ঢাকা: বাংলাদেশে বর্তমানে বিরাজমান রাজনৈতিক সংকটের জন্য প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ই দায়ী। তাই রাজনীতিবিদের মধ্যে আলোচনা করে এ সংকট সমাধান করতে হবে বলে মত দিয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
রোববার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর বিয়াম অডিটোরিয়ামে বিবিসির ১০০তম বাংলাদেশ সংলাপে তিনি এ মত প্রকাশ করেন।
চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রতিনিয়ত প্রাণহানি আর সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির জন্য আমরা কাদের দায়ী করতে পারি? এমন এক প্রশ্নের জবাবে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, এ সহিংসতার জন্য মূলত উভয় রাজনৈতিক দলই দায়ী। এ সংঘাত বাংলাদেশের রুগ্ন রাজনৈতিক দেউলিয়াপনার প্রকাশ। কারণ সহিংসতায় লিপ্তদের কোনো শাস্তি দেওয়া হয় না।
তিনি আরও বলেন, দেশে যে সহিংসতা শুরু হয়েছে তা ক্রমাগত বাড়ছে। এটা বন্ধ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আমি দেখছি না। দেশের মূল সংকট সমাধান না করলে এটা বারবার আসবে। এখন দেশে লুটপাটের রাজনীতি চলে। যা রাজনীতির রুগ্নতা ও অসুস্থতাকে প্রকাশ করছে। এ অবস্থায় নমনীয় না হলে অবস্থা আরও ভয়ংকর হবে। সরকার এখন যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করছে তা বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতেই করা হচ্ছে। বিএনপির আমলেও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিল আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য। তাই মনে হচ্ছে আগামীতে আমাদের জন্য ২/২২ অপেক্ষা করছে।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে রাজনৈতিক সংকট বিরাজ করছে। এটা গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে থেকে সমাধান করতে হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করছে তা তাদের মৌলিক কৌশলগত ভুল। তারা বিএনপিকে টার্গেট করেছে। কিন্তু তাদের টার্গেট করার কথা যুদ্ধাপরাধী জামায়াত ইসলামকে। আবার অন্যদিকে বিএনপিকেও জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশের বিদ্যমান সমস্যার সমাধানের জন্য নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করতে হবে। তাই আসুন আমরা জামায়াত ইসলাম ও জাতীয় পার্টিকে বাদ দিয়ে বাকি রাজনৈতিক দলগুলো এক টেবিলে বসে বিদ্যমান সমস্যার স্থায়ী সমাধান করি।
রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, এ সংকট দেশের সাধারণ মানুষ তৈরি করেনি। এটা রাজনৈতিক সমস্যা তাই সমাধানও রাজনৈতিকভাবে করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে ক্ষমতায় আসে। তাই তারা কিভাবে এ সমস্যার সমাধান করবে সেটা তাদের ওপর নির্ভর করছে।
দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সম্পর্কে তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জনগণকে রক্ষার জন্য, কোনো রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য নয়। দেশে যেহেতু রাজনৈতিক সংকট চলছে তাই রাজনীতিবিদদেরই এটার সমাধান করতে হবে। আমাদের সংবিধান আছে। তাই শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য আমাদের কাছে সংবিধানই প্রাধান্য পাবে।
সংলাপে এক দর্শক বলেন, দেশের বর্তমান সংকটের জন্য উভয় দল দায়ী থাকলেও বিএনপি’র দায় সবচেয়ে বেশি। তাই সরকার যদি কঠোর না হয় তবে দেশে আবারও ১/১১ এর মতো ঘটনা ঘটতে পারে।
অন্য এক দর্শক বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারাই বিভিন্ন সময় বলে এসেছেন বিএনপি আন্দোলন করতে পারে না। আমাদের কাছ থেকে আন্দোলন শেখ। আর তারাই এখন বলছে আন্দোলনের নামে বিএনপি না-কি সন্ত্রাস করছে। তাদের মনে রাখা উচিত আওয়ামী লীগও এ ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল।
বিবিসির বাংলাদেশ সংলাপে অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ীকমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়া ও বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৫