ঢাকা: নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে আসছে বিএনপি। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর আলোকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে দলটি।
তবে কৌশলগত কারণে এখনই এ বিষয়টি ঘোষণা দেবে না বিএনপি। বরং আগামী দুই বছর ভাষণ-বক্তৃতায় দলটির নেতারা নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের মৌখিক দাবি তুলবেন। আর ভেতরে ভেতরে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করতে সরকারের ওপর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করবেন।
উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ঝটিকা সফরে ঢাকায় আসা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকে এ বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়।
ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে সবার অংশগ্রহণে বাংলাদেশে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে কূটনৈতিক সম্পর্কের আওতার মধ্যে থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান খালেদা জিয়া।
তার এ আহ্বানে জন কেরি এ বিষয়টিই পরিষ্কার করেন যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জনগণকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুটিতে আর সম্পৃক্ত করা যাবে না। এটি এখন ডেথ ইস্যু। সুতরাং, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর আলোকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই বিএনপিকে নির্বাচনে যেতে হবে।
তাছাড়া সংসদে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব না থাকায় সংবিধানে ফের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংযোজন করা না করা নিতান্তই ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে বাইরে থেকে চাপ প্রয়োগ করে কোনো ফল হবে না। সুতরাং, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর আলোকে আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য বিএনপিকে প্রস্তুত থাকতে হবে। নির্বাচন যখনই হোক বিএনপিকে অংশ নিতে হবে।
বৈশ্বিক রাজনীতিতে বিএনপির ‘শুভাকাঙ্ক্ষী’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির এ পরামর্শ ইতিবাচক হিসেবে নেন খালেদা জিয়া। ইতিবাচক রাজনীতিতে ফেরা বিএনপির অন্য নেতারাও এতে সায় দেন।
কেবল দু’টি বিষয় নিশ্চিত করার দাবি জানান বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সেগুলো পূরণ হলেই বর্তমান সংবিধানের আলোকে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়টি ভেবে দেখবেন তিনি। এ দু’টি শর্ত হলো- নির্বাচনের আগেই নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন এবং প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে।
খালেদা জিয়ার এ দুই শর্ত যৌক্তিক ও যথাযথ উল্লেখ করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এগুলো নিশ্চিত করার ব্যাপারে বিএনপি নেত্রীকে আশ্বস্ত করেন।
কূটনৈতিক সূত্রমতে, ঢাকা ছাড়ার আগে খালেদা জিয়ার দেওয়া শর্ত দু’টির কথা সরকারের উচ্চ পর্যায়কে অবহিত করে যান জন কেরি। বিষয়টি মাথায় রেখে আগামী নির্বাচনের আগেই একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন ও নির্বাচনের সময় প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করার ব্যাপারে যত্নবান হওয়ার তাগিদ দেন।
সরকারের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন বিএনপির এমন একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, খালেদা জিয়ার দেওয়া এ দু’টি শর্তের ব্যাপারে সরকারের অবস্থান আপাতত ইতিবাচক। নির্বাচনের আগে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন ও প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করতে পারলে শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচনে যাবে বিএনপি।
তবে দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বাংলানিউজকে বলেন, ‘বর্তমান সংবিধানের আলোকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কারণ, দলের বড় একটা অংশ শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে না যেতে খালেদা জিয়াকে চাপ দিচ্ছেন’।
‘তাছাড়া নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন ও প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত হলে এবং জনগণ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট নিজে দিতে পারলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না- এটি আওয়ামী লীগের জানা আছে। সুতরাং, তাদের পক্ষে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন ও প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না’।
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৬
এজেড/এএসআর