ঢাকা: অবশেষে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব হচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শিগগিরই মহাসচিবের পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব পাচ্ছেন তিনি।
জানা গেছে, মহাসচিব পদটি আর ঝুলিয়ে না রেখে বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে চান খালেদা জিয়া। তিনি সম্প্রতি এ ইচ্ছাও ব্যক্ত করেছেন ঘনিষ্ঠ মহলে।
গঠনতন্ত্র অনুসারে চেয়ারপার্সনের ক্ষমতা থাকলেও লন্ডন থেকে তারেকের চূড়ান্ত ‘সিগন্যাল’ এলেই মির্জা ফখরুলকে পূর্ণ মহাসচিব হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হবে। এবং তা হবে কাউন্সিলের মাধ্যমে অানুষ্ঠানিকভাবে।
এছাড়া আগামী বছরের প্রথম দিকে অনুষ্ঠিতব্য কাউন্সিলের মাধ্যেমে দলের স্থায়ী কমিটিতেও বড় ধরনের পরিবর্তন আনবেন খালেদা জিয়া। স্থায়ী কমিটিতে বয়স্কদের বদলে অপেক্ষাকৃত কমবয়সীদের আগমন ঘটবে এমনটাই দাবি করলেন দলটির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য। একই সঙ্গে দলে একটি শক্তিশালী উপদেষ্টা কমিটিও করবেন দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া।
‘ওয়ান-ইলেভেন’ পরবর্তী সময়ে দলের দুঃসময়ের কাণ্ডারির ভূমিকা পালনকারী সাবেক মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর আগে তিনি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে গত ৫ বছরের দীর্ঘ পথ চলায় তিনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন- এ কথা বললেন বিএনপির এক যুব নেতা।
এই নেতার মতে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে গত ৫ বছরে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একে একে ৬৩টি অভিযোগ করা হয়। ১৯টিতে সরাসরি সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে। বিএনপি থেকে সরে আসার জন্য তাকে দেওয়া হয় অনেক প্রলোভনও। কিন্তু তারপরও দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার আনুগত্য ত্যাগ করেননি তিনি।
২০১১ সালের ১৬ মার্চ সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দলের মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। এরপর ২০ মার্চ চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সৌদি আরবে যাওয়ার আগে বিমানবন্দরে মির্জা ফখরুলকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়ে যান। এ নিয়ে দলে তখন ব্যাপক ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়। জল্পনা কল্পনার মধ্যেই ২৭ মার্চ দেশে ফেরেন খালেদা। দেশে ফিরে ৬ এপ্রিল ডাকেন দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক। বৈঠক শেষে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুলের পদ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, দলের গঠনতন্ত্রের পদ বিন্যাস অনুযায়ী সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। এরপরই অবসান হয় সব ধোঁয়াশার।
এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব। এরপর ছিলেন কর্নেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান (১৯৮৪-১৯৮৬), কে এম ওবায়দুর রহমান (১৯৮৬-১৯৯১), ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদার (১৯৯১-১৯৯৬) এবং আবদুল মান্নান ভূঁইয়া (১৯৯৬-২০০৭)। ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তাকে বহিষ্কার করে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে মহাসচিবের দায়িত্ব দেন খালেদা জিয়া।
প্রতিষ্ঠার পর বর্তমানে সবচেয়ে কঠিন সময় অতিক্রম করছে দলটি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নেয়ার কারণে তারা সংসদে নেই। আবার সরকার বিরোধী আন্দোলনের সময় সংঘটিত নাশকতার মামলা ঝুলছে দলটির তৃণমূল থেকে শুরু করে সিনিয়র নেতাদের নামেও। এ পরিস্থিতিতে মাঠেও নেই দলটি। সব মিলিয়ে রাজনীতির ময়দানে বিএনপি অনেকটাই কোণঠাসা। এ পরিস্থিতিতে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে তৃণমূলের দলীয় নেতাকর্মীদের মনোবল ধরে রেখেছেন মির্জা ফখরুল। এছাড়া নিজের স্বভাবসুলভ ভদ্র আচরণ এবং দুর্নীতির ক্ষেত্রে তার নিষ্কলুষতার কারণে নেতাকর্মীদের কাছে বিএনপির অনেক হেভিয়েট নেতার থেকে তার গ্রহণযোগ্যতা বেশি। পাশাপাশি কোনো মহাসচিবকেই পদে থাকা অবস্থায় মির্জা ফখরুলের মতো এতদিন জেল খাটতে হয়নি। মাত্র অল্প কিছুদিন আগেই কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান তিনি। সব কিছু বিবেচনায় ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের ভার থেকে মুক্ত করে মির্জা ফখরুলকে পূর্ণ মহাসচিব করার ব্যাপারে এখনই সঠিক সময় বলে মনে করছেন খালেদা জিয়া। এছাড়া সামনে দলের কাউন্সিলকে সামনে রেখে এ পদক্ষেপ নেতাকর্মীদের বাড়তি অনুপ্রেরণা যোগাবে বলেও মনে করছেন তিনি। সব মিলিয়ে মির্জা ফখরুলের পূর্ণ মহাসচিব হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৫
আরআই