নেতারা আন্দোলনে না গিয়ে সরকার দলীয় কর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলছেন। এ ধরনের কর্মীরা বলছেন, কেন্দ্রীয় নেতারা শুধু আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কিন্তু তাদের কেউ মাঠে থাকেন না। সাধারণ মানুষ কি চায় সে বিষয়টি খুব একটা বিবেচনায় আনেন না এসব নেতা। ফলে আন্দোলন করতে গিয়ে জন আক্রোশের মুখে পড়তে হয়। তাছাড়া বিপক্ষ দলের কর্মীদের হাতে নির্যাতন ও হয়রানি হওয়ার সম্ভাবনাতো আছেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, আন্দোলনের মাঠে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাওয়া যাচ্ছে না। জেলা পর্যায় থেকে আন্দোলন করতে গিয়ে আমরা সরকার দলীয় ক্যাডারদের হাতে নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছি। অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ পরিস্থিতে সরকার দলীয় নেতাদের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক রেখে চলার চেষ্টা করতে হচ্ছে।
ওই নেতা বলেন, কেন্দ্র ঠিক না করে শুধু তৃণমূলে আন্দোলন করে লাভ হবে না। এতে তৃণমূলের কর্মীরা শুধু নির্যাতনের শিকার হবেন। চেয়ারপারসনের উচিত আগে কেন্দ্র ঠিক করা।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৫