ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

খালেদার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের খাওয়া ফ্রি, সঙ্গে তাস!

সাঈদ শিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৫
খালেদার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের খাওয়া ফ্রি, সঙ্গে তাস! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের কেউ কেউ তাস খেলায় মেতে উঠছেন। সেখানে চলছে তাদের তিন বেলা ফ্রি খাওয়া।

খাবার আসছে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয় থেকেই। সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতা বর্জন করেই বেশ কিছু সংবাদকর্মী এসব কাজ করে যাচ্ছেন। আর তাদের এই কাজে উষ্কানি দিয়ে চলছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রেস উইংয়ের একজন কর্মকর্তা।

বাংলানিউজের চোখে ধরা পড়েছে সাংবাদিতার নীতিবিরোধী এই আচরণ। প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা সাইরুল কবীর খান প্রকাশ্যে তাস হাতে সাংবাদিকদের নিয়ে হৈ-হুল্লোরে মেতেছেন এমন ছবিও ধরা পড়েছে বাংলানিউজের ক্যামেরায়।

গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গত ৩ জানুয়ারি থেকে ‘অবরুদ্ধ’ দিন কাটাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কার্যালয়টির প্রধান ফটক ও দুই ধারে শিফট অনুযায়ী সারিবদ্ধভাবে পাহারা দিচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। আর সেখানকার খবর সংগ্রহে কার্যালয়ের সামনের সড়কে অপেক্ষা করছেন গণমাধ্যমের কর্মীরা।
 
তবে গত ৭ জানুয়ারি পর থেকে গুলশান কার্যলয় ঘিরে তেমন গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ না থাকায় এক প্রকার অলস সময় কাটাতে হচ্ছে গণমাধ্যমকর্মীদের।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গণমাধ্যমের কিছু কর্মী তাস খেলার আসর বসিয়েছেন কার্যলয়টির সামনের সড়কের ফুটপাতে। সকাল থেকে রাত অবধি প্রায় বিরামহীন চলছে এ তাস খেলার আসর। এই আসরের মধ্যমনি হয়ে থাকছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস ইউং কর্মকর্তা সাইরুল কবীর খান।

এদিকে  সংবাদকর্মীদের খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে গুলশান কর্যলয়ের ভিতর থেকে। সকাল, দুপুর ও রাত তিন বেলাতেই এক প্রকার নিয়ম করেই আসছে খাবার। কখনো মোরগ পোলাও। কখনো সাদা ভাত, ভর্তা, ডাল ও মাংস। আবার কখনো সাদা ভাত, ভর্তা, ডাল ও ডিম রাখা হচ্ছে দুপুর ও রাতের খাবার মেন্যুতে। মিলছে ইলিশ-রুইও। আর সকালের নাস্তায় থাকছে রুটি, ডাল-ভাজি ও ডিম।
 
সকালের নাস্তা আসছে সাড়ে নয়টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে। দুপুরের খাবার আসছে আড়াইটা থেকে সাড়ে তিনটার মধ্যে। আর রাতের খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে।
 
অধিকাংশ সময় খাবার সরবরাহের তত্ত্ববধানেও থাকছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস ইউং কর্মকর্তা সাইরুল কবীর খান। কার্যালয়ের ভিতর থেকে খাবার এনে সামনের রাস্তায় এক প্রকার ছুড়ে দেওয়া হচ্ছে অপেক্ষমান সংবাদকর্মীদের উদ্দেশ্যে। আর রাস্তার উপর রাখা পাত্রের ভিতর প্যাকেট করা সেই খাবার লুফে নিচ্ছেন একদল। মাঝে মধ্যে খাবার নিয়ে তাদের মধ্যে কাড়াকাড়িও বেঁধে যাচ্ছে।

বিষয়গুলো নিয়ে বাংলানিউজের কথা হয় একাত্তর টেলিভিশনের পরিচালক (বার্তা) সৈয়দ ইশতিয়াক রেজার সঙ্গে। তিনি বলেন, কথাগুলো শুনেই মন খারাপ হযে গেলো। বিএনপি অফিস থেকে সাংবাদিকদের নিয়মিত খাবার দেওয়া হলে এবং তা সাংবাদিকরা খেলে বিষয়টি সাংবাদিকতা পেশার জন্য অমর্যাদার।

কনফ্লিক্ট অব ইন্টরেস্ট থেকে সাংবাদিকদের এ ধরনের অফার গ্রহণ না করাই প্রত্যাশিত, বলেন ইশতিয়াক রেজা। তিনি বলেন, এটা সাংবাদিকতার যে শিক্ষা তার পরিপন্থি।

আর সাংবাদিকদের তাস খেলা প্রসঙ্গে সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, এটি অত্যন্ত দৃষ্টিকটু একটি বিষয়। সাংবাদিকদের সেখানে পাঠানো হয়েছে পেশাদারি কাজের জন্য, তাস খেলার জন্য নয়।

সময় টেলিভিশনের বার্তা প্রধান তুষার আবদুল্লাহ বলেন, শুনেছি ওখানে ইলিশ-রুই দিয়ে ভাত খাওয়ানো হচ্ছে সাংবাদিকদের। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, ওখানে আমরা যাচ্ছি পেশার কাজে, সেখানে কারো অতিথি হতে পারি না।

একটি দুঃখজনক দিক হচ্ছে, এমন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই সাংবাদিকরা ধীরে ধীরে দলমনষ্ক হয়ে পড়ে, বলেন তুষার আবদুল্লাহ।

সাইরুল কবীর খানের এই আড্ডা জমানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি নেতারা বা চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের কেউ এমন কাজ করবেই। কিন্তু সাংবাদিকদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে কতটুকু করা যাবে, কতটুকু যাবে না।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক বর্তমানে বেসরকারি ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. গোলাম রহমান বাংলানিউজকে বলেন, নীতিগত দিক থেকে সাংবাদিকরা এমন কাজ করতেই পারেন না। ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়াকে পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত করার যে কোনও আচরণই অগ্রহণযোগ্য, নীতিবিরুদ্ধ।  
 
বাংলাদেশ সময়: ২২১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।