ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

জামায়াতকে দ্রুত নিষিদ্ধের দাবি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৫
জামায়াতকে দ্রুত নিষিদ্ধের দাবি ছবি: সোহাগ/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি দ্রুত নিষিদ্ধ করাসহ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির অর্থ-সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও তাদের অর্থনৈতিক উৎস বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে ৭১ ফাউন্ডেশনের গোলটেবিল আলোচনা থেকে।

আলোচনায় বক্তারা বলেছেন, শুধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেই সব সমস্যার সমাধান হবে না।

যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত-শিবিরসহ ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ ও তাদের অর্থের উৎস বন্ধ করতে না পারলে তারা বার বার বাংলাদেশকে গ্রাস করার চেষ্টা চালাবে।

৭১ ফাউন্ডেশন শুক্রবার (১১ ডিসেম্বর) ‘বিজয়ের ৪৪ বছরে বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে করণীয়’ শীর্ষক এ গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন সাবেক ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল বলেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তি অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়ে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। ২০১৩ ও ২০১৫ সালের তিনমাসের ঘটনাগুলোতে আমরা তা দেখেছি। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী পক্ষকে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্ন করতে হবে। জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। তারা যাতে নতুন করে নতুন নামে দল করে একই কাজ করতে না পারে সেই সুযোগও বন্ধ করতে হবে। যাতে কোনো রাজনৈতিক দলে সংগঠিত হতে পারে, অন্য কোনো রাজনৈতিক দলে ভিড়ে যেতে না পারে সে ব্যবস্থাও করতে হবে। জার্মানিতে এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিলো।

তিনি বলেন, একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে। মাদ্রাস শিক্ষার কারিকুলামের মধ্যে মূলধারার শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঢেলে সাজাতে হবে।

সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবিব বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে, খুনিদের বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে, রায় কার্যকর হচ্ছে। কিন্তু এতেই আত্মতুষ্টিতে ভুগলে আমরা নতুন করে ভুল করবো। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত আগ্রাসন শুরু হয়েছে। শুধু দেশের মধ্যে একাধিক গোষ্ঠী নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও আগ্রাসনের ষড়যন্ত্র চলছে। এর বিরুদ্ধে একটা রাজনৈতিক যুদ্ধ চলছে। একটা সাংস্কৃতিক যুদ্ধও চালাতে হবে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রাজনৈতিক জাগরণের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বিপ্লব দরকার। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীদের এদেশে কোনো রাজনীতি করার অধিকার থাকতে পারে না।

সরকারে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি থাকবে, বিরোধী দলেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি থাকবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

নাট্যকার আতাউর রহমান বলেন, একাত্তরে পাকিস্তান যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, গণহত্যা করেছে, তার জন্য পাকিস্তানকে ক্ষমা চাইতে হবে। কোরিয়া-জাপান যুদ্ধের এতোদিন পর জাপান ক্ষমা চেয়েছে কোরিয়ার কাছে। মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনাগুলো ছিলো তার মধ্যে সমাজতন্ত্রের কথা ছিলো। মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে সমাজতন্ত্রের কথা বলা হয়েছিলো সংবিধানে। অথচ এর ধারে কাছেও আমরা যেতে পারিনি।

খেলাঘরের সভাপতিমণ্ডলীর চেয়ারম্যান অধ্যাপিকা পান্না কায়সার বলেন, জামায়াতকে অতিদ্রুত নিষিদ্ধ করতে হবে। জামায়াত কবে নিষিদ্ধ হবে একথা দেশবাসীকে জানাতে হবে। পাকিস্তানকে প্রকাশ্যে বাংলাদেশের মানুষের কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করতে হবে।

মুক্তিযোদ্ধা শিরিন বানু মিতিল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সামাজিক বৈষম্য দূর করতে হবে। জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। এদেশে জামায়াতের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি ফ্লাইট সার্জেন্ট আব্দুল জলিল বলেন, শুধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও ফাঁসি কার্যকর করলেই চলবে না। যুদ্ধাপরাধীদের অর্থ-সম্পদ, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠানে তারা রয়েছে সেখান থেকে সরিয়ে দিতে হবে। সরকারি চাকরি থেকে বাদ দিতে হবে।

গোলটেবিল আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আশরাফউদ্দিন চৌধুরী, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আসলাম খান, জাতীয় যুব জোটের সভাপতি রোকনুজ্জামান রোকন, পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৫
এসকে/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।