ময়মনসিংহ: আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মঞ্চে উঠবেন, কমিটি ঘোষণা করবেন এমনটিই ছিল যেন প্রত্যাশিত।
কিন্তু তার চেয়েও ঢের নাটকীয় ঘোষণা, ‘ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা সম্ভব হচ্ছে না।
সম্মেলনে প্রবীণ-নবীনের মিশেলে নেতৃত্ব উঠে আসবে, অভিষেক ঘটবে তরুণ নেতৃত্বের, এমন ভাবনা যখন ঘুরপাক খাচ্ছে ময়মনসিংহ নগরীর সার্কিট হাউজ মাঠভর্তি নেতাকর্মীদের মনে।
ঠিক তখনই শনিবার (৩০ এপ্রিল) বিকেলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের হঠাৎ এমন ঘোষণার পর এখনো বিস্ময়ের ঘোরে রয়েছেন দলটির এক পক্ষের নেতাকর্মীরা।
সম্মেলন চলাকালে আকস্মিক এক ঘণ্টা মূলতবী, ডজনখানেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও দলটির প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তি সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের এক ঘণ্টার দীর্ঘ আলোচনাতেই সব হিসাব-নিকাশ বদলে যায়।
ফলশ্রুতিতে বুক ভরা হতাশাকে সঙ্গী করে সম্মেলনের মাঠ থেকেই ফুটো বেলুনের মতো চুপসে বের হতে হয়েছে ওই পক্ষের নেতাকর্মীদের, এমন মত কোনো কোনো সূত্রের।
প্রায় এক যুগ পর ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের পরেও কমিটি ঘোষণা না হওয়ার খবরটি রোববার (০১ মে) সারাদিন ছিল ‘টক অব দ্যা টাউন। ’
তীব্র সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কেন কমিটি হলো না, হঠাৎ কেন বেঁকে বসে এমন ঘোষণা দিলেন সৈয়দ আশরাফ এসব প্রশ্ন বড় দাগে উঠে এসেছে রাজনীতি সচেতন স্থানীয় বাসিন্দাদের মনেও।
সূত্র জানায়, একটি গোয়েন্দা সূত্রের আগাম আভাস ছিল, নতুন কমিটিতে কোনো পদ বঞ্চিত হলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। আর সম্মেলনের আগের দিন থেকেই কানে কানে গুঞ্জন ছড়ায় দলটির হাল রাজনীতিতে প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় একটি পক্ষকে মাইনাস করেই কমিটি হতে পারে।
সম্ভাব্য নেতৃত্বে আনকোড়া ও আনপ্রেডিক্টাবল নেতাদের নামও ছড়িয়ে পড়ে মুখে মুখে।
কিন্তু সম্মেলনস্থল, মঞ্চের সামনে ও আশেপাশে ওই পক্ষের নেতাকর্মীদেরই আধিক্য ছিল বেশি। ফলে জনপ্রত্যাশার বিপরীতে শেষতক কমিটি হয়নি। ফলে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্মেলনস্থল ত্যাগ করেছে দলটির সব পক্ষের নেতাকর্মীরাই।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বাবা শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের স্মৃতিধন্য নগরী ময়মনসিংহ। এ ময়মনসিংহ থেকেই ছাত্র রাজনীতির হাতেখড়ি হয়েছিল সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের।
দলটির কয়েকটি সূত্র বলছে, নিজেকে বিতর্কমুক্তও রাখতে চেয়েছেন পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির তকমা আঁটা এ রাজনীতিক। আবার কেউ বলছেন, সব পক্ষের সমঝোতা না হওয়ার কারণেই মূলত আটকে যায় জেলা ও মহানগর আ’লীগের কমিটি ঘোষণা।
এদিকে, সম্মেলনে নতুন কমিটি ঘোষণা না হলেও জেলা ও শহর আ’লীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ফলে জেলা ও সম্ভাব্য মহানগর আ’লীগ এখন অভিভাবকহীন। দ্রুত কেন্দ্র থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে বলে মনে করেন দলটির নেতা-কর্মীরা।
জেলা ও মহানগর আ’লীগের নেতৃত্বের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও পদ-প্রত্যাশী সব নেতার আমলনামা ও বিন্দু, বিসর্গ পর্যন্ত তথ্য রয়েছে দলীয় সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছেই, এমন মত সূত্রের।
এসব বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন সরকারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি।
তবে, বিলুপ্ত শহর কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান মিল্কী টজু বাংলানিউজকে বলেন, সবকিছু কেন্দ্রীয় নেতাদের সিদ্ধান্তের বিষয়। তারা যেটা ভালো মনে করেছেন সেটাই করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০১২৩ ঘণ্টা, মে ০২, ২০১৬
এমএএএম/পিসি